‘কওমি মাদ্রাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য খর্ব করতে চাইলে আলেমসমাজ তা মেনে নেবে না’
সরকারের নিয়ন্ত্রণে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রম উন্নয়নের বিধান রেখে ‘শিক্ষা আইন ২০২১’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চূড়ান্ত খসড়াটি শিগগিরই ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
গতকাল (মঙ্গলবার) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল বৈঠকে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও যুক্ত ছিলেন। এছাড়া, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে যুক্ত হন।
‘শিক্ষা আইন ২০২১’-এর খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকার কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রমের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। কওমি মাদ্রাসাগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে রেখেই শিক্ষা কার্যক্রম উন্নয়ন করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ‘জাতীয় তাফসীর পরিষদ, বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম রেডিও তেহরানকে বলেন, কওমি মাদ্রাসা জনগণের অর্থায়নে তাদের সহযোগিতায় এতদিন পরিচালিত হয়ে আসছে। এখন সরকার এখানে মানোন্নয়নের নামে বা আর্থিক সহায়তার নামে নিয়ন্ত্রণ কায়েম বা এ শিক্ষা ব্যবস্থার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য খর্ব করতে চাইলে কওমি আলেমসমাজ তা মেনে নেবে না।
এ প্রসঙ্গে, রাজধানীর একটি মসজিদের ইমাম মোঃ রেদোয়ানুল ইসলাম রেডিও তেহরান বলেন, কওমি মাদ্রাসার জন্য সরকারি আর্থিক অনুদান বরাদ্দ দিলে তা অবশ্যই প্রশংসনীয় কাজ হবে। তবে সিলেবাস বা কোর্স- কারিকুলাম ও পরিচালনা পদ্ধতি নিয়ে সিধান্ত নেবার আগে সংশ্লিষ্ট আলেম ওলামাদের সাথে আলোচনা করে নিলে বিষয়টি নিয়ে অহেতুক বিতর্ক বা ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকবে না।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো কওমি মাদ্রাসা বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ করে। সরকারি সে পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লক্ষ। তবে বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এর সংখ্যা ২০ হাজারের চেয়েও বেশি।
বাংলাদেশে ছয়টি পৃথক আঞ্চলিক বোর্ডের মাধ্যমে কওমি মাদ্রাসাগুলো পরিচালিত হয়। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার প্রাক্-প্রাথমিক স্তর শুরু হয় শিশুর চার-পাঁচ বছর বয়স থেকে। সর্বোচ্চ স্তর হলো দাওরায়ে-ই হাদিস। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রদত্ত এ ডিগ্রিকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমমান হিসেবে গণ্য করা হয়।
মূলত স্থানীয় সাহায্য, অনুদান ও শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর নির্ভর করে পরিচালিত এ মাদ্রাসা সমূহ পরিচালিত হয়ে আসছে। দারুল উলুম দেওবন্দের রীতিনীতি অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সরকারি কোনো সহায়তা গ্রহণ করে না এসব মাদ্রাসা।
সাধারণত এসব মাদ্রাসার অনুদানের সবচেয়ে বড় অংশটি আসে রমজান মাসে মুসলমানদের দান হিসেবে। কিন্তু বিগত রমজানে করোনাজনিত লকডাউনের ফলে বেশিরভাগ মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় মাদ্রাসাগুলোরও আয় কমেছে, ফলে সেগুলো আর্থিক সংকটে পড়ছে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।