ছাত্র আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশের ৫ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ
-
চেক প্রদান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে সৃষ্ট উপাচার্যবিরোধী বিক্ষোভ ও ছাত্র আন্দোলনের জেরে বন্ধ রয়েছে দেশের পাঁচটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এসব আন্দোলনের ফলে ব্যাহত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম।
দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে প্রায় তিন মাস ধরে উত্তাল রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। একই দাবিতে আন্দোলন চলছে পাবনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়া, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার পর দোষীদের শাস্তির দাবিতে মাসব্যাপী শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিতর্কিত শিক্ষক কর্মকর্তাদের অপসাণের দাবিতে আন্দোলন চলছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্র আন্দোলনের জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
দীর্ঘসময় ধরে চলা আন্দোলনে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে যারা দুর্নীতির অভিযোগ আনবে, তাদের সে অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে। অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে নিজ কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এই হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইদানিং দেখছি হঠাৎ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কথা কথায় ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন, ভিসিকে দুর্নীতিবাজ বলছে। আমার স্পষ্ট কথা, যারা ভিসিকে দুর্নীতিবাজ বলছে, তাদেরকে কিন্তু এই অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে এবং তথ্য দিতে হবে। যদি দুর্নীতি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় -যে অভিযোগকারী তার কিন্তু সাজা পেতে হবে। এটা কিন্তু আইনে আছে। মিথ্যা অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। সে ব্যবস্থা কিন্তু আমরা নেব। এটা স্পষ্ট জানিয়ে দিলাম।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অভিযোগ প্রমাণ না করে কেবল দুর্নীতি দুর্নীতি বলে ক্লাসের সময় নষ্ট করবে, ক্লাস চলতে দেবে না, বিশ্ববিদ্যালয় চলতে দেবে না, তাদের আন্দোলনের নামে ভিসির বাড়িতে আক্রমণ, অফিসে আক্রমণ, ভাংচুর-এটা তো এক ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।'
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বুয়েটের ছাত্র আরবার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে আন্দোলনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই ছাত্রের ঘটনা যখনই শুনি তখনই আমরা অ্যাকশন নিয়েছি। তারপরে তারা আন্দোলনে নামে, গ্রেফতার হয়ে গেছে, মামলা সব কিছু হয়েছে? এখন তাহলে আন্দোলন কিসের জন্য, আমার সেখানেই প্রশ্ন? দিনের পর দিন ক্লাস করতে দেবে না, নিজেরা ক্লাশ করবে না তাহলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে কেন? এই ধরনের কাজ যারা করবে সঙ্গে সঙ্গে তাদের এক্সপেল্ট করে দেওয়া উচিত ইউনিভার্সিটি থেকে।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, 'ছাত্র শিক্ষকরা এই ধরনের কর্মকাণ্ড কেন ঘটাবে? আর তারা ক্লাস কেন বন্ধ করবে? প্রত্যেকটা পাবলিক ভার্সিটি কত টাকা খরচ করে পড়ার জন্য? খরচ তো সরকারের পক্ষ থেকে করি। প্রতি বছর বাজেটে টাকা দেই। বাজেটে আমরা টাকা দেবো কিন্তু সেখানে সরকার কিছু করতে পারবে না। দিনের পর দিন ক্লাস বন্ধ করে থাকবে, এটা তো হয় না।'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল
এদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভে আজও উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। সকাল থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয় এবং বেলা একটার দিকে কয়েক শ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
এর আগে, মঙ্গলবার প্রশাসনিক ভবন অবরোধ এবং সর্বাত্মক ধর্মঘট পালনকালে আন্দোলনকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এর পরপরই সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বুধবার থেকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অবস্থান ও মিছিল-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই আন্দোলন কর্মসুচি অব্যাহত রেখেছেন বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-শিক্ষকরা।
আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, 'আমরা প্রায় তিন মাস ধরে উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত দাবি করে আসছিলাম। কিন্তু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। দেড় মাস এ আন্দোলন চললেও উপাচার্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কোনো বৈঠক করেননি। অথচ উপাচার্যের তল্পিবাহক শিক্ষকেরা কোনো রকম তদন্ত ছাড়াই উপাচার্য দুর্নীতি করেননি বলে সাফাই গাওয়া শুরু করে।’
আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আন্দোলন করছি আমরা। ছাত্রলীগের যারা টাকা পেয়েছে, তারাও গণমাধ্যমে টাকা পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে। উপাচার্য দিনের পর দিন মিথ্যাচার করে গেছেন। আমরা আচার্য বরাবর চিঠি দিয়েছি। কিন্তু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহলের বোধোদয় হয়নি। অথচ আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ দিয়ে হামলা চালানো হলো। উপাচার্য গণমাধ্যমের সামনে ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল।’
পুলিশ দিয়ে হল খালি করা হলেও আন্দোলন চালানোর ঘোষণা
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় তারা ক্যাম্পাসে সমাবেশ করে বিক্ষোভ মিছিল করবেন। এমনকি পুলিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলো খালি করা হলেও আন্দোলন চালবে বলে তারা জানিয়েছেন।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এর মুখপাত্র রায়হান রাইন আজ এই ঘোষণা দিয়েছেন।#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।