জুলাই ২৮, ২০২৩ ১৬:১৫ Asia/Dhaka
  • সীমান্তে শান্তি ফিরলে ভারত-চীন সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে : ডোভাল

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল বলেছেন, সীমান্তে শান্তি ফিরলে ভারত-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে।

সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘ব্রিকস’ গোষ্ঠীভুক্ত সদস্য দেশগুলোর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের ১৩ তম বৈঠকের সময় পার্শ্ববৈঠকে মিলিত হন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ডোভাল এবং ওয়াংয়ের মধ্যে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ওয়াং ইকে ডোভাল বলেছেন,  ‘২০২০ সাল থেকে ভারত-চীন সীমান্তের পশ্চিম ফ্রন্টে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার পরিস্থিতি দু’দেশের মধ্যে বিশ্বাসে ফাটল ধরিয়েছে। ভারত-চীন  সম্পর্ক ধীরে ধীরে তলানিতে এসে ঠেকেছে।’ 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তোলা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, সেই বিষয়টি তুলে ধরেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডোভাল। ওয়াংকে তিনি বলেছেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে যা কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো দূর করতে হবে। সীমান্তে শান্তি ফিরলে  ভারত-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও স্বাভাবিক হবে। সমগ্র বিশ্বের স্বার্থের নিরিখেই দু’দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক থাকা গুরুত্বপূর্ণ।’  

 চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন,   দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ফের আগের মতো স্বাভাবিক করে তোলার জন্য দুই দেশকেই উদ্যোগী হতে হবে। চীনা গণমাধ্যম সূত্রে প্রকাশ, ভারতসহ একাধিক দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে রাজি আছে চীন, এমনটাই জানিয়েছেন ওয়াং ই। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ওয়াং ই।    জানা গেছে, ডোভাল এবং ওয়াংয়ের সাম্প্রতিক বৈঠক সম্পর্কে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়য়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত বছরের শেষের দিকে, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীন-ভারত সম্পর্ক স্থিতিশীল  করতে বালিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐক্যমত্যে পৌঁছেছিলেন। এ সময় বলা হয়, উভয় দেশ সম্মতিক্রমে প্রকৃত অর্থে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাস্তবায়ন করবে। উভয় পক্ষ হস্তক্ষেপ পরিহার করবে, ঐকমত্য ও সহযোগিতার উপর ফোকাস করবে এবং উন্নয়নের স্থিতিশীল পথে প্রত্যাবর্তনের জন্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে উৎসাহিত করবে।

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র বৈঠক নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে জারি করা বিবৃতিতে মোদী ও জিনপিংয়ের বৈঠকের কোনো উল্লেখ নেই। কিন্তু যে কথা সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে তা হল, বালিতে মোদী ও জিনপিং  দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতির বিষয়ে 'ঐকমত্য'-এ পৌঁছানো। গত বছর, ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নভেম্বরে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে বৈঠকের ধরণ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। রাতের খাবারের সময় ছিল এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী খাবার টেবিলে বসেছিলেন। এরই মধ্যে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সেখানে পৌঁছালে মোদী চেয়ার থেকে উঠে জিনপিংয়ের কাছে যান। উভয় নেতা উষ্ণভাবে একে অপরের সাথে করমর্দন করেন এবং কিছুক্ষণ কথাও বলেন। ২০২০ সালে গালওয়ানে ‘এলএসি’তে ভারত ও চীনা সেনাদের মধ্যে সহিংসতার পরে দু’দেশের প্রধান নেতাদের মধ্যে এটিই ছিল প্রথম এবং এ পর্যন্ত একমাত্র বৈঠক। 

চলতি মাসের ১৪ তারিখে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জাকার্তায় আসিয়ান দেশগুলোর বৈঠকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সে সময়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বা ‘এলএসি’ ইস্যুটি উঠেছিল এবং উভয় দেশ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্যাটি সমাধান করতে সম্মত হয়েছিল।  প্রসঙ্গত, প্যাংগং লেক এলাকায় সহিংস সংঘর্ষের পর ২০২০ সালের ৫ মে থেকে পূর্ব লাদাখ সীমান্তে অচলাবস্থা শুরু হয়। ২০২০ সালের জুনে  গালওয়ান উপত্যকায় ভয়াবহ সংঘর্ষের পর, দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল। একের পর এক সামরিক ও কূটনৈতিক আলোচনার ফলে অবশেষে উভয় পক্ষই প্যাংগং লেকের উত্তর ও দক্ষিণ তীর এবং গোগরা এলাকা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে।  জানা গেছে, ‘এলএসি’ ইস্যুতে গত এপ্রিলে পূর্ব লাদাখ সেক্টরে উচ্চপর্যায়ের সামরিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি ছিল ভারত ও চীনের মধ্যে ১৮তম সামরিক আলোচনা। এ সময়ে  ভারতীয় পক্ষ পূর্ব লাদাখের ডেমচোক এবং ৃৃ-এর অবশিষ্ট বিতর্কিত স্থানগুলোর সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করার উপর জোর দিয়েছিল। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

  

 

ট্যাগ