বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা: ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও অপরাধীদের শাস্তি দাবি বিভিন্ন মহলের
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে রাজপথে আজ শনিবার সকালে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে এক সমাবেশ আয়োজন করেছেন শিল্পী-কলাকুশলীরা। নাটক, মঞ্চ, সংগীতসহ সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা।
সমাবশে অভিনেতা তারিক আনাম খান বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি যুক্ত ছিলাম। এমন ঘটনা দেখে ব্যক্তি হিসেবে আমার খুব কষ্ট হয়। প্রতিবাদ যেভাবে হওয়া উচিৎ ছিল, সেভাবে হচ্ছে না একেবারেই। রাজনৈতিক দলগুলো খুব নিভু নিভু জায়গা থেকে করছে। ভোটের রাজনীতি, ক্ষমতার রাজনীতি থেকে সরে এসে উন্নত সমাজ তৈরি করতে না পারলে আমরা কেউই নিরাপদ না।।
এদিকে, স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আজ রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘সম্প্রতি যে ধরনের উসকানি আসছিল, যেভাবে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিল একটা ভায়োলেন্সের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল সেটাও কিন্তু আমাদের জনগণ ও পুলিশ এক হয়ে প্রতিরোধ করেছে। আমরা সেই জায়গা থেকে নিস্তার পেয়েছি। এক কথায় বড় ধরনের ঘটনা ঘটে যেতে পারতো।
এর আগে গতকাল চট্টগ্রামে এক এক আন্তধর্মীয় সংলাপ অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখে অপকর্মের পাঁয়তারা করেছে যে, তার পেছনে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির হাত রয়েছে । ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য দেন।
ওদিকে, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনা বাংলাদেশকে বারুদের স্তূপে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আমরা বারুদের স্তূপে দাঁড়িয়ে আছি। একটি দেশলাইয়ের কাঠি ফেলে দিলেই সব ধ্বংস হওয়ার মুখে। আমাদের রাজনীতির স্বার্থপরতার কারণে বাংলাদেশ ও এই জাতি মহাবিপদে আছে। ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতার মানসিকতা ক্রমান্বয়ে জোরদার হচ্ছে। আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তা থেকে পরিত্রাণ পেতে এখন জেগে ওঠার ঘণ্টাধ্বনি বাজাতে হবে। আজ শনিবার সিলেটে সুজনের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় বদিউল আলম মজুমদার এসব কথা বলেন।
দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপতৎপরতার প্রসঙ্গে সুজন প্রতিনিধিরা জানান, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। এ চেতনা থেকে মুক্তিযুদ্ধে দেশটি স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে সাম্প্রদায়িক ঘটনা একের পর এক ঘটছে। কিন্তু এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া নিয়ে বড় দুই দলে দোষারূপ করার রাজনীতি চলছে। এতে পরিস্থিতি আরও অশান্ত হওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিচার হলে পুনরাবৃত্তি ঠেকানো সম্ভব হতো।
এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার এ জীবাণু নাশ করতে হবে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাগুলো যদি মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটত, তাহলে আমাদের যে ভূমিকা পালন করতে হতো, ঠিক সেই ভূমিকা এখন পালন করতে হবে। সহনশীলতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করতে হবে। রাজনৈতিক স্বার্থপরতাকে দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করতে হবে। ধর্ম থেকে রাজনীতি দূরে রাখতে হবে, ভোটের রাজনীতিতে ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। আমাদের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। কেননা এই দেশ জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার।’#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/বাবুল আখতার/৩০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।