বাংলাদেশে ধর্ষণ এবং হত্যা: বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা
(last modified Wed, 17 Apr 2019 13:35:02 GMT )
এপ্রিল ১৭, ২০১৯ ১৯:৩৫ Asia/Dhaka

দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে হাজারের অধিক নারী ধর্ষিত হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৬৩ জনকে। এদের বিচার হবে কবে? আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে ভুগছি। এজন্য এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার বিচার দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

এদিকে, আজ বুধবার সকালে রাজধানীতে  আয়োজিত  শিশু-কিশোরদের এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার উত্তর দিতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এর দায় রাজনীতিবিদদেরই নিতে হবে।’

জিয়া শিশু একাডেমি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে  মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা কেন এই হিংসা, প্রতিহিংসা, ক্ষোভ, হত্যাযজ্ঞের মধ্যে নেমে পড়েছি? কেন আমাদের রাফিকে এভাবে নির্যাতিত হয়ে মরতে হয়? কেন? আমি জানি না। এই উত্তর আমাদের রাজনীতিবিদদেরই দেওয়ার কথা। কিন্তু আমরা ব্যর্থ হয়েছি। সুন্দর বাংলাদেশ দিতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’

বিএনপির মহাসচিব শিশুদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা ব্যর্থ হয়েছি তোমাদের নিরাপত্তা দিতে। তারপরও আমি স্বপ্ন দেখি। আমি স্বপ্ন দেখি, এই বাংলাদেশ একটা সুন্দর ও সমৃদ্ধির দেশ হবে। আমি স্বপ্ন দেখি, এই শিশুরা নির্ভয়ে বিচরণ করবে। কোথাও তাদের ওপরে আঘাত আসবে না। আমাদের মেয়েদের পুড়িয়ে মারবে না। এই স্বপ্নগুলো আমরা দেখি।’

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, সমাজে নিরাপত্তাহীনতা ভয়ংকরভাবে বৃদ্ধি পেয়েছ।  স্বাধীনতার যে স্বপ্ন ছিল সে বাংলাদেশ আমরা ফিরে পেতে চাই।   একটি গনতান্ত্রিক সমাজ প্রতাষ্ঠা চাই।  

অপরদিকে, সাংবাদিক সাগর-রুনি দম্পতি হত্যা, নারায়ণগঞ্জের ত্বকী, কুমিল্লার সোহাগী জাহান তনু এবং সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার অগ্রগতি আদালতকে জানানোর নির্দেশনা চেয়ে  আজ বুধবার (১৭ এপ্রিল) হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুছ আলী আকন্দ।

এ রিটে ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যা মামলায় বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধানের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া রিটে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে নুসরাত হত্যা মামলার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, তার পরিবারকে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং মামলাটি র‌্যাবের মাধ্যমে তদন্ত করতে নির্দেশনা চাওয়া হয়।

রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, আইন মন্ত্রণালয় সচিব, পুলিশের আইজি ও সোনাগাজীর ওসিসহ মোট পাঁচজনকে বিবাদী করা হয়েছে। এর আগে, হাইকোর্ট দেশে অব্যাহত নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, নৈতিক অবক্ষয়ের কারণেই দেশে ধর্ষণ বেড়েছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও রাজনীতিবিদদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার এক গৃহবধূকে ‘ধর্ষণের’ পর বিষপানে আত্মহত্যার ঘটনায় দায়ের করা রিটের শুনানীতে গতকাল  মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত এ মন্তব্য করেন।  

বিচারপতি এফ আরএ ম  নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিটের শুনানি শেষে একটি রুলে ধর্ষণ ও আত্মহত্যার ওই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না এবং ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ মীমাংসার নামে তথাকথিত সালিশি বৈঠক কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন।#

পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/বাবুল আখতার/১৭

 

 

 

ট্যাগ