২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট: বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানালেন ফখরুল
(last modified Fri, 12 Jun 2020 15:48:09 GMT )
জুন ১২, ২০২০ ২১:৪৮ Asia/Dhaka
  • মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
    মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘অন্তঃসারশূন্য ও কল্পনাপ্রসূত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। আজ (শুক্রবার) বিকেলে উত্তরার নিজ বাসায় আয়োজিত জুম মিটিংয়ে দলের পক্ষে আনুষ্ঠানিক বাজেট প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভার্চুয়াল এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নেরও জবাব দেন

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  বলেন, “করোনা সংকটের কারণে জাতি আজ এক মহাদুর্যোগকাল অতিক্রম করছে। মানুষের জীবন ও অর্থনীতির এ মহাসংকট থেকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজন ছিল প্রথাগত গতানুগতিক বাজেট কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে একটি ‘বিশেষ করোনা বাজেট’ ঘোষণা করা। তা না করে অর্থমন্ত্রী গতকাল (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার একটি গতানুগতিক অবাস্তবায়নযোগ্য বাজেট ঘোষণা করেছেন। এ বাজেট জাতিকে হতাশ করেছে।”

এ বাজেট জনবান্ধব হয়নি- এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের কাছ থেকে অবশ্য এর বেশি কিছু আশা করেও লাভ নেই। কারণ জনগণের কাছে এদের কোনো জবাবদিহিতা নেই।

বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, “এই বাজেটে করোনা কাটিয়ে একটি টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নেই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে প্রত্যাশিত অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। বাজেটে বর্তমানে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কার্যকর সুশাসন, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বস্তরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প প্রস্তাব নেই।”

তিনি বলেন, “জাতি আশা করেছিল, এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে অর্থমন্ত্রী স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের জন্য চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৩ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন। করোনা মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হলেও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হলো জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৩ শতাংশ। অথচ স্বাস্থ্য খাতে আমরা জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করেছিলাম।”

বরাদ্দ করা অর্থের দুর্নীতিমুক্ত ব্যবহারের বিষয়ে বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা নেই দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যেসব প্রকল্প নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে, সেসব প্রকল্পগুলোকেই বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে দেখানো হয়েছে। পরিবহন খাত, বিদ্যুৎ খাতসহ অনেক খাতে বেশি পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা এ মুহূর্তে প্রয়োজন ছিল না।’

তিনি বলেন, “সরকারি ভাষ্যমতে, বর্তমানে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ২০ হাজার ২৭৯ মেগাওয়াট। তাই এ অসময় তোড়জোড় করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দের কোনো দরকার ছিল না। ১২০০ মেগাওয়াট রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকায় দেশের সবচেয়ে একক ব্যয়বহুল চাপযুক্ত জল-চুক্তি প্রকল্প, যা রাশিয়ান এক কোম্পানি বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কিছু সময়ের জন্য পিছিয়ে দিয়ে ওই অর্থ স্বাস্থ্যসহ কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করা যেত। তা করা হয়নি, কারণ রূপপুর কেন্দ্রের দুর্নীতির সুযোগ বন্ধ করতে চায়নি সরকার।”

বাজেটে কেবল ‘সংখ্যা’র হিসাব মেলানো হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরকেই আয় করতে হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা বাস্তবতা বিবর্জিত। এনবিআর এ অর্থ আহরণ করতে ব্যর্থ হবে এবং তাতে বাজেট ঘাটতির পরিমাণও বেড়ে যাবে। ব্যাংকগুলোর পক্ষে প্রস্তাবিত ৮৫ হাজার কোটি টাকা জোগান দেওয়া সম্ভব হবে না।”

তিনি বলেন, “অর্থমন্ত্রী এ বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করেছেন ৮ দশমিক ২ শতাংশ। আমদানি, রফতানি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি আলোচনা করলেই স্পষ্ট যে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত। অর্থমন্ত্রী বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলেছেন। অথচ প্রতিটি দেশই করোনা আক্রান্ত হয়ে মন্দাকবলিত। তাছাড়া কর্মহীন প্রবাসীদের দেশে পুনর্বাসন ও আত্মনির্ভরশীল করে তোলার কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই এ বাজেটে। বাজেটে পোশাক খাতের অস্থিরতা কাটানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই।”

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

ট্যাগ