আদানি ইস্যুতে ভারতের সংসদ উত্তাল, রাজ্যসভা-লোকসভা তৃতীয় দিনের মতো মুলতুবি
-
ভারতের পার্লামেন্ট
মার্কিন আদালতে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে আলোচনার দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠায় আজও ভারতের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের অধিবেশন সারা দিনের জন্য মুলতবি হয়ে গেছে। এ নিয়ে শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম তিন দিনই সংসদের দুই কক্ষের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হলো।
আজ (বুধবার) সভার শুরুতেই কংগ্রেসের দুই সভার সাংসদ মানিকম ঠাকুর, রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা এবং মণীশ তেওয়ারি মুলতুবি প্রস্তাব পেশ করেন। আর তা নিয়ে সভা শুরু হতেই তুমুল হইচই শুরু হয়ে যায়।
আদানি ইস্যু ছাড়াও দিল্লিতে অপরাধ বেড়ে যাওয়া, মণিপুর সমস্যা, সম্ভাল হিংসা নিয়ে মোট ১৮টি মুলতুবি প্রস্তাব আনা হয়। তার সবকটিই খারিজ করে দেন চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়। বিরোধীরা রুখে দাঁড়ালে সভা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মুলতবি করে দেওয়া হয়। পরে সভা শুরু হতেই ফের হট্টগোল বাধায় দিনের মতো মুলতুবি করে দেন চেয়ারম্যান। লোকসভাও প্রথমে ১২টা পর্যন্ত মুলতুবি হয়। পরে সভা বসলে স্পিকার ওম বিড়লা দিনের কার্যবিবরণী পড়তে শুরু করলে বিরোধীরা ওয়েলে নেমে পড়েন। তাঁরা চিৎকার করে আদানি ইস্যুতে আলোচনার দাবি তুলতে থাকেন। এরমধ্যেই বেশ কিছু কাগজ ছোড়াছুড়ি হয়। তারপর পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এদিনের মতো সভা মুলতুবি করে দেন স্পিকার। আগামীকাল, বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনের জন্য বসবে সংসদের দুই কক্ষ।
অন্যদিকে, লোকসভাতেও এ নিয়ে হট্টগোল বাধে। ১১টায় সভা বসতে আদানি ইস্যু নিয়ে সদস্যরা আলোচনার দাবি তুলতে থাকেন। শেষমেশ স্পিকার ওম বিড়লা দুপুর ১২টা পর্যন্ত সভা মুলতুবি করে দেন। আদানির উপর আলোচনা চেয়ে বিরোধীরা ওয়েল নেমে পড়েন। বিড়লা বলেন, প্রশ্নপর্বের পর আলোচনা হতে পারে। তাতেও বিরোধীরা রাজি হননি।
কংগ্রেস আগেই জানিয়ে দেয় যে, তারা সংসদের ভিতরে-বাইরে আদানি ইস্যুতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখাবে। রাহুল গান্ধী ও সদ্য নির্বাচিত প্রিয়ঙ্কা গান্ধী এই প্রতিবাদে নেতৃত্ব দেবেন। কেরলের ওয়ানাড়ে গত ৩০ জুলাই ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত আর্থিক সাহায্য না দেওয়ার প্রতিবাদে ওয়ানাড়ের প্রাক্তন ও বর্তমান সংসদ সদস্য এই বিক্ষোভ দেখাবেন।
গৌতম আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সখ্য নিয়ে কংগ্রেস বরাবরই সমালোচনায় মুখর। এবার তা জোরাল হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের পদক্ষেপের দরুণ। তথ্য গোপন করে বাজার থেকে অনৈতিকভাবে সম্পদ সংগ্রহের অভিযোগে সে দেশের আদালত গৌতম আদানি ও তাঁর ভাইপো সাগর আদানির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের পদক্ষেপের পর কেনিয়া সরকার আদানির সঙ্গে হওয়া দুটি চুক্তি বাতিল করেছে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা আদানির শিল্প চুক্তি নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফ্রান্সের সংস্থা ‘টোটাল এনার্জি’ আদানির মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই গোষ্ঠীকে অর্থ সাহায্য করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
সরকার নীরব থাকলেও বিজেপি আদানির পক্ষে দাঁড়িয়েছে। তারা বলছে, ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতি খর্ব করতে এটা বৈদেশিক শক্তির চক্রান্ত। বিশিষ্ট আইনজীবী ও দেশের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি আদানিদের হয়ে ময়দানে নেমেছেন। আজ সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, গৌতম আদানি ও সাগর আদানির বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়া কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়নি।
আদানি গোষ্ঠীর পক্ষে আজ এক বিবৃতিতে এমন দাবি জানিয়ে মুকুল বলেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগই ওঠেনি। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ‘বিভ্রান্তিকর’। আদানি গোষ্ঠী জানিয়েছে, এ বিষয়ে এই মামলার বিষয়ে আদালতের শরণাপন্ন হবে।#
পার্সটুডে/এমএআর/২৮