জুলাই ১৫, ২০২১ ১৭:০৫ Asia/Dhaka
  • বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে গাজীপুরে পোশাক কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ

বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে গাজীপুরের একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা গত এক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করে  চলছেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড নামের একটি তৈরি পোশাক কারখানা শ্রমিকেরা আজকেও  (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টার দিকে বিক্ষোভ শুরু করেছে।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা কারখানার সামনে জয়দেবপুর-ঢাকা সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে রাখে।  এর ফলে সড়কের  দুই দিকেই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও মহানগর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।শ্রমিকদের অভিযোগ, কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনো মাসেই সঠিক সময়ে বেতন–ভাতা দেয় না। প্রতি মাসেই আন্দোলন করে টাকা আদায় করতে হয়। মাসের অর্ধেক সময় হয়ে গেলেও বেতন পাননি তাঁরা। ঘর ভাড়া, দোকানের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করতে পারছেন না।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার জাকির হাসান বলেন, কারখানার মালিকের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের পাওনা আদায়ের  বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

আন্দোলনরত পোশাককর্মীরা জানান, গাজীপুর মহানগরীর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআরআরআই-ব্রি) সামনে লক্ষ্মীপুরা এলাকার স্টাইল ক্রাফট পোশাক কারখানায় প্রায় সাড়ে ৭০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক রয়েছে। কারখানার শ্রমিক কর্মচারীদের  চলতি বছরের মার্চ, মে ও জুন মাসসহ গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের পূর্ণ বেতন-ভাতা, ২০২০ সালের মার্চ ও আগস্ট মাসের ৫০ শতাংশ, অক্টোবর মাসের ৩৫ শতাংশ, নভেম্বর মাসের ১৫ শতাংশ এবং ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের পুরো বেতন-ভাতা বকেয়া পড়েছে। 

এ ছাড়া কারখানার কর্মীরা ইনক্রিমেন্টসহ তাদের চার বছরের বাৎসরিক ছুটির ও দুই বছরের ঈদ বোনাসের টাকা পাওনা রয়েছেন। তারা বেশ কিছুদিন ধরে এসব পাওনা পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ একাধিকবার পাওনা পরিশোধের তারিখ ঘোষণা করলেও তা পরিশোধ করেনি।

সর্বশেষ মালিকপক্ষ আশ্বাস দেয়, কর্মীদের গত মার্চ মাসের বকেয়া বেতন ৭ জুলাই এবং মে ও জুন মাসের বকেয়া বেতন ১৫ জুলাই ও ঈদবোনাস ১৮ জুলাই পরিশোধ করা হবে। কিন্তু মালিকপক্ষ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৭ জুলাই পাওনা পরিশোধ না করে ১৫ জুলাই তিন মাসের বকেয়া পাওনা একত্রে পরিশোধের ঘোষণা দেয়। এতে কর্মীদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।

স্টাইল ক্রাফটের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে গত ৬ জুলাই থেকে লাগাতার কর্মবিরতি করে আসছেন। এর দুদিন পর গত ৮ জুলাই তারা সড়ক অবরোধ করেন। সেসময় কর্মীদের আন্দোলনের মুখে তাদের এক মাসের বেতন-ভাতা গতকাল মঙ্গলবার এবং অপর দুই মাসের পাওনাদি আজ ১৫ জুলাই পরিশোধের তারিখ দেন। সর্বশেষ ঘোষণানুযায়ী, কর্মীরা বেতন-ভাতার জন্য গতকাল মঙ্গলবার সকালে কারখানার গেইটে অবস্থান নেন।

কিন্তু এদিনও পাওনাদি পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করেন মালিকপক্ষ। এতে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ সময় তারা প্রতিশ্রতি অনুযায়ী পাওনাদি পরিশোধের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এর আগে, গতকাল ( ১৪ জুলাই) গতকাল শ্রম ভবনে মালিক, শর মকিক ও সরকার এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধের যে সিদ্ধান্ত হয়।  

তবে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস আগামীকাল ১৬ তারিখের মধ্যে পরিশোধের দাবি জানিয়েছে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি।

সংগঠনটির প্রধান তাসলিমা আখতার এবং সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবু এক বিবৃতিতে বলেন, ১৯ জুলাই বেতন-বোনাস পরিশোধে সিদ্ধান্ত অমানবিক এবং শ্রমিকদের সঙ্গে পরিহাসের শামিল। শেষ মুহূর্তে বোনাস পেয়ে শ্রমিকরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনারও সময় পাবেন না।

পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে কাজ করা সব সংগঠনকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক না ডেকে সরকার এবং মালিকদের পছন্দের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে শ্রমিকের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে আরও বলেন, ঈদের পরে ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকার লকডাউনে সকল কলকারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। গত বছর থেকে আমরা দেখেছি উৎপাদন বন্ধ থাকায় কারখানা লে-অফ ঘোষণা, শ্রমিকদের ৬৫ ভাগ বেতন দেওয়া এবং বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

কারখানা বন্ধ থাকলে মালিক-সরকার-বায়ার মিলে শ্রমিকদের দায়িত্ব নেওয়ার দাবি জানিয়ে শ্রমিক নেতারা বলেন, প্রয়োজনের সময় বাড়তি শ্রমিক নিয়োগ না দিয়ে অল্প শ্রমিকদের ওপর বাড়তি কাজের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হবে, আর ঈদের ছুটির সঙ্গে এক সপ্তাহ ছুটি বর্ধিত হলে তাদের দায়িত্ব নেওয়া যাবে না-এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

 

ট্যাগ