বাংলাদেশে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু: লকডাউনের কারণে শ্রমিক সংকট
(last modified Mon, 20 Apr 2020 12:24:24 GMT )
এপ্রিল ২০, ২০২০ ১৮:২৪ Asia/Dhaka
  • মাঠ জুড়ে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন পাকা ধান ঘরে তোলার সময় এখন
    মাঠ জুড়ে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন পাকা ধান ঘরে তোলার সময় এখন

বাংলাদেশে এখন প্রধান ফসল বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মৌসুম। বিস্তৃত মাঠ জুড়ে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন পাকা ধান ঘরে তোলার সময় এটা। এসময় স্থানীয় কৃষি মজুরের সংকট হয় প্রতি বছর। সে কারণে উদ্বৃত্ত ধান উৎপাদন অঞ্চল, বিশেষ করে দিনাজপুর, ময়মনসিংহের ভাটি অঞ্চল ও সিলেটের হাওর অঞ্চলে বাইরের জেলা থেকে মৌসুমী কৃষি শ্রমিক এসে যোগ দেয় পাকাধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাছে।

কিন্তু দেশজুড়ে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি, বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় লকডাউন বহাল থাকা এবং পরিবহন বন্ধের কারণে এবারের ফসল কাটার মওসুমে দেখা দিয়েছে কৃষি শ্রমিকের সংকট। অপর দিকে লকডাউনের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মহীন হয়ে দুর্দশায় পড়েছেন লক্ষ লক্ষ কৃষিশ্রমিক, দীনমজুর, আর খেটে খাওয়া মানুষ। 

এ অবস্থায় নিজেদের ক্ষেতের ফসল যথাযথভাবে ঘরে তোলা নিয়ে চিন্তিত কৃষিজীবী পরিবারগুলো। আগাম বন্যার পূর্বাভাসে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন হাওর অঞ্চলের চাষীরা।

সরকারি হিসাবে চলতি রোরো মওসুমে দেশে ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৫৫০ হেকটর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসেবে হাওড়াঞ্চলে এবার বেরো আবাদ হয়েছে নয় লাখ হেকটরের বেশী জমিতে। এত পরিমান জমি থেকে ধানকাটা ও মাড়াইয়ের জন্য ৮৪  লাখের মত শ্রমিকের দরকার। এ হিসাবে প্রতিদিন ৬৬ হাজার অভিবাসী শ্রমিক প্রয়োজন।

ওদিকে সরকারি হিসাবে দেশে করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় ২ কোটি ৪২ লাখ মজুর ও বেতনভোগী শ্রমিক। এ অবস্থায় এদের মধ্যে ধানকাটা ও মাড়াইয়ের কাজ জানে এমন শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে ধানের আঞ্চলে কৃষি শ্রমিকের সংকট মোকাবেলা যায় এবং শ্রমিকদেরও সাময়িক আয়ের ব্যবস্থা করে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি বিষেষজ্ঞগণ।   

   

হবিগঞ্জ ধানকাটা শুরু

হাওরবেষ্টিত হবিগঞ্জ জেলার প্রধান ফসল বোরো মৌসুমের ধান। করোনা পরিস্থিতিতে হবিগঞ্জে বোরো ধান কাটার শ্রমিক সঙ্কট নিরসনে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলার কর্মহীন বিভিন্ন পেশার লোকদের ধান কাটতে আগ্রহী করা, বাইরের জেলা থেকে দক্ষ শ্রমিক আনাসহ শ্রমিকদের নিয়মিত খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক  মোহাম্মদ কামরুল হাসান।

এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ তমিজ উদ্দিন খান জানান, বন্যার আশঙ্কায় কৃষকদেরকে দ্রুত ফসল ঘরে তোলার কথা বলা হয়েছে। এরইমধ্যে ১৭ শতাংশ বোরো ফসল কাটা শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়েই ধানকাটতে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তারা বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যৌথভাবে আমরা এখানে সমন্বয় করেছি। বাহির থেকেও শ্রমিক জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে ধান কাটার শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটান পুলিশের (সিএমপি) উদ্যোগে হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় চট্টগ্রাম থেকে ধান কাটার শ্রমিক পাঠানো শুরু হয়েছে। রবিবার বিকালে প্রথম দফায় পাঁচটি গাড়িতে করে শ্রমিক রওয়ানা গয়ে গেছে। এভাবে মোট ৪০টি যাত্রীবাহী বাসে করে এক হাজার শ্রমিক পাঠানো হবে ধান কাটার জন্য।

সিএমপি কমিশনার মাহবুবুর রহমান রিপন জানান, এই সব শ্রমিকদের বুঝে নেবেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার। সেখানে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করবে পুলিশ প্রশাসন। কাজ শেষে পারিশ্রমিক পরিশোধ করে একইভাবে বাসে করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হবে। তবে শুধু দৈনিক মজুরি পরিশোধ করবেন জমির মালিক। 

মৌলভীবাজারে ধান কাটার যন্ত্র হারভেস্টারের ব্যবহার

শ্রমিক সংকটে হারভেস্টার

বোরো মৌসুমে ধানকাটার শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় হাওর অঞ্চলে (কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ধান কাটার জন্য জরুরি ভিত্তিতে নতুন ১৮০টি কম্বাইন হারভেস্টর ও ১৩৭টি রিপার সরবরাহের জন্য আর্থিক বরাদ্দ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।  

 কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান জানান, হাওরের বোরো ধান কাটার জন্য আমরা জরুরি ভিত্তিতে এসব যন্ত্রপাতি বরাদ্দ করেছি। এর ফলে এ অঞ্চলের ধান কাটায় আর কোনো সমস্যা হবে না।

ছাত্রলীগের ধানকাটা

ময়মনসিংহ অঞ্চলে বোরো ধানের ভাল ফলন হলেও করোনা আতঙ্কে ধানকাটা শ্রমিক সংকট দেখা দেয়ায় ধান ঘরে তোলা নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে। জমির পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না অনেক অসহায় কৃষক। অন্যন্য বছর উত্তরাঞ্চল থেকে ধানকাটার শ্রমিক আসলেও এবার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তারাও আসছে না। এদিকে লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায় কৃষকের হাতে টাকা পয়সাও নেই।

এমন প্রেক্ষাপটে বিপদগ্রস্থ কৃষকের পাশে দাড়িয়েছে ময়মনসিংহের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে রোববার (১৯ এপ্রিল) ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের কাতলাসেন এলাকার দু'জন বর্গাচাষীর জমির ধান কেটে দিয়েছেন তারা।

ময়মনসিংহের ছাত্রলীগ নেতা তানভীর জুবায়ের ইসলাম তারিনের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন নেতাকর্মী ধান কাটার কাজে অংশ নেয়। ধানক্ষেত থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কৃষক চানু মুন্সী ও আব্দুর রহমানের বাড়িতে মাথায় করে কাটা ধান পৌঁছেও দেন তারা।

বেশী ধান-চাল সংগ্রহ করবে সরকার

চলতি বোরো মৌসুমে আগের বছরের তুলনায় বেশি চাল, ধান, আতপ ও গম সংগ্রহ করা হবে। প্রায় ২১ লাখ মেট্রিক টনের খাদ্য সংগ্রহ করবে সরকার বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ (সোমবার) সকালে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাসমূহের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

অ্যাপের মাধ্যমে ধান সংগ্রহের পরিকল্পনা

এদিকে, আমনের পর এবার বোরোতে ২২ উপজেলায় পরীক্ষমূলকভাবে অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে বোরো ধান সংগ্রহ করার কথা জানিয়েছে সরকার।

সোমবার (২০ এপ্রিল) খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে অ্যাপে ধান সংগ্রহের উপজেলাগুলো অনুমোদন দিয়ে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

গত আমন মৌসুমে সাত বিভাগের ১৬ উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে কৃষকের কাছ থেকে অ্যাপের মাধ্যমে ধান কেনা হয়। #

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২০

 

ট্যাগ