উত্তরাখণ্ডে মাদ্রাসা উচ্ছেদ করাকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় নিহত ২, কারফিউ জারি
ভারতের বিজেপিশাসিত উত্তরাখণ্ডের হলদোয়ানিতে একটি মাদ্রাসা উচ্ছেদ করাকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় কমপক্ষে দুইজন নিহত হয়েছে।নিহতদের পরিচয় এখনও প্রকাশ করেনি পুলিশ প্রশাসন। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলছেন, মাদ্রাসাটি 'বেআইনিভাবে' নির্মিত হয়েছিল।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে মাদ্রাসাটি উচ্ছেদ করতে গিয়েছিলেন পৌরসভার কর্মী ও পুলিশ সদস্যরা। এরপর স্থানীয় মানুষজন তীব্র বিক্ষোভ শুরু করে। সন্ধ্যায় সেখানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত জনতা পুলিশ ও পৌর কর্পোরেশনের কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। ওই ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং দাঙ্গাবাজদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।
আজ উত্তরাখণ্ড পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) এপি অংশুমান বলেন, হামলায় কমপক্ষে ১০০ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। হলদোয়ানির বিভিন্ন এলাকায় গতকাল থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছিল। আজ শুক্রবারও তা বহাল রয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল বিকেলে বানভুলপুরা এলাকায় কথিত 'বেআইনিভাবে' নির্মিত একটি মাদ্রাসা ভাঙতে যায় পুলিশ ও প্রশাসনের একটি দল। এ সময়ে আচমকা তাদের লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ শুরু করে একদল উত্তেজিত জনতা। হামলায় আহত হন বহু পুলিশ কর্মী। এর পাশাপাশি থানার বাইরে গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
ওই ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বলেছেন, আদালতের নির্দেশে দখল সরানো হয়েছে। যারা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নৈনিতালের জেলা প্রশাসক বন্দনা সিং বলেছেন, দখল উচ্ছেদের আগেই উচ্ছেদকারী টিমের ওপর হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। জনতা প্রথমে পাথর নিক্ষেপ করে, যা বাহিনী ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর আরেকটি দল এসে পেট্রোল বোমা নিয়ে হামলা চালায়। তিনি বলেন, সহিংসতায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। হলদোয়ানিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে, যা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। হিংস্র জনতা কিছু যানবাহন পুড়িয়ে দিয়েছে, যার বেশিরভাগই দু’চাকার গাড়ি। তাদের সংখ্যা সম্পর্কে এখনই স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
জেলা প্রশাসক বন্দনা সিং আরও বলেন, গত ১৫/২০ দিন ধরে হলদোয়ানির বিভিন্ন এলাকায় পৌরসভার জমি থেকে জবরদখল সরানোর জন্য অভিযান চালানো হচ্ছিল। এ বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশও আছে। একটি ফাঁকা জমির ওপরে দুটি কাঠামো নির্মিত হয়েছে। এগুলো কোনও ধর্মীয় কাঠামো হিসেবে স্বীকৃত নয়। কেউ কেউ এটিকে মাদ্রাসা বলেন, আবার কেউ কেউ বলেন এখানে একসময়ে নামাজ পড়া হতো। কিন্তু কোনও নথিপত্রে এগুলোর আইনগত অস্তিত্ব নেই। অন্যদিকে, মিউনিসিপ্যাল কমিশনার পঙ্কজ উপাধ্যায় বলেছেন– মাদ্রাসা ও নামাজের জায়গা সম্পূর্ণ বেআইনি। তিন একর জমি থেকে দখল উচ্ছেদ করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফোনে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, বনভুলপুরার অশান্ত এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে দাঙ্গাকারীদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমএআর/৯