নুসরাত হত্যাকারীদের কেউই রেহাই পাবে না: শেখ হাসিনা
(last modified Mon, 15 Apr 2019 10:17:07 GMT )
এপ্রিল ১৫, ২০১৯ ১৬:১৭ Asia/Dhaka
  • নুসরাতের মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
    নুসরাতের মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকারীরা রেহাই পাবে না।

আজ (সোমবার) সকালে রাফির বাবা একেএম মুসা ও মা শিরিনা আক্তারসহ দুই ভাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাকারীদের কেউই আইনের হাত থেকে রেহাই পাবে না।’

পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিবাদ করে নুসরাত এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী নুসরাতের এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।

প্রেস সচিব আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী তাদের সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এসময় নুসরাতের বাবা-মা এই দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

 কাউন্সিলর মাকসুদ আলম রিমান্ডে

মাকসুদ ৫ দিনের রিমান্ডে

এদিকে, নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি কাউন্সিলর মাকসুদ আলমকে (৪৫) পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। আজ (সোমবার) দুপুরে ফেনীর সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালত এ আদেশ দেন। 

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপ-পরিদর্শক ও মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, "কাউন্সিলর মাকসুদ আলমকে সমবার ভোরে ফেনী জেলা কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। এর আগে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আমরা ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করি। শুনানি শেষে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।" 

(বামে) নুসরাত হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামি নূর উদ্দিন এবং (ডানে) শাহাদাত হোসেন শামীম

এর আগে গতকাল (রোববার) মামলার অন্যতম দুই আসামি নুর উদ্দিন এবং শাহদাত হোসেন শামীম আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জড়িতদের নাম উল্লেখ করে। ভুক্তভোগীর পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু তথ্য জানিয়েছেন।

তদন্ত সূত্র জানায়, যৌন হয়রানির মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা গ্রেফতার হওয়ার পর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের নির্দেশে নুর উদ্দিন ও শাহদাত হোসেন শামীম অধ্যক্ষ মুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু করে। এজন্য সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম তাদের ১০ হাজার টাকাও দিয়েছিল। এছাড়া, মাদ্রাসার আরেক শিক্ষকও আন্দোলন ও নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার জন্য পাঁচ হাজার টাকা দেন।

অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা ও মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি

উল্লেখ্য, কাউন্সিলর মাকসুদ সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি সোনাগাজী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দায়িত্বে আছেন। এছাড়াও তিনিসোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সদস্য। নুসরাত হত্যার সাথে সম্পৃক্ততার কারণে গত ১২ এপ্রিল পৌর আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়। 

গত শুক্রবার সকালে পিবিআই একটি দল রাজধানীর ফকিরাপুলের একটি আবাসিক হোটেল থেকে মাকসুদকে গ্রেফতার করে।

প্রসঙ্গতঃ গত ২৭ মার্চ মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা আলিম পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগাম দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেছেন এমন অভিযোগ এনে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রকাশ্যে অধ্যক্ষের পক্ষ নেন কাউন্সিলর মাকসুদ। তিনি নুসরাত ও তার পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার চাপ ও হুমকি দিতে থাকেন। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পক্ষে মাকসুদ একটি মানববন্ধনের আয়োজনও করেন বলে অভিযোগ রয়েছে নুসরাতের পরিবারের। এমনকি মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিচার চেয়ে ওই মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদের সাবেক সদস্য ও বর্তমান কাউন্সিলর শেখ মামুনের নেতৃত্বে একটি মানববন্ধন করা হলে মাকসুদ তাকেও মারধর করেন।#

পার্সটুডে/ আশরাফুর রহমান/১৫

 

ট্যাগ