ইসরাইলের উপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দিতে জাতিসংঘকে ৫০টি দেশের চিঠি
অবরুদ্ধ গাজা ও লেবাননের জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের গণহত্যার ধারাবাহিকতায় বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ জাতিসংঘের মহাসচিব, নিরাপত্তা পরিষদ এবং এই সংস্থার সাধারণ পরিষদের প্রতি দখলদার সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেয়ার দাবি জানিয়েছে।
গত (রোববার) এক বিবৃতিতে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিশ্বের ৫২টি দেশ ও দুটি সংস্থার স্বাক্ষর-সম্বলিত একটি চিঠি জাতিসংঘে জমা দেয়া হয়েছে যাতে ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানও এই পদক্ষেপের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং ইসরাইলে অস্ত্র রপ্তানিকারী দেশগুলোকে গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, “আমরা ইসরাইলের কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ বিক্রি বন্ধ করার জন্য সমস্ত দেশকে আহ্বান জানিয়ে একটি যৌথ চিঠি লিখেছি। আমরা ৫৪ জন স্বাক্ষরকারী এই চিঠিটি পহেলা নভেম্বর জাতিসংঘে পৌঁছে দিয়েছি।” জিবুতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে হাকান ফিদান এসব কথা বলেন। সেখানে তুরস্ক-আফ্রিকা অংশীদারিত্ব বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন হাকান ফিদান।
গাজার জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদীইসরাইলের গণহত্যার ১৩ মাস পেরিয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে এবং এক লাখের বেশি আহত হয়েছে যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। প্রতিদিন বোমাবর্ষণের পাশাপাশি জেরুজালেমের দখলদার শাসক গাজার জনগণকে অভুক্ত রেখে এবং তাদেরকে মানবিক সাহায্য প্রেরণে বাধা দিয়ে বিশেষ করে খাদ্য ও ওষুধ প্রেরণে বাধা দেওয়ার নীতির মাধ্যমে গাজার বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এছাড়া গত দুই মাস ধরে লেবাননের জনগণের বিরুদ্ধেও দখলদার এই শাসক গোষ্ঠী অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।
পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে প্রকাশ্য এবং গোপন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি দখলদার তেল আবিব শাসক গোষ্ঠীকে বিভিন্ন মারণাস্ত্র প্রেরণ করে গাজা ও লেবাননের জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যায় এই সরকারকে সহায়তা করছে এবং এভাবে তারা এই অবৈধ সরকারের নানা অপরাধযজ্ঞের অংশীদারে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনসংখ্যার বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ডে ইহুদিবাদী শাসককে সরবরাহ করা অস্ত্র গাজা ও লেবানের জগণকে হত্যা করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে। লেবাননে হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে তৈরি করা দুই টনের বোমার ব্যবহার একটি স্পষ্ট এবং বড় উদাহরণ।
এর আগে,জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল অধিকৃত অঞ্চলে অস্ত্র পাঠানোর নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেছিল এবং ২৮টি দেশ এই নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ভোট দেয়। এছাড়া ৬টি দেশ বিপক্ষে ভোট দেয় এবং ১৩টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। আমেরিকা ও জার্মানি এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। এই দুটি দেশ ইহুদিবাদী শাসকদের বেশিরভাগ অস্ত্র সরবরাহ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে অধিকৃত অঞ্চলে বেশি অস্ত্র পাঠিয়ে থাকে। গত এক বছরে ওয়াশিংটন ইহুদিবাদী শাসককে ১৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর জার্মানি ও ইতালিই সবচেয়ে বেশি অস্ত্র পাঠিয়েছে অধিকৃত ভূখণ্ডে।
এখন গাজা ও লেবাননের জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকদের গণহত্যার ধারাবাহিকতা এবং এই নজিরবিহীন অপরাধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অক্ষমতার কারণে ৫০ টিরও বেশি দেশ দখলকৃত ভূখণ্ডে অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে। বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ নিরাপত্তা পরিষদ এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদকে ইহুদিবাদী শাসকের কাছে অস্ত্র বিক্রি বা হস্তান্তর রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেছে।
বলা যেতে পারে যে, গাজা ও লেবাননের জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসক কর্তৃক সংঘটিত অপরাধে অধিকৃত অঞ্চলে অস্ত্র রপ্তানিকারী দেশগুলোর অংশগ্রহণের কথা ব্যক্ত করার সময় এই ৫০টি দেশের অনুরোধও ইঙ্গিত করে যে ইহুদিবাদী ইসরাইরের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার কার্যকর করার আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার অদক্ষতার বিষয়টি বিশ্বে উন্মোচিত হয়ে পড়েছে।#
পার্সটুডে/এমবিএ/৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।