নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে: আইনমন্ত্রী
১ ঘণ্টার অবরোধের পর শাহবাগ ছাড়লেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে এক ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। অবরোধ তুলে নেওয়ার পর ফের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
আজ (শুক্রবার) বিকেলে কয়েকশ শিক্ষার্থী ঢাবি লাইব্রেরি থেকে মিছিল নিয়ে ৫টা ২০ মিনিটে শাহবাগ মোড় এসে সড়ক আটকে দেন। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিট পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দেন। এ সময় শাহবাগ মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান করছিল।
সমাবেশ শেষে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ঢাবি শিক্ষার্থী আবু বাকের মজুমদার জানান, আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেওয়া হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আজকের কর্মসূচি অনুযায়ী, কোটা বাতিলের দাবিতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ঢাবি শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম আজকের কর্মসূচির ঘোষণা করেন।
আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটালে বরদাশত করা হবে না: ডিএমপি কমিশনার
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, 'আদালতের আদেশ মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত কোনো কার্যক্রম কেউ যদি করে তবে সেটি বরদাশত করা হবে না।'
আজ শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) আয়োজনে এবং ওয়ালটন গ্রুপের সার্বিক সহযোগিতায় আয়োজিত 'ওয়ালটন-ক্র্যাব স্পোর্টস ফেস্টিভ্যালে' তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে: আইনমন্ত্রী
কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, "জনগণের নিরাপত্তা, চলাফেরার নিরাপত্তা, কাজ করার পরিবেশ রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। এগুলি যদি হুমকিতে পড়ে তবে সরকারকে নিশ্চয়ই পদক্ষেপ নিতে হবে।"
বিবিসি বাংলায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আইনমন্ত্রী কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে আরও বলেন, "সর্বোচ্চ আদালতের আদেশপ্রাপ্তির পরে তারা যখন অনুধাবন করেছে আদালতের আদেশটা কী, তখন তারা বুঝতে পেরেছে এই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে আসছে। ২০১৮ সালে কোটা বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল। তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সকল কোটা তুলে দেয়া হলো। এরপর এটির একটি পরিপত্র জারি করা হল। বিষয়টি হাইকোর্ট ডিভিশনে রিটের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। এখানে আজকে বা সেদিন যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছিলেন তারা তাদের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য কোন পক্ষও হন নাই কোন প্রচেষ্টাও দেখা যায় নাই। আদালতের সম্মুখে যেটা ছিল সেটা আইনবিরোধী বলে ঘোষণা দিয়ে একটা রায় দিয়েছে। সরকার কিন্তু আবার আপিল বিভাগে একটা আপিলও দায়ের করেছে। সেখানেও কিন্তু যারা আন্দোলনকারী তারা পক্ষভুক্ত হন নাই।"
কোটার পাশাপাশি ভোটের জন্যও করতে হবে: আমীর খসরু
এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, "সরকার বাংলাদেশকে মেধাবী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় না। মেধাবীরা ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে সুখকর না–ও হতে পারে। তারা যেভাবে কোটার জন্য লড়াই করছে, তাদের ভোটের জন্যও লড়াই করতে হবে। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হবে।"
আজ (শুক্রবার) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। যুগপৎ আন্দোলনের ৩১ দফা ও ১ দফা ঘোষণার বর্ষপূর্তিতে এই সভার আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ।
২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের পর সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে পুরো কোটাব্যবস্থা বাতিল করে। ওই বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিট করেন। গত ৫ জুন রায় ঘোষণায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ার বাধা দূর হয়। ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলাটিতে পক্ষভুক্ত হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া এবং উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান আবেদন করেন। এরপর গত মঙ্গলবার আপিল বিভাগ সরকারি চাকরিতে কোটা বহালে হাইকোর্টের রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেন।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১২