করোনা প্রতিরোধে জয় হবেই- কাদের : ত্রাণ নিয়ে হাহাকার চলছে- রিজভী
(last modified Tue, 14 Apr 2020 14:10:56 GMT )
এপ্রিল ১৪, ২০২০ ২০:১০ Asia/Dhaka
  • ওবায়দুল কাদের ও রুহুল কবির রিজভী
    ওবায়দুল কাদের ও রুহুল কবির রিজভী

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ এক ভিডিও বার্তায় দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে সবার মঙ্গল কামনা করেছেন।   

শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। সবাই ঘরে থাকুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সুস্থ থাকুন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বীরের জাতি বাঙালি। প্রতিরোধ যুদ্ধে জয় আমাদের হবেই ইনশআল্লাহ।

বিএনপির অভিযোগ

এদিকে, বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ করেছে ক্ষমতাসীনদের লুটপাটের কারণেই সারাদেশে ত্রাণ নিয়ে হাহাকার চলছে।

আজ (মঙ্গলবার) সকালে রাজধানীতে একটি বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে ঘরে ঘরে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার কর্মসূচির উদ্বোধন করতে গিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, বুভুক্ষু মানুষ যখন ত্রাণ না পেয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ করছে তখন সরকারি ত্রাণ আত্মসাৎ হয়ে যাচ্ছে সরকারি দলের লোকদের দ্বারা।

রিজভী বলেন, মানুষ রাস্তায় মরে পড়ে থাকছে, একটু খাবারের জন্য হাহাকার করছে। একটু ত্রাণের আশায় গরীব অসহায় মানুষ রেল স্টেশনে, পথে-ঘাটে অপেক্ষা করছে। অথচ তারা  ত্রাণ পাচ্ছে না। সেখানে ত্রাণ লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। আমরা এখনো বলছি যে, জনগণের এই দুর্দশা লাঘব করার জন্য সকলকে একসাথে নিয়ে কাজ করতে হবে।

ত্রাণের জন্য ঢাকায় বিক্ষোভ

এদিকে ত্রাণের জন্য আজকেও রাজধানী ঢাকায়, প্রধানমন্ত্রীর নিজ জেলা গোপালগঞ্জে  এবং শিল্প নগরী খুলনায় বিক্ষোভ করেছে অভুক্ত মানুষেরা।

ত্রাণের জন্য সড়কে টানা তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করার পর ঘরে ফিরেছেন রাজধানীর বাড্ডার শত শত গরিব-শ্রমজীবী মানুষ। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বাড্ডার লিংক রোডে বিক্ষোভ করেন এ সব হতদরিদ্র। বৈশাখের প্রখর রোদে রিকশা দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে তারা রাস্তায় চলাচল বন্ধ করে দেয়।

উত্তর বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা, দক্ষিণ বাড্ডা, মেরুল বাড্ডা, বাড্ডা ডিআইটি প্রকল্প, আফতাবনগর নুরেরচালাসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েকশ’ অভাবী মানুষ এ বিক্ষোভে অংশ নেন।   

গোপালগঞ্জ

খাদ্য সহায়তার দাবিতে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে ঢাকা-খুলনা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কর্মহীন, দিনমজুর ও অতিদরিদ্র মানুষ। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মোড়লপাড়া, কারিকরপাড়া ও হিন্দুপাড়ার বাসিন্দারা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের রথখোলা নামক স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সড়কের দু’পাশে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে।

পরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মাসুদুর রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান হাজি মোহাম্মদ আলী ও সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম টুটুল বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে  খাদ্য সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর দুপুর ১ টার দিকে সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

দিগনগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মোড়লপাড়ার বাসিন্দা রেজাউল মোড়ল ও আবু কালাম মোড়ল বলেন, তাদের ওয়ার্ডের ৩টি পাড়ায় ৮ শ’ পরিবারের বসবাস। এরমধ্যে ৩ শ’ পরিবার ফল বিক্রি, দিন মজুরি ও হাকারি করে জীবিকা নির্বাহ করে। করনোভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সব বন্ধ হয়ে গেছে। আয় বন্ধ হয়ে গেছে। এখন তারা বেকার হয়ে পড়েছেন, ঘরে খাবার নেই। এখনো কোন সরকারি বা বেসরকারি খাদ্য সহায়তা পাননি। পরিবার পরিজন নিয়ে বড় কষ্টে আছেন। 

তাদের অভিযোগ, তারা স্থানীয় রাজনীতির শিকার হওয়ায়  খাদ্য সহায়তা পাননি। ৪নং ওয়ার্ডের মানুষকেও ত্রাণ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। 

খুলনা

খুলনার রূপসা উপজেলায় ত্রাণ ও সাহায্যের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে রূপসা উপজেলার পূর্ব রূপসা বাজার পার্শ্ববর্তী আদর্শগলির শত শত নারী পুরুষ এ বিক্ষোভে অংশ নেন। ক্ষুধার জ্বালায় রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন বলেন জানান তারা।

করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব না মেনে তারা বাজারের বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল করতে করতে পূর্ব রূপসা বাসস্ট্যান্ড ফাঁড়ির সামনে অবস্থান নেয়। পরে তারা খুলনা-মোংলা মহাসড়কে সেনাবাহিনীর টহল গাড়ি পেয়ে তাদের কাছে দাবি তুলে ধরেন।

এলাকাবাসী দাবি করেন, এলাকার প্রতিটা মানুষ ঘরে থাকলেও তাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার ত্রাণ বা খাবার আসেনি। মেম্বার চেয়ারম্যানদের কাছে বললে তারা কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। এলাকার নেতারাও খোঁজ-খবর নিচ্ছে না। এদিকে পরিবারের সদস্যরা অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। ঘর থেকে বের হতে পারছে না। কাজ কাম নেই। সরকার ১০ টাকা কেজি করে চাল দিচ্ছিল, তাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন অসহায় মানুষগুলো।

বিক্ষোভের সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দিয়ে এলাকাবাসীকে শান্ত করেন।

পরে নৈহাটী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন বুলবুল সেনা সদস্যদের উপস্থিতিতে জানান, কর্মহীনদের জন্য যে পরিমাণ বরাদ্দ পাচ্ছি, তা দিয়ে কিছুই হচ্ছে না। এলাকায় ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন আক্তার  রূপসা একটি বিশাল জনবসতি এলাকা। এখানে সরকারি সহযোগিতার চাল এসেছে ৬১ টন, যা মাত্র ৭ হাজার পরিবারকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র পূর্ব রূপসার নৈহাটী ইউনিয়নেই নিম্নআয়ের শ্রমিক রয়েছেই ৫-৬ হাজার।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৪