বাংলাদেশে টেলিফোনে আড়িপাতা ও ফোনালাপ ফাঁস হওয়া ঘটনায় হাইকোর্টে রিট
(last modified Tue, 10 Aug 2021 10:04:33 GMT )
আগস্ট ১০, ২০২১ ১৬:০৪ Asia/Dhaka
  • বাংলাদেশে টেলিফোনে আড়িপাতা ও ফোনালাপ ফাঁস হওয়া ঘটনায় হাইকোর্টে রিট

বাংলাদেশে টেলিফোনে আড়িপাতা প্রতিরোধ ও ফাঁস হওয়া ফোনালাপের ঘটনায় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন  আইনজীবী।

এর আগে  এ দশজন ১০ আইনজীবী  ফোনালাপে আড়ি পাতা প্রতিরোধে আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) গৃহীত পদক্ষেপ জানতে চেয়ে গত ২২ জুন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবরে আইনি নোটিশ পাঠান। নোটিশের জবাব না পেয়ে ওই ১০ আইনজীবীর পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আজ মঙ্গলবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দাখিল করেন।

রিটে ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২০টি আড়ি পাতার ঘটনা উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ফোনালাপ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফোনালাপ, প্রয়াত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মওদুদ আহমদ ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসানের ফোনালাপ, ভিকারুননিসা নূন কলেজের অধ্যক্ষের ফোনালাপ, মামুনুল হকের ফোনালাপ, যশোর-৬ আসনের সাংসদ শাহীন চাকলাদারের ফোনালাপ, ফরিদপুর-৪ আসনের সাংসদ মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের ফোনালাপ, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকের ফোনালাপসহ ২০টি ঘটনা রিটে উল্লেখ করা হয়েছে।

রিটে বলা হয়, সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে চিঠিপত্র ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা সংরক্ষণ নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।এ অধিকার সংবিধান কর্তৃক নিশ্চিত করা হয়েছে। অর্থাৎ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে উল্লেখিত মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা সংরক্ষণ অন্যতম।

এদিকে, ২০০১ সালের ১৬ এপ্রিল প্রণীত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন আইনের ৩০ (চ) ধারা অনুসারে টেলিযোগাযোগের একান্ততা রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা কমিশনের দায়িত্ব। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭১ ধারা অনুযায়ী আড়ি পাতা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ অপরাধে দোষী ব্যক্তি দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা অনধিক পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এ ধরনের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা অহরহ ঘটছে। অথচ কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কারও বিরুদ্ধে এরকম  কোন মামলা রুজু  করেনি।

রিটে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চের দেওয়া রায়ে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ এসেছে। রায়ে বলা হয়, এ ক্ষেত্রে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ও সেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব সর্বাধিক। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণ তাদের দায়িত্ব। তারা আইনের বিধান ব্যতিরেকে ব্যক্তিগত যোগাযোগের তথ্য প্রদান করতে পারে না।

রিটের আর্জিতে  টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩০ (১) (চ) ধারা এবং সংবিধানের ৩৯ ও ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে।

একইসাথে আবেদনটি  বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কমিটি গঠন করে ফাঁস হওয়া ব্যক্তিগত ফোনালাপের উল্লিখিত ঘটনাগুলো তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। আবেদনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

রিট আবেদনকারী ১০ আইনজীবী হলেন মোস্তাফিজুর রহমান, রেজওয়ানা ফেরদৌস, উত্তম কুমার বনিক, শাহ নাবিলা কাশফী, ফরহাদ আহমেদ সিদ্দিকী, মোহাম্মদ নওয়াব আলী, মোহাম্মদ ইবরাহিম খলিল, জি এম মুজাহিদুর রহমান, ইমরুল কায়েস ও একরামুল কবির।

অধ্যক্ষের মুখে এমন ভাষা অপ্রত্যাশিত:  হাইকোর্ট

এদিকে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার ফোনালাপ প্রসঙ্গে দায়ের হওয়া ভিন্ন একটি রীট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মন্তব্য করেছেন, অধ্যক্ষ কাম্রুন নাহার ফোনে যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা সত্যি হলে, অবশ্যই তা নিন্দনীয়। এটা অপ্রত্যাশিত। আজ মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন  মন্তব্য করেন।

একইসঙ্গে, ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ কামরুন নাহার এবং অভিভাবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে আদালতে জমা দিতে বলেছেন হাইকোর্ট। ওই তদন্ত রিপোর্ট দেখে আগামী ১ সেপ্টেম্বর আদালত পরবর্তী আদেশ দেবেন। এর আগে গত রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক মোহাম্মদ মোরশেদ আলমের পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া ।

পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/১০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

ট্যাগ