রাজ্যপাল সম্পর্কে যেকোনো মন্তব্য করতে পারবেন মুখ্যমন্ত্রী: কলকাতা হাইকোর্ট
-
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস
কোলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস সম্পর্কে যেকোনো মন্তব্য করতে পারবেন। তবে, সেই মন্তব্যের মাধ্যমে যাতে কোনোভাবেই রাজ্যপালের মানহানি না হয় সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।
বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ আজ (শুক্রবার) এই রায় দিয়েছেন। ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের পর মামলা ফের ফেরত গেল একক বেঞ্চের বিচারপতি কৃষ্ণা রাওয়ের এজলাসে। হলফনামা আদান প্রদানের পরে নতুন করে শুনানি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে একক বেঞ্চ।
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীসহ ৪ তৃণমূল নেতা ১৪ আগস্ট পর্যন্ত কোনো মানহানিকর মন্তব্য করতে পারবেন না- এই মর্মে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেন বিচারপতি কৃষ্ণা রাও। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন মুখ্যমন্ত্রীসহ ৪ তৃণমূল নেতা।
আজ আদালত তার পর্যবেক্ষণে জানায়, একজন মানুষের মর্যাদা অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং পবিত্র বিষয়। সেটাকে রক্ষা করার জন্য আইনে সংস্থান রয়েছে। আবার মানুষের বাকস্বাধীনতা খর্ব করা যায় না। যদিও এই বাকস্বাধীনতার কিছু কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। একইসঙ্গে সত্যি জানার অধিকার সবার আছে। যদিও এই সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী বা উচ্চপদে থাকা ব্যক্তিদের অনেক বেশি দায়িত্বশীল থাকতে হয়।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা দায়ের করেছেন রাজ্যপাল। সম্মানহানি প্রমাণিত হলে ১১ কোটি টাকা দেওয়ার আবেদনও জানিয়েছেন রাজ্যপালে। এমনকি, ১১ কোটির পাশাপাশি কোর্ট ফি বাবদ ৫০ হাজার টাকাও দেওয়ার আবেদন করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
কেন এই মানহানির মামলা?
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছেন রাজভবনেরই এক অস্থায়ী মহিলা কর্মী। সঙ্গে দিল্লিতে এক নৃত্যশিল্পীকে ধর্ষণেরও অভিযোগও সামনে আসে। এরপর বরানগর ও ভগবানগোলা উপনির্বাচনে জয়ী দুই তৃণমূল প্রার্থীর শপথকে ঘিরে যখন জটিলতা তৈরি হয়। তখন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'রাজভবনে যা চলছে মেয়েরা শপথ নিতে যেতে ভয় পাচ্ছে। রাজ্যপাল কেন বিধানসভায় এসে শপথ নেওয়াবেন না? কেন স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারকে দায়িত্ব দেবেন না?' সেই মন্তব্যের জেরেই মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামহানির মামলা করেন রাজ্যপাল।
এর আগে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্টের একক বেঞ্চ। সেই বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করা হয়েছিল মুখ্য়মন্ত্রীর পক্ষ থেকে। আজ (শুক্রবার) সেই মামলার শুনানি ছিল। এবার ডিভিশন বেঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের মাধ্যমে রাজ্যপালের মানহানি হয়েছিল কি না এটা বিবেচনা করে দেখবে একক বেঞ্চ।
এর আগে গত ১৬ জুলাই একক বেঞ্চে বিচারপতি কৃষ্ণ রাওয়ের এজলাসে বলা হয়েছিল মামলাকারীর দাবি অনুসারে কিছু মন্তব্যে তাঁর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এরপরই বলা হয়েছিল রাজ্যপালের মানহানি হয় এমন কোনও মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। এজন্য ১৪ অগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এর পর একক বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।#
পার্সটুডে/এমএআর/২৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।