স্বামীর কৃষি জমিরও ভাগ পাবে হিন্দু বিধবা নারী: হাইকোর্টের রায়
(last modified Thu, 03 Sep 2020 12:50:54 GMT )
সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২০ ১৮:৫০ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের হিন্দু বিধবা নারীর স্বামীর সব সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার নিশ্চিত করে রায় প্রদান করেছে হাইকোর্ট।

এ সংক্রান্ত একটি মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করে। বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী মামলার পর্যবেক্ষণে বলেন, হিন্দু বিধবা নারী অকৃষিজমির মতো স্বামীর কৃষিজমিরও ভাগ পাবেন।

বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। নারী নীতিতেও বলা হয়েছে সমান অধিকারের কথা। কিন্তু সম্পত্তিতে এ দেশের হিন্দু নারীর উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠা পায়নি এতকাল। গতকালের এ রায়ের ফলে হিন্দু নারীদের স্বামীর সম্পত্তিতে অধিকারের স্বীকৃতি পেলেও এখনো হিন্দু মেয়েরা পিতার সম্পত্তিতে  ভাগ পায় না।

হিন্দু পরিবারের কন্যা ও স্ত্রীর সম্পত্তির অধিকারের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে  বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ রেডিও তেহরানকে বলেন, প্রচলিত আইনে হিন্দু কন্যারা পিতার সম্পত্তিতে কোন ভাগ পায় না। বিধবা স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি আমৃত্যু  ভোগ করতে পারেন; বিক্রয় করতে পারেন না। তাছাড়া, বিধবা স্ত্রীর মারা গেলে সে  সম্পত্তি ও  হিন্দু বিধবা সম্পত্তি আইন অনুযায়ী স্বামীর উত্তারাধিকারীদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়।

কাজল দেবনাথ জানান, হাইকোর্টের সর্বশেষ রায়ের ফলে নিম্ন আদালতের ভুল ব্যখ্যা থেকে রক্ষা পেয়েছে বিধবা হিন্দু নারীরা। তবে, হিন্দু উত্তারধিকার আইন ভারতে সংশোধন করা হলেও বাংলাদেশের হিন্দু নারীরা আগের মতোই বঞ্চিত থাকছে।

উল্লেখ্য, দুই যুগ আগে ১৯৯৬ সালে  খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলা নিবাসী  বিধবা  নারী গৌরী দাসীর নামে স্বামীর কৃষি জমি রেকর্ড হওয়া নিয়ে এবারের মামলাটির সূত্রপাত হয়। স্বামীর সম্পত্তি বিধবা স্ত্রীর নামে রেকর্ড হবার বিরুদ্ধে সে বছরই দেবর জ্যোতিন্দ্রনাথ মণ্ডল খুলনা বটিয়াঘাটা উপজেলা আদালতে মামলা করেন। মামলাটি পরে খুলনা কোর্টে যায় নিষ্পত্তির জন্য। বিচারিক আদালত ওই মামলার রায়ে বলেন, বিধবা নারী স্বামীর অকৃষি জমিতে অধিকার রাখলেও কৃষি জমির অধিকার রাখেন না।

খুলনার আদালতের এ রায়ের  বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন গৌরী দাসী। এরপর গত ২৪ বছর ধরে চলে এই মামলা। অবশেষে গতকাল আপিল নিষ্পত্তির মাধ্যমে তার পক্ষে রায় ঘোষণা হয়েছে। 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উজ্জ্বল ভৌমিক এই মামলার এমিকাস কিউরি হিসেবে আদালতকে  সহায়তা করেন।

আইনজীবী উজ্জ্বল ভৌমিক পরে সাংবাদিকদের জানান, ১৯৪৭ সালে ইন্ডিয়ান ফেডারেল কোর্টের এ সংক্রান্ত এক মামলার রায়ে কৃষিজমিতে অংশীদারিত্ব হারায় হিন্দু বিধবা নারীরা, যা পরবর্তীকালে ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের আইনে সংযুক্ত করা হয়। তবে হাইকোর্টের  এ  রায়ের ফলে ৮৩ বছর পর স্বামীর সম্পত্তিতে অধিকার ফিরে পেলেন  হিন্দু বিধবা নারীরা।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/৩

 

ট্যাগ