আগামীকাল শুরু বাংলাদেশের বাজেট অধিবেশন: বিভিন্নমহলের প্রতিক্রিয়া
করোনা মহামারির আতঙ্ক আর আর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যেই আগামীকাল ( ১০ জুন) বাংলাদেশের চলতি সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হবে বলে কথা রয়েছে। পরিস্থিতির কারণে এবার বাজেট অধিবেশন হবে খুবই সংক্ষিপ্ত এবং সদস্যদের উপস্থিতিও থাকবে সীমিত। আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার দ্বিতীয় “স্মার্ট বাজেট” উপস্থাপন করবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা খাতে চলতি বছরের তুলনায় পাঁচ হাজার ৭৭৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বাড়িয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৫ হাজার ৭২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। শীর্ষ বরাদ্দের পঞ্চম অবস্থানে রাখা হবে স্থাস্থ্যসেবা খাতকে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অনুকূলে নিয়মিত এ অর্থ বরাদ্দের পরও করোনাভাইরাসের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বাজেটে যা করোনাকালীন যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে খরচ করা যাবে।
ইতোমধ্যে অর্থনীতিবিদরা কম রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্যসেবা খাতকে আগ্রাধিকার ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়ে উচ্চাকাংখা মুক্ত সত্যিকার জনগণের জন্য বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন। একই সাথে উন্নয়ন প্রকল্প সীমিত রাখা ও উন্নয়নের নামে ব্যাপক দুর্নীতির সুযোগ বন্ধ করারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
করোনায় ক্ষতবিক্ষত বৈশ্বিক অর্থনীতি। যার প্রভাব দেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। কমেছে রপ্তানি। কমছে রাজস্ব আয়ও। এ অবস্থায় আসছে বাজেটও ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণ বাড়ানোর আভাস দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বিএনপি’র বাজেট ভাবনা
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে জোর না দিয়ে মানুষের জীবন ও জীবিকার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (৯ জুন) দুপুরে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র বাজেট ভাবনা: অর্থবছর ২০২০-২১’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এ সংকটকালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে জোর না দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা ও জীবিকার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। মন্দাকালীন বিনিয়োগ, ভোগ ব্যয় ও রফতানি কমে যাওয়ায় সামষ্টিক চাহিদা বাড়াতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধিতে সর্বাধিক জোর দিতে হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সার্বজনীন মৌলিক প্রয়োজনীয় যেমন-স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, শ্রমকল্যাণ, কৃষি, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষি, শিল্প ও সেবাখাতের বহুমুখীকরণ, উৎপাদন ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
টিআইবি’র প্রস্তাব
এ প্রসঙ্গে টিআইবি’ র নিার্বাহী পরিচালক বলেছেন, এবছর স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় কম রাজস্ব আয় হবে এটা ভেবেই জনগণের জন্য বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
ব্যাংক ঋণ, বৈদেশিক ঋণের প্রতি না: অর্থনীতি সমিতি
ওদিকে সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬শ'কোটি টাকার একটি বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। তিনি এ বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা হাজির করে সতর্ক করে দেন, দারিদ্র্যবিমোচন নিয়ে অতীতে যেসব কথাবর্তা হয়েছে, সেসব ভুলে যান। বাংলাদেশে ২৬ মার্চের আগের অবস্থা নেই। লকডাউনের ৬৬ দিনে ঘটনা ঘটেছে মারাত্মক। সামনে আরও অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবেলা করতে হবে। তাই বাজেট হতে হবে বাস্তব উপযোগি এবং ব্যাংক ঋণ বা বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করা যাবে না।
এদিকে, দেশের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) রোববার (৭ জুন) এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে দেশের বেশিরভাগ খাত ধুকতে থাকায় চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি আড়াই শতাংশের বেশি হবে না। এটা মাথায় রেখেই বাজেট পরিকল্পনা করতে হবে।
এফবিসিসিআই’র প্রস্তাবনা
এর আগে, গতকাল ( সোমবার) ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত এক অনলাইন সেমিনারে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা অভিমত দিয়েছেন করোনার প্রভাবে দেশের স্থবির অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে বাজেটে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা জরুরি। এক্ষেত্রে দেশীয় শিল্পকে অগ্রাধিকার দিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে জোর দিতে হবে।
কী বলবেন অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় মানুষের জীবন রক্ষাকে অগ্রাধিকার দেবেন। পাশাপাশি মহামারি কাটিয়ে ওঠার জন্য পবিত্র কোরআনের সুরা আল বাকারার ১৫৫ নম্বর আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের স্মার্ট বাজেটের বক্তব্য শেষ করবেন।
সুরা আল-বাকারার ১৫৫ নম্বর আয়াতের অর্থ হচ্ছে ‘অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে এবং রোগীকে সুসংবাদ দাও।’
উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতবছর বাজেট আধিবেশনের সময় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। অসুস্থতা নিয়েও জীবনের প্রথম বাজেটটি উত্থাপন করতে গিয়ে বক্তৃতার একপর্যায়ে তাকে বসে পড়তে হয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রীকেই আর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা পাঠ সমাপ্ত করতে হয়েছিল। #
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/৯