ভারতে এনআরসি প্রকাশের পর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ বেড়েছে, বিশ্লেষকের প্রতিক্রিয়া
(last modified Thu, 21 Nov 2019 12:48:15 GMT )
নভেম্বর ২১, ২০১৯ ১৮:৪৮ Asia/Dhaka
  • ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খালিশপুরে অনুপ্রবেশের সময় গতকাল (বুধবার) আটক কয়েকজন নারী-পুরুষ ও শিশু
    ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খালিশপুরে অনুপ্রবেশের সময় গতকাল (বুধবার) আটক কয়েকজন নারী-পুরুষ ও শিশু

ভারত সরকার জাতীয় নাগরিকত্বের চূড়ান্ত তালিকা (এনআরসি) প্রকাশ করার পর থেকে ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো সীমান্ত গলিয়ে ভারতীয় মানুষজন বাংলাদেশে ঢুকছেন বা ঢোকার চেষ্টা করছেন।

ঝিনাইদহ জেলার মহেষপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার সময় গত ১০ দিনে ২০৩ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এদের মধ্যে ৭৫ জন নারী, ৬৪ জন পুরুষ ও ৬৪টি শিশু রয়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দিয়ে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মহেশপুর সীমান্ত পাহাড়ায় নিযুক্ত বিজিবি বলছে, আটক হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম। কয়েকজন পাওয়া গেছে, যাঁরা অন্য ধর্মাবলম্বী। আটক হওয়া লোকজন জানিয়েছেন, ভারতে জাতীয় নাগরিক তালিকার (এনআরসি) আতঙ্ক ও নানা চাপের কারণে তাঁরা ভারত ছেড়ে চলে এসেছেন। তাঁরা আর সে দেশে ফিরতে চান না। আটক ব্যক্তিরা একসময় এ দেশে ছিলেন বলে পরিচয় দিচ্ছেন।

মহেশপুর সীমান্তের কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, বিজিবির হাতে যতজন আটক হয়েছেন, অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা তার কয়েকগুণ বেশি, যাঁরা লুকিয়ে বন-জঙ্গল মাড়িয়ে এ দেশে প্রবেশ করছেন।

বার্তা সংস্থা ইউএনবি গতকাল (বুধবার) এক খবরে জানায়, গতকাল সকালে যশোরের বেনাপোল ও দৌলতপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢোকার সময় ৫৪ জনকে আটক করেছে বিজিবি। এর মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুও রয়েছে। পরে তাঁদের বেনাপোল বন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আকমল হোসেন রেডিও তেহরানকে বলেন, ভারতে এন‌আরসি’র কারণে আতঙ্কিত লোকজন সীমান্ত পথে বাংলাদেশে ঢুকছে এটা নিশ্চয়ই ভালো খবর নয়। বিশেষ করে যেখানে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে আশ্বাস দেয়া হয়েছে এনআরসি ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়- এতে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হবার কিছ নেই। কিন্তু ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের নেতা মন্ত্রীরা হরহামেশাই বলে আসছেন ভারতের অবৈধ নাগরিকের তাড়িয়ে দয়া হবে।

ড. আকমল হোসেন আরো জানান, বাংলাদেশ একদিকে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বড় রকমের সমস্যায় রয়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে ভারতীয় লোকদের আগমন আমাদের জন্য বাড়তি সমস্যার সৃষ্টি করবে। তাই এখনই সরকারকে এ অবৈধ আগমন ঠেকাতে হবে এবং যারা এসেছে তাদের দ্রুত ফেরত পাঠাবার ব্যবস্থা করতে হবে।

উল্লেখ্য, ভারতের আসাম রাজ্যে গত ৩১ আগস্ট জাতীয় নাগরিক তালিকার (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় ১৯ লাখের বেশি মানুষকে অবৈধ নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এদের  বেশীরভাগকেই 'বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী' বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে বৈঠকে এবং ৫ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কিছু নেই।

তবে সর্বশেষ গতকাল ভারতের ক্ষমতাসীনদল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি ও দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, আসামের মতো এনআরসি সারা ভারতেই কার্যকর করা হবে।

তবে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, তার রাজ্যে এনআরসি কার্যকর করতে দেবেন না। তাছাড়া, ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে এনআরসি’র বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়েছে। সেখানে সভা-সমাবেশ প্রতিবাদ মিছিল ছাড়াও বন্ধ পালিত হচ্ছে।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ