‘৫ শর্ত পূরণ না করলে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ, আন্দোলন চলবে’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) চলতি বছরের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের আগে পাঁচটি শর্ত পূরণের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। অন্যথায় বুয়েটে প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ ও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন তারা।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় বুয়েট শহীদ মিনারে এক ব্রিফিংয়ে আন্দোলনকারীদের একজন প্রতিনিধি বলেছেন, “১০ দফা দাবির বাস্তবায়ন না হওয়ার পর্যন্ত তাদের এই প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে। তবে ভিসি স্যারের অনুরোধ, দেশব্যাপী আমাদের ভাই-বোন, যারা ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে স্বল্প সময়ে বাস্তবায়ন করা যায়, এমন কয়েকটি পয়েন্ট আমরা আলাদা করেছি, সেগুলো বুয়েট প্রশাসন বাস্তবায়ন করলে আমরা মনে করব, ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার মত পরিবেশ রয়েছে।”
শিক্ষার্থীদের পাঁচ শর্ত
১. আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে এখেই সাময়িক বহিষ্কার করতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট হবে, তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে মর্মে বুয়েট প্রশাসন থেকে নোটিস জারি করতে হবে।
২. আবরার হত্যা মামলার সব খরচ বুয়েট প্রশাসন বহন করবে এবং তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে, সেটাও নোটিসে লেখা থাকবে।
৩. বুয়েটে সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সকল হল থেকে অবৈধ ছাত্র উৎখাত করতে হবে। অবৈধভাবে হলের সিট দখলকারীদের উৎখাত করতে হবে। সাংগঠনিক ছাত্র সংগঠনগুলোর অফিস রুম সিলগালা করতে হবে। সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পর ভবিষ্যতে কেউ যদি এ রকম সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িত হয় কিংবা কোনো রকম ছাত্র নির্যাতনে জড়িত হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নেবে- তা বিস্তারিত জানিয়ে নোটিস জারি করতে হবে। পরবর্তীতে এটি যে অর্ডিন্যান্সে অন্তর্ভুক্ত থাকবে, তা নোটিসে উল্লেখ থাকতে হবে। পাশাপাশি, এ ধরনের কার্যক্রম তদারকির জন্য একটি কমিটি করতে হবে এবং কমিটি গঠনের বিষয়টিও নোটিসে উল্লেখ করতে হবে।
৪. বুয়েটে পূর্বে ঘটে যাওয়া সকল ছাত্র নির্যাতন, হয়রানি, র্যাগিংয়ের ঘটনা এবং ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা প্রকাশের জন্য বিআইআইএস অ্যাকাউন্টে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম থাকতে হবে। বিষয়টি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শাস্তি বিধানের জন্য একটি কমিটি থাকতে হবে। বিষয়টি নোটিসের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
৫. প্রত্যেক হলের সকল ফ্লোরের দুই পাশে সিসি ক্যামেরা যুক্ত করতে হবে এবং এই সিসিটিভি ফুটেজ সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে- এই মর্মে নোটিস আসতে হবে।
এই পাঁচ শর্ত তুলে ধরে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি বলেন, “আমরা চাই না ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বুয়েটে ১৯ ব্যাচের যে শিক্ষার্থীরা আসবে, তারা একটি অসুস্থ অ্যাক্যাডেমিক কালচারের অংশ হোক।”
বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা আগামী ১৪ অক্টোবর। কিন্তু তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ খুন হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে সেই পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরারকে গত রোববার রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। তার পর থেকেই আন্দোলন চালিয়ে আসা বুয়েট শিক্ষার্থীরা তাদের দশ দফা পূরণ না হলে ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়ারও ঘোষণা দেয়।
শুক্রবার সন্ধ্যার বুয়েট অডিটোরিয়ামে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। বৈঠকে বক্তব্যের শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে ভিসি বলেন, ‘আমার কিছুটা ভুল হয়েছে, আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমার ভুল আমি স্বীকার করেছি, তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দাও।’
পরে তিনি বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং আবরার হত্যা মামলার ১৯ আসামিকে সাময়িক বহিষ্কার করার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি অন্য দাবিগুলোও পূরণ করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তাতে আশ্বস্ত হননি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৯ জনকে সাময়িক বহিষ্কারের আশ্বাস দেওয়া হলেও হলগুলোতে এখনও দলীয় নেতাকর্মী রয়েছেন। ক্যাম্পাসের পরিবেশ এখনও নিরাপদ নয়। তাই আগামী ১৪ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষা না নেয়ার পক্ষে তারা।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।