আল-জাজিরার প্রধান সম্পাদকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন ফেরত
-
মোস্তফা স্যোয়াগ, ডেভিড বার্গম্যান, তাসনিম খলিল ও জুলকারনাইন সামি
কাতারভিত্তিক নিউজ চ্যানেল আল-জাজিরায় প্রচারিত 'অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন' শিরোনামে প্রতিবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চার জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আবেদন শুনানি শেষে তা ফেরত দিয়েছে আদালত।
আজ (মঙ্গলবার) ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন। বিচারক আদেশে বলেন, 'নথি পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, মামলাটি দায়ের করার ক্ষেত্রে নালিশকারীকে সরকার কর্তৃক কোনো ধরনের অথরটি প্রদান করা হয়নি। তাই মামলাটি উক্ত নালিশকারী বরাবর ফেরত দেয়া হলো।'
এ মামলার আবেদনে যাদেরকে আসামি করা হয়েছিল তারা হলেন- ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, সুইডেনপ্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল, হাঙ্গেরিপ্রবাসী বাংলাদেশি জুলকারনাইন সামি এবং আল জাজিরার ডিরেক্টর জেনারেল ও প্রধান সম্পাদক মোস্তফা স্যোয়াগ।
এ বিষয়ে মামলার আবেদনকারী বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি মশিউর মালেক জানান, 'আদালত বলেছে যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়েরের জন্য সরকারের অনুমোদন থাকার দরকার হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন না থাকার কারণে আবেদনটি বাতিল করার কথা জানানো হয়।'
মশিউর মালেক আরও জানান, তিনি মামলাটি করার বিষয়ে অনুমোদন নিতে সরকারের সাথে যোগাযোগ করবেন। সরকার অনুমোদন দিলে তিনি সেটি নিয়ে মামলাটি আবার দায়েরের আবেদন করবেন। আর যদি অনুমোদন না দেয় তাহলে তিনি আর আবেদন করবেন না।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন বলেন, 'আদালত বলেছেন যে, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে কোন মামলা করতে হলে সরাসরি সরকার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করতে হয়। সেকারণেই মামলার আবেদনটি আদালত আমলে না নিয়ে বাদী বরাবর ফেরত দিয়েছে। আদালত জানিয়েছে যে, বাদী সরকারি কোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়েই মামলার আবেদন করেছেন।
তবে বাদী যদি অনুমোদন নিয়ে আবার নতুনভাবে মামলাটি দায়ের করতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে কোন বাধা থাকবে না বলেও জানান তিনি।

এরআগে ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাটির আবেদন করেন মশিউর মালেক। আবেদনে তিনি অভিযোগ এনেছিলেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান এবং তার ভাইদের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন আল জাজিরায় প্রচার করে রাষ্ট্র এবং সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
মামলার এজহারে বলা হয়েছে, 'আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে একই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সুনাম হানি করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধে লিপ্ত আছে। তারা যৌথভাবে তাদের অজ্ঞাতনামা সহযোগীদের নিয়ে ভুয়া মিথ্যা তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন তৈরি করে গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে 'অল দি প্রাইম মিনিস্টার্স মেন' শিরোনামে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী প্রতিবেদনটি প্রচার করে এবং ওই প্রতিবেদন ইউটিউবেও ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়, যা পরেরদিন বিভিন্ন মুদ্রিত ও অনলাইন পত্রিকাসমূহে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে।'
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, 'আসামিরা ওই প্রতিবেদনে কোনো সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট বক্তব্য না দিয়ে এবং তথ্য উপাত্ত বা দলিলাদি উপস্থাপন না করেই ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কেবল কিছু ব্যক্তিগত পারিবারিক অনুষ্ঠানাদি ও সাক্ষাৎকারের ছবি ব্যবহার করে কণ্ঠস্বর সম্পাদনা করে একটি কাল্পনিক ভুয়া, মিথ্যা ও সাজানো কল্পিত তথ্যচিত্রের প্রতিবেদন তৈরি করে তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে আল জাজিরা টেলিভিশনসহ ইউটিউবের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে অপপ্রচার করেছে। যা দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের সরকার ও রাষ্ট্রের সুনাম ও মর্যাদার হানি ঘটিয়েছে। এ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আসামিরা বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ১২৪/১২৪(এ)/১০৯/৩৪ ধারায় অপরাধ করেছে।'
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।