বাংলাদেশে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রেখে নতুন অর্থবছরের বাজেট পাশ: বিশ্লেষক প্রতিক্রিয়া
(last modified Wed, 30 Jun 2021 12:46:50 GMT )
জুন ৩০, ২০২১ ১৮:৪৬ Asia/Dhaka

বাংলাদেশে ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রেখে নতুন অর্থবছরের বাজেট পাশ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অত্যন্ত চাতুর্যের সাথে পাস করা হয়েছে ২০২১ সালের অর্থবিল।

এর মাধ্যমে অপ্রদর্শিত আয় বা অজ্ঞাত উৎস থেকে প্রাপ্ত কালোটাকা নগদ হিসেবে ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারবাজার, ফ্ল্যাট-জমিতে বিনিয়োগ করার সুযোগ আরও এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। কালোটাকার মালিকদের এ সুবিধা দিতে গিয়ে আয়কর অধ্যাদেশে একাধিক ধারাও সংযুক্ত করা হয়েছে। আগামী ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত এ সুযোগ পাওয়া যাবে। এ সময় ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকায় নতুন শিল্পকারখানা করা যাবে।

এ ছাড়া, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে ১০ শতাংশ কর দিয়ে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কালোটাকা সাদা করার বিদ্যমান সুযোগটিও অব্যাহত আছে। এভাবে কালোটাকা সাদা করা  হলে  জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ছাড়া অন্য কোনো সংস্থাও প্রশ্ন করবে না।

জাতির সাথে প্রতারণা: সাইফুল হক

এর আগে ৩ জুন বাজেট ঘোষণার সময় ঢালাওভাবে  কালোটাকা  সাদা করার কথা বলা হয়নি। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার অর্থবিল পাসের সময় দেখা গেল  ফ্ল্যাট, জমি, শেয়ারবাজার, নগদ টাকা, ব্যাংকে রাখা টাকা, সঞ্চয়পত্র-এসব খাতে কালোটাকা সাদা করার সুযোগটি অব্যাহত রেখে সংশোধনী আনা হয়েছে। ফলে সংসদে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ হলো না। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদেরা। আবার ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় সৎ করদাতাদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।

এ প্রসঙ্গে বিপ্লবী ওয়র্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক  অর্থনীতির ছাত্র কমরেড সাইফুল হক রেডিও তেহরানকে বলেন, এটা জাতির সাথে প্রতারণা। যেখানে ব্যাবসায়ীরা নিজে থেকে এরকম কোনো ঢালাও সুযোগ চায়নি, সেখানে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে ক্ষমতার ছত্রছায়ায় লালিত-পালিত  দুর্নীতীবাজ, লুটেরাদের অবৈধ অর্থ পাচারের অন্যায় সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। সাইফুল হক আরও বলেন, এর ফলে সৎ ব্যাবসায়ী এবং  সৎ করদাতাগণ কর দিতে নিরুৎসাহিত হবে।

এফবিসিসিআই; অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চাইনি

এদিকে, ব্যবসায়ীরাও কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগের বিরোধী। ব্যাবসায়িদের শীর্ষ সংগঠন  এফবিসিসিআই- এর সভাপতি জসিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা এফবিসিসিআই থেকে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চাইনি। তারপরও যদি সুযোগ দিতে হয় , তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেওয়া যেতে পারে।  প্রতিবছর সুযোগ দেওয়া হলে সৎ ব্যবসায়ীদের মনোবল ভেঙে যাবে।’

শেষ মুহূর্তে অর্থবিলে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ঢালাও কালোটাকা সাদা করার সুযোগটি কেন বাজেট ঘোষণার সময় অর্থবিলে ঢোকানো হলো না। অর্থবিলে থাকলে এটি নিয়ে সংসদে আলোচনা হতো। কিন্তু এ নিয়ে সংসদে আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এটি ইঙ্গিত দেয়, বিশেষ মহলের কার্যসিদ্ধির জন্য অগণতান্ত্রিক উপায়ে এটি করা হয়েছে। প্রতিবছরে এভবে কালোটাকা সাদা করার বারবার সুযোগ দেওয়ার ফলে  অবৈধ উপার্জণকারী  অপরাধীদের শাস্তি  না দিয়ে বরং গলায় ফুলের মালা দেওয়া হয়েছে -এমনটি মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘কালোটাকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি অসাংবিধানিক। এ ধরনের সুযোগের মাধ্যমে সৎ করদাতাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। সরকারও নৈতিকতার পরিচয় দিচ্ছে না। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সংবিধানের ২০(২) ধারায় উল্লেখ আছে, ‘রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করিবেন, যেখানে সাধারণ নীতি হিসাবে কোনো ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ করিতে সমর্থ হইবেন না ।

সংবিধানের বর্ণিত “অনুপার্জিত” আয় মানেই কালোটাকা, যেটাকে শুধু ১০ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করার ব্যবস্থা চালু রেখে সরকারের নীতিপ্রণেতারা সংবিধান লঙ্ঘনের গুরুতর অন্যায় করে চলেছেন বলে  মনে করছেন বিশ্লেষকগণ। # 

পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/বাবুল আখতার /৩০

 

 

 

 

 

 

 

ট্যাগ