কোটা সংস্কার আন্দোলন: টালমাটাল দেশ সংঘর্ষ,নিহত ৬
ঢাকাসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ
বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সব আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া জাহাঙ্গীর নগর ও রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালও বন্ধ ঘোষণাসহ শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা কর্মসূচির পর কফিনমিছিল শুরু করেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আজ বিকেল সোয়া চারটার দিকে শিক্ষার্থীদের মিছিল লক্ষ্য করে একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার বলেন, ভিসির বাসভবন ও আশপাশের নিরাপত্তার স্বার্থে ভিসির অনুমতিক্রমে মিছিল ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গায়েবানা জানাজা শেষে তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল শুরু করেন। সেখানে পুলিশ হামলা চালায়।
কোটা আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন
কোটা আন্দোলনে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বোরোবি) অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদের (২৪) জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার সকাল ৯টায় রংপুরে পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি। এর আগে মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে তার মরদেহ তার গ্রামে এসে পৌঁছে।
কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে সংঘাত, ঝরল প্রাণ
গতকাল মঙ্গলবার কোটাবিরোধী আন্দোলন ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে ছড়িয়েছে শহর থেকে শহরে, সড়ক থেকে মহাসড়কে; দিনভর বিক্ষোভ-পাল্টা বিক্ষোভ এক পর্যায়ে গড়িয়েছে সংঘাতে, যাতে রক্ত ঝরেছে অনেকের আর প্রাণ গেছে ছয়জনের।এমন প্রেক্ষাপটে রাতে সরকারের দিক থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা আসে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতির অবনতি এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের হল ও হোস্টেল ত্যাগে শিক্ষার্থীদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
ঢাবির সব হলের নিয়ন্ত্রণ শিক্ষার্থীদের হাতে, হল ছাড়লো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা
পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে গতকাল ছয়জন নিহত হয়েছেন। শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ক্ষুব্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কক্ষে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। হল থেকে বেরিয়ে গেছে প্রতিটি হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এরইমধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কয়েকটি হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে হল কর্তৃপক্ষ। ছাত্র রাজনীতি আর থাকবে না- এই মর্মে লেখা ভিন্ন ভিন্ন বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন হলের প্রভোস্টরা। মধ্যরাত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া শুরু হয়েছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কে হল ছাড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
১১৪ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি
শিক্ষার্থীদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা-ক্ষোভ ও বিচার দাবি
বাংলাদেশে কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত নিরীহ শিক্ষার্থীদের উপর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও বিচার চেয়েছেন দেশের ১১৪জন বিশিষ্ট নাগরিক।
সম্মিলিত এক বিবৃতি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তারা বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, গতকাল (সোমবার) এবং আজ (মঙ্গলবার) কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের উপর নির্বিচারে হামলা চালানো হয়েছে। পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন অনুসারে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর পিস্তল, রড, লাঠি, ধারালো অস্ত্র নিয়ে এই হামলা করে। তাদের এই নির্বিচার হামলা থেকে নারী শিক্ষার্থীরাও রেহাই পাননি। এই বর্বরোচিত হামলায় আমরা ক্ষুদ্ধ ও বেদনার্ত হয়েছি।আমরা এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এর জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা দেয়ার আহ্বান
এদিকে, বাংলাদেশে ছাত্রদের কোটা আন্দোলন নিয়ে সৃষ্ট পরস্থিতি সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণে অবহিত জাতিসংঘ। তারা বিষয়টি নিবিড়ভাবে এবং উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। একই সঙ্গে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারির এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁর মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক।
কোটা আন্দোলনে ষড়যন্ত্রকারীদের নাম পেয়েছি, শিগগির অভিযান: ডিবিপ্রধান
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে একটি স্বার্থান্বেষী গ্রুপ ভিন্ন খাতে পরিচালিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারী ওই গ্রুপের সবার নামের তালিকা পেয়েছে ডিবি। শিগগিরই অভিযান পরিচালিত হবে তাদের বিরুদ্ধে।
বুধবার (১৭ জুলাই) সকালে গণমাধ্যমকে এসব কথা জানান ডিবিপ্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।তিনি বলেন, অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে গুজব ছড়িয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে একটি গ্রুপ। যারা গুজব ছড়াচ্ছে ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছে, তারা অতীতেও ষড়যন্ত্র করেছে। আমরা তাদের ছাড় দেইনি।
তবে মঙ্গলবার মধ্যরাতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযান চলাকালে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রহনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ সাতজনকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। এছাড়াও এ সময় ডিবি পুলিশ দাবি করেছে, অভিযানের সময় বিএনপি কার্যালয় থেকে ককটেল, পেট্টোল, বাঁশের লাঠি ও অস্ত্র উদ্ধারের।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৭