সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থপাচার বৃদ্ধি: বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া
(last modified Sun, 30 Jun 2019 11:57:16 GMT )
জুন ৩০, ২০১৯ ১৭:৫৭ Asia/Dhaka

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ গত এক বছরে ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা বা ৬১৭.৭২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬৯ কোটি টাকা।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। কোন দেশের নাগরিকদের কত অর্থ জমা আছে তা প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হলেও গ্রাহকের নাম-পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।   

সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা করার ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব গোপন রেখেছে, এমন বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ হিসাবের মধ্য দেখানো হয়নি। গচ্ছিত সোনা কিংবা মূল্যবান সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমানও হিসাবের বাইরে রাখা হয়েছে।

সুইস ব্যাংকের পরিসংখ্যান আনুযায়ী, ২০১৬ সাল পর্যন্ত টানা ছয় বছর সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়েছে। মাঝখানে ২০১৭ সালে কিছুটা কমলেও এবার তা আবারও বেড়েছে।
সুইস ব্যাংকে আমানত বৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে, তারা গ্রাহকের গোপনীয়তা বজায় রাখে। সুইস ব্যাংক তাদের গ্রাহকের কোন তথ্য অন্য কাউকে দিতে আইনগতভাবেই বাধ্য নয়।  

'অর্থশালীরা দেশের ব্যাংকের উপর আস্থা রাখতে পারছেন না'

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান রেডিও তেহরানকে বলেন, এ বিদেশের ব্যাংকে এক বিপুল পরিমান অর্থ জমা রাখার মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে, এসব অর্থশালীরা দেশের ব্যাংকের উপর আস্থা রাখতে পারছেন না। এটা দেশের অর্থনীতি এ জন্য একটা নেতিবাচক দিক। এসব অর্থ সবটাই অবৈধ উৎস থেকে আহরিত না হলেও এর বিরাট অংশ  অবৈধ পন্থায় পাচার হয়েছে। 

তিনি বলেন, কারা এসব অর্থ কী কৌশলে পাচার করেছে তা সরকার বের করতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনা সম্ভব।  

তবে, গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে অর্থবিল ২০১৯ এর জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবের আলোচনায় বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপির ‘মনোনয়ন বাণিজ্যের’ অর্থের সন্ধান করলেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা বৃদ্ধির হিসাব বেরিয়ে আসবে।

অর্থবিল নিয়ে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবের আলোচনায় বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার বিষয়টি উল্লেখ করায় প্রধানমন্ত্রী তার স্বাভাবসূলভ পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, “উনাকে আমি বলব, সুইস ব্যাংকে টাকাওয়ালা হিসেবে কাদের নাম লিস্টে এসেছে উনি যেন একটু গিয়ে দেখেন। যাদের প্রশংসায় তারা পঞ্চমুখ থাকেন আর যাদের কথা তারা এত বেশি বলেন, তাদের কথাটাই এসেছে। আমি বিএনপির কথাই বলছি। ৩০০ সিটে ৬৯২ জন মনোনয়ন পেল। একটা সিটে কোথাও তিনের অধিক, কোথাও দুয়ের অধিক নমিনেশন দিয়ে এই যে নির্বাচন বাণিজ্যটা করে সেই টাকাগুলো কোথায় রাখল? এই খোঁজটা করলে সুইস ব্যাংকের হিসাব তিনি পেয়ে যাবেন।”

ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

৩ কারণে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার'

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের মূল কারণ তিনটি। প্রথমত, অনেকে দেশে  অর্থ রাখা নিরাপদ মনে করেন না। দ্বিতীয়ত, এখানে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নেই। এছাড়া, ২০১৮ সালের নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতার কারণে মানি লন্ডারিং বেশী হয়েছে। 

ড. আজিজুল ইসলাম মনে করেন, বিদেশে অর্থ পাচার রোধ করতে হলে দেশে দুর্নীতি কমিয়ে বিনিয়োগ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে সমাজে  নাগরিকদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করাও জরুরি।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৩০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ