তিস্তা অববাহিকায় আরেক দফা প্লাবন, পদ্মায় তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচল বন্ধ
(last modified Fri, 20 Aug 2021 09:58:12 GMT )
আগস্ট ২০, ২০২১ ১৫:৫৮ Asia/Dhaka
  • তিস্তার পানিতে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত
    তিস্তার পানিতে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত

গত কয়েকদিনের ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলের চাপ সামলাতে  ভারত তিস্তার উজানে গজলডোবা ব্যারেজের সব ক’টি গেট খুলে দেয়ায় প্রচণ্ড গতিতে পানি নেমে আসছে বাংলাদেশের দিকে আসছে।

আজ (শুক্রবার) সকালে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তিস্তা ব্যারেজের গেট খুলে দিয়ে পানির চাপ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা প্রিন্স বলেন, ‘ভারতের শিলিগুড়ি, কালিম্পক, সিকিম ও দার্জিলিংয়ে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে অতিরিক্ত পানিপ্রবাহ বেড়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে পানিপ্রবাহ অতিরিক্ত থাকায় লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার ৫০টির অধিক চর ও পাঁচটি উপজেলার চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পাটগ্রামের দহগ্রাম, গড্ডিমারি, সির্ন্দুনা, চর সিন্দুর্না, হলদীবাড়ি, ডাউয়াবাড়ি, ভোটমারি, মহিষখোচা, গোকুণ্ডা, রাজপুর, কুলাঘাট, মোগলহাট এলাকার কয়েকশ পরিবার চরম দুর্ভোগে দিন পার করছে।

তিস্তা ব্যারেজের স্বাভাবিক প্রবাহ ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। কিন্তু শুক্রবার সকালে তিস্তা পানির প্রবাহ রেকর্ড করা  ৫২ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। আগেদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিস্তায় পানির প্রবাহ ছিল ৫২ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার।

এ ছাড়া , নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা উপজেলা তিস্তা অবববাহিকার চরের গ্রামগুলো বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ডিমলার কিছামত ছাতনাই, ঝাড় শিঙ্গেশ্বর, চর খড়িবাড়ি, পূর্ব খড়িবাড়ি, পশ্চিম খড়িবাড়ি, তিস্তা বাজার, তেলির বাজার, বাইশ পুকুর, ঝুনাগাছ চাঁপানীর ছাতুনামা কেল্লাপাড়া, ভেন্ডাবাড়ি, জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী এলাকার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে।

গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে

ফুঁসছে পদ্মা

ভাদ্রের শুরুতেই ফুলে-ফেঁপে উঠেছে পদ্মা। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মা নদীতে হু হু করে পানি বাড়ছে।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানিয়েছে, হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পয়েন্টে আজ শুক্রবার সকাল ৬টায় পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার আট সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এরপর পাঁচ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পায়। আগামী কয়েক দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

 প্রতিদিনই প্রায় সাত থেকে আট সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। ঈশ্বরদী উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়ন আড়ামবাড়িয়া ও গোপালপুর নদীর তীরবর্তী এলাকায় ইতোমধ্যে বাঁধের ওপর দিয়ে পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী পরিচালক মোশারফ হোসেন জানান, এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার মতও সময় আসেনি। কারণ আগামী অক্টোবর পর্যন্ত পদ্মা নদীতে পানি বাড়তে থাকবে।

পদ্মা নদীতে দ্রুত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার দুই ইউনিয়নের ৩৭টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামের মধ্যে ১৭টি গ্রাম ও চিলমারী ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম বন্যাকবলিত হওয়ায় গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। 

গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের দুই ইউনিয়নের ৩৭টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে রয়েছে ওইসকল গ্রামের অর্ধলক্ষ মানুষ। বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে আমন ধান, পাটক্ষেত, মরিচক্ষেত, কলাবাগান ও পানবরজসহ বিভিন্ন ধরণের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও পশু খাদ্যের সংকট। খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ায় তারা সাহায্য ও সহযোগিতার দাবিও করেছেন।

আজ (শুক্রবার) সকালে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা পানিবন্দি গ্রামগুলো ঘুরে দেখেন। বন্যাবকবলিতদের ত্রাণ সহায়তার বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, চরাঞ্চলের রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের ত্রাণ সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসক স্যার এক মেট্রিক টন চাল ও নগদ তিন লক্ষ টাকা বন্যার্তদের জন্য বরাদ্দ করেছেন। সেগুলো যতদ্রুত সম্ভব বন্যার্তদের মাঝে পৌঁছে দেওয়া হবে।

তীব্র স্রোতে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরি চলাচল বন্ধ

পদ্মায় তীব্র স্রোত ও পানি বৃদ্ধির কারণে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়ায় ফেরি বন্ধ রয়েছে। এদিকে, দুই দিনের ছুটিতে ফেরির সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায়। এতে দুটি ফেরি  ঘাটে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক হাজার যাত্রী।

বিআইডাব্লিউটিসি সূত্র জানায়, সকাল ৭টার দিকে ঘাট থেকে চার কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি সামলাতে জরুরি যানবাহন ও যাত্রীবাহী পরিবহনকে অগ্রাধিকার দিতে হয়। ফলে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট।

ওদিকে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ছোট-বড় ১৮টি ফেরি চলাচল করছে। এ ছাড়া একটি ফেরি বিকল রয়েছে, যা যানবাহন পারাপারের ক্ষেত্রে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২০ 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

 

ট্যাগ