আবরার হত্যা: ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা, মারধর করেছে ১১ জন
(last modified Wed, 13 Nov 2019 07:17:38 GMT )
নভেম্বর ১৩, ২০১৯ ১৩:১৭ Asia/Dhaka
  • আবরার ফাহাদ
    আবরার ফাহাদ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর মধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ১৯ জন এবং এজাহারের বাইরে রয়েছেন ছয়জন।

আজ (বুধবার) বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি টিম ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ অভিযোগপত্র নিয়ে আসেন। আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় এ অভিযোগপত্র জমা দেন তারা।

এ বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, আবরার হত্যা সরাসরি অংশে নেয় ১১ জন। বাকি ১৪ জন হত্যাকাণ্ডে বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত রয়েছে।

এজাহারনামীয়রা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা ও এ এস এম নাজমুস সাদাত।

এজাহার বহির্ভূত ৫ জন হলেন- ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু। এদের মধ্যে প্রথম ১৬ জনের নাম হত্যা মামলার এজাহারে উল্লেখ ছিল। বাকিদের নাম তদন্তে উঠে এসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি'র অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম

'হত্যাকারীরা উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল'

মনিরুল ইসলাম বলেন, 'তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি রাত ১০ টার পর থেকে আবরারের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। ২ টা ৫০ এর দিকে ডাক্তার তাকে দেখে মৃত ঘোষণা করে। অনেক দীর্ঘ সময় ধরে তাকে পেটানো হচ্ছিল।'

তিনি আরও বলেন, 'কোনো একক কারণে আবরারকে হত্যা করা হয়নি। সে (আবরার) শিবির করে কি না, হত্যার পেছনে এটি একটি মাত্র (অন্যতম) কারণ। কিন্তু যারা তাকে হত্যা করেছে তারা এমন উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। কেউ তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে, সালাম না দিলে, তাদের সামনে হেসে দিলে ইত্যাদি কারণে তারা নির্যাতন করত। অভিযুক্তরা র‍্যাগিংয়ের নামে নতুনদের আতঙ্কিত রাখতে এসব কাজ করে। এসব বিষয়ে আমরা আগে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে তদন্তে একজন সাক্ষী বলেছেন যে, সে একজনকে সালাম দেয়নি বলে তাকে পেটানো হয়েছে। র‍্যাগিংয়ের নামে উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের অভ্যস্ততার অংশ হিসেবেই আবরার হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয়েছে বলে আমরা মনে করছি। হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগে থেকে মনিটরিং করলে এমন ঘটনা নাও ঘটতে পারত। এটা তাদেরই মনিটর করার কথা।’

আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িত কয়েকজন

প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে ৫ অক্টোবর শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা। তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।

হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলিট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ইতিমধ্যে পুলিশ ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে। ১৩ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ৬ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/আবদুর রহমান খান/১৩

ট্যাগ