ভারতে মুসলমানদের ওপর উগ্র হিন্দুদের নির্যাতন চরমে: নীরব মোদি
ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের গুরুগ্রাম শহরে চরমপন্থী হিন্দুদের হামলার ভয়ে তিন হাজারেরও বেশি মুসলমান তাদের বাড়িঘর ছেড়েছে। ওই শহরের মুসলমানদের দোকানপাটও বন্ধ হয়ে গেছে।
গুরুগ্রাম শহরে সংঘর্ষের ঘটনায়৭ জন নিহত হবার পর মুসলমানরা তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এমনকি মুসলমানরা তাদের জীবন রক্ষার জন্য ঘরের দরজা বন্ধ করে এবং দোকানপাট বন্ধ করে শহর ছেড়ে চলে গেছে। গুজরাট ও উত্তর প্রদেশসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এমনকি নয়াদিল্লিতেও মুসলমানদের ওপর চরমপন্থী হিন্দুদের হামলার ভয়ঙ্কর ইতিহাস রয়েছে। সে কারণে হরিয়ানা রাজ্যের গুরুগ্রামের মুসলমানদের মাঝে রক্তক্ষয়ী সহিংসতার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা অমূলক নয়। রাজনীতি বিশেষজ্ঞ কে এম সিং যাদব বলেছেন:
ভারতের বহু-জাতিগত এবং ধর্মীয় সমাজে যে মূল প্রশ্নটি এখন উত্থাপিত হয়েছে তা হল, ভারতীয় নাগরিক হয়ে সে দেশের মানুষকে কতদিন নিজ দেশে বাস্তুচ্যুত থাকতে হবে? শুধু মুসলমানরাই নয় অন্যান্য সংখ্যালঘুরাও উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হামলার আশঙ্কা থেকে নিরাপদ নয়। তারাও সবসময়ই হয়রানির শিকার হয়ে আসছে। বিশেষ করে যেসব রাজ্যে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে সেসব রাজ্যে চরমপন্থীরা মুসলমানদের হয়রানির সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে।
হরিয়ানা রাজ্যের মুসলমান অধ্যুষিত গুরুগ্রামে এই সহিংসতা শুরু হয়েছে ৩১ জুলাইর পর থেকে। ওইদিন হিন্দু চরমপন্থী এবং মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষের পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ভারতীয় পুলিশ বাহিনীর চেষ্টা সত্ত্বেও মুসলমানদের ওপর হামলা কমবেশি অব্যাহত রয়েছে। ভারতের মুসলমানদের বিশেষ করে গুরুগ্রামের মুসলমানদের উদ্বিগ্ন হবার আরও একটি কারণ রয়েছে। তা হলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট দিতে বিরোধী পক্ষের ব্যর্থতা। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে চরমপন্থী হিন্দুদের অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে মোদির নীরব রয়েছে। এ কারণে ভারতীয় জনগণ বিশেষ করে মুসলমানদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে যে আরএসএস এবং শিবসেনার মতো চরমপন্থী হিন্দু দলগুলো আরও বেশি শক্তিমত্তা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে মুসলমানদের ওপর হামলা চালাতে পারে। এদিকে মণিপুরে জাতিগত সঙ্কট অব্যাহত রয়েছে। হিন্দু চরমপন্থীরা গুরুগ্রামেও ধর্মীয় যুদ্ধ তীব্রতর করার ব্যাপারে কোনোরকম দ্বিধা করবে না। এসব কারণেই সেখানকার মুসলমানরা ওই শহর ছেড়ে চলে গেছে।
ভারতের পরিস্থিতি বিশ্লেষক আলি আলায়ি বলেছেন: ভারতে হিন্দু চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো এতো শক্তিশালী হবার কারণ হলো ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি'র ক্ষমতা। ভারতের সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে বিরোধীরা অনাস্থা ভোট পাস করাতে ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণে মণিপুর রাজ্যে চলমান অপরাধের ঘটনায় মোদি নীরব রয়েছে। তার এই নীরবতার কারণে উগ্রবাদী হিন্দুরা অপরাধযজ্ঞ চালিয়ে যেতে আরও কট্টর ও নির্লজ্জ হয়ে উঠতে পারে। ভারতীয় সমাজ হিন্দু চরমপন্থীদের ওই জাতিগত ও ধর্মীয় সহিংসতার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে।
জাতিগত এই সংঘাত অব্যাহত থাকলে ভারতের জাতীয় ঐক্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছে জনগণ।#
পার্সটুডে/এনএম/১৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।