বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ; আবরার হত্যা মামলার ১৯ আসামি বহিষ্কার
ভাইস চ্যান্সেলরের (ভিসি) ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েটে) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া, আবরার হত্যাকাণ্ডের এজাহারভুক্ত ১৯ আসামিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।
আজ (শুক্রবার) বিকেলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপে এই ঘোষণা দেন ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। আবরার ফাহাদের খুনিদের ফাঁসিসহ শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি নিয়ে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আবরার ফাহাদ স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনের এ বৈঠক শুরু হয়। এতে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ইয়াজ হোসেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাসুদসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
আলোচনার শুরুতেই ফাহাদ হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত সব আসামিকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানান ভিসি। তিনি বলেন, “আবরার ফাহাদ হত্যার এজাহারভুক্ত ১৯ আসামিকে বুয়েট থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং আমি আমার ক্ষমতাবলে- এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি।”
তিনি আরও বলেন, “আবরারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং মামলার খরচ বুয়েট কর্তৃপক্ষ বহন করবে। বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারকে চিঠি দেওয়া হবে। বুয়েটে র্যাগিং বন্ধ হবে।”
শিক্ষার্থীদের শর্ত অনুযায়ী, গণমাধ্যমের সামনে আলোচনা করতে রাজি ছিলেন না ভিসি। পরে সরাসরি সম্প্রচার না করার শর্তে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতেই আলোচনা করতে রাজি হন। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র দেখে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। অডিটোরিয়ামে প্রবেশের জন্য সাংবাদিকদের প্রেস কার্ড দেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবিগুলো হলো, খুনিদের শনাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, খুনিদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১১ অক্টোবরের মধ্যে আজীবন বহিষ্কার করতে হবে, আবরার হত্যা মামলার সব খরচ এবং ক্ষতিপূরণ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করতে হবে, মামলা দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের অধীন স্বল্পতম সময়ে নিস্পত্তি করতে হবে, অবিলম্বে চার্জশিটের কপিসহ অফিসিয়াল নোটিশ দিতে হবে, বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে, ঘটনার পর ভিসি কেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি এবং ৩৮ ঘণ্টা পর গিয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর না দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের কাছে তার জবাব দিতে হবে, আবাসিক হলগুলোতে র্যাগের নামে এবং ভিন্নমত দমানোর নামে নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে, এ ধরনের ঘটনা প্রকাশে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে হবে, নিরাপত্তার জন্য সব হলের উইংয়ের দু’পাশে সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে এবং ১১ অক্টোবরের মধ্যে শেরেবাংলা হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করতে হবে।
আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন। তিনি থাকতেন বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ নম্বর কক্ষে। গত রোববার রাত আটটার দিকে তাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় একই হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে। ওই কক্ষে তাকে নির্যাতন করে বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। রাত ৩টার দিকে হল থেকেই তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা আবরার হত্যার ঘটনায় খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।#
পার্সটুডে/শামস মণ্ডল/আশরাফুর রহমান/১১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।