'তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ অধীন নির্বাচনের পরামর্শ দিয়ে পদত্যাগ করলেন হাবিবুল আউয়াল
(last modified Thu, 05 Sep 2024 10:08:10 GMT )
সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২৪ ১৬:০৮ Asia/Dhaka
  • কাজী হাবিবুল আউয়াল
    কাজী হাবিবুল আউয়াল

বাংলাদেশের বিতর্কিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্য কমিশনারদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আজ (বৃহস্পতিবার) তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন।

এর আগে দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। পদত্যাগ ঘোষণার আগে ‘বিদায়ী ব্রিফিং’–এ ভবিষ্যতের প্রতিটি সাধারণ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়েছেন হাবিবুল আউয়াল। 

সদ্য সাবেক সিইসি কাজী হাবুবুল আউয়াল বলেন, "২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে বা ব্যবস্থাপনায়। ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও প্রধানতম বিরোধীদল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। নির্বাচন সেই অর্থে, অন্তর্ভূক্তিমূলক হয়নি। কমিশন বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য একাধিকবার আন্তরিকভাবে আহ্বান করা সত্ত্বেও তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।"

তিনি বলেন, "বিদ্যমান ব্যবস্থায় আমাদের বিশ্বাস কেবল কমিশনের পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে অবাধ, নিরপেক্ষ, কালো টাকা ও পেশিশক্তি বিবর্জিত এবং প্রশাসন ও পুলিশের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে না। নির্বাচন পদ্ধতিতে দুর্ভেদ্য মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও আচরণে এবং বিশেষত, প্রার্থীদের আচরণে পরিবর্তন অবশ্যই প্রয়োজন হবে।"

কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, "নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বা না করা একটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব বিষয়। নির্বাচন স্থগিত বা বাতিল করে দেওয়ার মতো কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি ছিল না। সেই কারণে অনেকেই কমিশনকে দোষারোপ করছেন, নির্বাচন, কখন, কী কারণে, কতদিনের জন্য স্থগিত করা যাবে, তা-ও সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। অতীতে কখনোই কোনো নির্বাচন বাতিল করে দিয়ে কোনো কমিশন পদত্যাগ করেনি।"

লিখিত ভাষণের শেষে ‘নিজের অভিজ্ঞতার নিরিখে’ তিনি কিছু প্রস্তাবনা দেন। হাবিবুল আউয়াল বলেন, "বর্তমান ও অতীত থেকে আহৃত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও উপলব্ধি থেকে ভবিষ্যতের জন্য কিছু প্রস্তাবনা সরকারের সদয় বিবেচনার জন্য রেখে যাওয়া কর্তব্য মনে করছি। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সমরূপতার কারণে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (দলীয়–ভিত্তিক) নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ আদর্শ ক্ষেত্র হতে পারে। সেই সঙ্গে নির্বাচন চার বা আটটি পর্বে, প্রতিটি পর্বের মাঝে তিন থেকে পাঁচ দিনের বিরতি রেখে, অনুষ্ঠান করা ব্যবস্থাপনার দিক থেকে সহজ ও সহায়ক হতে পারে। আমাদের প্রবর্তিত অনলাইনে নমিনেশন দাখিল অব্যাহত রেখে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার অপটিমাইজ করতে পারলে উত্তম হবে। প্রতিটি সাধারণ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হলে উদ্দেশ্য অর্জন আরও সুনিশ্চিত হতে পারে।"

লিখিত বক্তব্য শেষে গণমাধ্যমের সামনেই পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন তিনি। বক্তব্য শেষে কোনো প্রশ্নের সুযোগ না দিয়ে চলে যান কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তবে আগেই থেকেই বাইরে অবস্থান করা বিক্ষুব্ধ জনতা সদ্য বিদায়ী আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। এ সময় অনেকে ধাওয়া দেন বিদায়ী কমিশনারদের। নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশিদা সুলতানা ও মো. আনিছুর রহমানের গাড়িতে জুতা নিক্ষেপ করেন বিক্ষুব্ধ জনতা।

সংবিধান অনুযায়ী পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব নির্ধারণ করা থাকলেও মাত্র আড়াই বছরেই বিদায় নিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সিইসি হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও সাবেক সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান। তারা নিয়োগের একদিন পর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছে শপথ নেন।#

পার্সটুডে/এমএআর/৫

ট্যাগ