আটকের কয়েক ঘণ্টা পর ছেড়ে দেওয়া হল ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরকে
-
নুরুল হক নুর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে আটকের কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরকে ছেড়ে দিয়েছে। এক ছাত্রীর ধর্ষণের মামলার একদিন পর আজ (সোমবার) রাত সাড়ে আটটার দিকে তাকে আটক করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. ওয়ালিদ হোসেন জানান, আজ সন্ধ্যার দিকে ধর্ষণ মামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নূর ও তাঁর সহযোগীরা শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবনের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাঁরা পুলিশের কাজে বাধা দেন। পরে মৎস্য ভবন এলাকা থেকে নুরুল হক নূরসহ সাতজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। নুরের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় ধর্ষণ মামলা তো আছেই, সঙ্গে পুলিশের ওপর হামলায়ও তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তবে তার ১০টার দিকে নুরকে দেখা যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে পুলিশের হামলায় আহত পরিষদের নেতা-কর্মীরা চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
তখন জানতে চাইলে মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম জানান, “নুরকে আটকই করা হয়নি। অনুমতি ছাড়া মিছিল করায় তাকে নিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
এর আগে রোববার রাতে নুরুল হকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী লালবাগ থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। মামলার এক নম্বর আসামি ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন।
মামলার এজাহারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ এবং পরে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ার অভিযোগ আনেন। নুরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মীমাংসা করার নামে তাঁকে (ছাত্রীকে) নীলক্ষেতে ডেকে নিয়ে শাসিয়েছেন। তিনি (নুরুল) বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তাঁদের ভক্তদের দিয়ে তাঁর নামে ‘উল্টাপাল্টা’ পোস্ট করাবেন এবং ‘যৌনকর্মী’ বলে প্রচার করাবেন। তাঁদের গ্রুপের সদস্য সংখ্যা এক কোটি ২০ লাখ। এতে তাঁর সম্মানহানি হবে।
এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন—ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম, সহসভাপতি মো. নাজমুল হুদা, শিক্ষার্থী মো. আবদুল্লাহ হিল বাকী।

ধর্ষণ মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: নুর
তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে নুরুল হক নুর দাবি করেন, “ওই মেয়ের সঙ্গে আমার কোনদিন দেখাই হয়নি। দুই মাস আগে সে আমাকে ফোন দিয়ে সহযোগিতা চেয়েছে যে, কোনো এক ছেলের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল, যেটি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। সে জন্য আমাকে ভূমিকা রাখতে বলা হয়। এরপর ফোন দেবে বলে সে আর কোন যোগাযোগ রাখেনি।"
তিনি বলেন, “এক সময়ে সে ছেলেটির পরিচয় দেয় আমাকে এবং বলে আমরা যেন ছেলেটিকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করি। কিন্তু আমি খোঁজ নিয়ে জানি ছেলেটির নাম নাজমুল সে আমাদের সংগঠনের কোন দায়িত্বে নেই। তবে সে আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকত। তাই আমি মেয়েটিকে বলেছি সেতো আমাদের সংগঠনের কেউ না, পদেও নেই। এরপর মেয়েটি বলে নাজমুলসহ আরো একজনকে বহিষ্কার করতে হবে যে হচ্ছে আমাদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। কিন্তু আমি তাকে বলি সে তো আমাদের আহ্বায়ক। আমি আহ্বায়ককে কিভাবে বহিষ্কার করব। তোমার সমস্যা মনে হলে আমি আইনগত সহযোগিতা করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে অভিযোগে সহযোগিতা করব। কিন্তু শেষে সে আর যোগাযোগ রাখেনি।"
নুর বলেন, "আমি মনে করি মামলাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করা। আর মেয়েটির বাড়ি ময়মনসিংহ। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন নেতা মেয়েটিকে টাকা পয়সা দিয়ে মামলা করতে সহযোগিতা করেছেন।"
নুরুল হক নুর সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ২৮ বছর বাদে ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে তিনি ভিপি নির্বাচিত হন।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।