'এই বিচার কোনো প্রতিশোধ নয়; এটি ইতিহাসের মীমাংসা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড চাইল প্রসিকিউশন
-
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম
বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রযন্ত্রের সব শাখাকে ব্যবহার করে তিনি অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আজ) বৃহস্পতিবার মামলার সমাপনী যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এ কথা বলে শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আর্জি জানিয়েছেন।
তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বলেন, 'তিনি (শেখ হাসিনা) ছিলেন 'সব অপরাধের নিউক্লিয়াস'। কমান্ড স্ট্রাকচারের শীর্ষে থেকে তিনি নিজে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। তার ফোনালাপ, নির্দেশনা ও সাক্ষ্য–প্রমাণে স্পষ্ট হয়েছে—তিনি জিঘাংসাপরায়ণ মনোবৃত্তি থেকে এই হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করেছেন।'
তিনি আরও বলেন, '১৪০০ মানুষকে হত্যার দায়ে তার অন্তত ১৪০০ বার মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। কিন্তু যেহেতু তা সম্ভব নয়, তাই তাকে অন্তত একবার চরম দণ্ড না দেওয়া হলে অবিচার করা হবে। তার শাস্তি কমানোর কোনো সুযোগ নেই।'
প্রধান প্রসিকিউটর বলেন, শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন পরিকল্পিতভাবে এই অপরাধ সংঘটন করেছেন। এ ক্ষেত্রে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থা ব্যবহার করা হয়েছে।
দ্বিতীয় অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে তাজুল ইসলাম বলেন, 'সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং তিনি ছিলেন মাঠপর্যায়ের কমান্ডার। তার বাসায় বসে এই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনা করা হয়েছে। ড্রোন মোতায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। হেলিকপ্টার মোতায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে হত্যাকাণ্ড তদারকি করেছেন। তিনি শিশু হত্যাসহ সব হত্যাকাণ্ডকে যৌক্তিকতা দিয়েছেন। তাই তার ব্যাপারেও কোনো অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই।'
সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিষয়ে প্রধান প্রসিকিউটর বলেন, 'এই মামলার আরেক আসামি যেহেতু রাজসাক্ষী হিসেবে আদালতকে তথ্য দিয়ে সত্য উদ্ঘাটনে সাহায্য করেছেন, গুম সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন, তাই তার ব্যাপারে আদালত যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই চূড়ান্ত।'
যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, মামলার সাক্ষ্য–প্রমাণ হিমালয়ের মতো দৃঢ় এবং 'ক্রিস্টাল ক্লিয়ার'। তার মতে, এই প্রমাণ বিশ্বের যেকোনো আদালতে উপস্থাপন করা হলে প্রতিটি আসামির সর্বোচ্চ দণ্ড নিশ্চিত হবে।
তিনি বলেন, 'এই বিচার কোনো প্রতিশোধ নয়; এটি ইতিহাসের মীমাংসা এবং ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা, যাতে কোনো শাসক আর কখনো নিজের জনগণকে হত্যার দুঃসাহস না দেখায়।'
প্রধান প্রসিকিউটর আরও জানান, নিহত ও আহতদের পরিবারের জন্য আসামিদের সম্পদ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ চাওয়া হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, 'এই রায় বাংলাদেশের ইতিহাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।'#
পার্সটুডে/জিএআর/১৬