বিএসপি নেতা দানিশ আলি এমপিকে সংসদে উগ্রপন্থি বলে কটূক্তি! নিন্দার ঝড়
ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বিএসপি নেতা দানিশ আলি এমপিকে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতা রমেশ বিধুরি এমপি সন্ত্রাসী, জঙ্গি, মোল্লা সন্ত্রাসীসহ নানাভাবে কটাক্ষ করায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে।
জানা গেছে, সংসদে বিজেপি এমপি রমেশ বিধুরী চন্দ্রযান ৩ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাফল্যের কথা উল্লেখ করার সময়ে দানিশ আলি এমপিকে টার্গেট করে বলেন, ‘বাহার ফেকো ইস মুল্লেকো’। গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে লোকসভার মধ্যে প্রকাশ্যে এমন ঘটনায় অবাক হয়েছেন অনেকেই।
এ নিয়ে সংসদে তীব্র শোরগোল সৃষ্টি হলে এ সময়ে স্পিকারের চেয়ারে থাকা কংগ্রেস নেতা কোডিকুনাল সুরেশ বিতর্কিত মন্তব্য বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান। যদিও তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের মুখে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও বিজেপির সিনিয়র নেতা রাজনাথ সিং এজন্য দুঃখপ্রকাশ করেন।
আজ (শুক্রবার) বিএসপি নেতা দানিশ আলি এমপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, আরএসএসের শাখায় ও নরেন্দ্র মোদীর গবেষণাগারে কী এই শিক্ষা দেওয়া হয়? আপনার ক্যাডার যখন সংসদে একজন নির্বাচিত এমপিকে সন্ত্রাসী, চরমপন্থী, মোল্লা ইত্যাদি শব্দ দিয়ে অপমান করতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করে না তাহলে সাধারণ মুসলমানদের সাথে তিনি কী করবেন? এটা ভাবতেও আত্মা কেঁপে ওঠে!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ইস্যুতে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। তৃণমূল নেত্রী মহুয়া মৈত্র এমপি বলেছেন, ‘মুসলিম ও অনগ্রসর শ্রেণিকে গালি দেওয়া বিজেপির সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। অধিকাংশ মানুষ এখন এতে অন্যায় কিছু দেখেন না। নরেন্দ্র মোদী ভারতীয় মুসলমানদের নিজেদের ভূমিতে এমন ভয়ের রাজ্যে থাকতে বাধ্য করেছেন যে, তারা হাসিমুখে সবকিছু সহ্য করে। কিন্তু আমি এর নিন্দা করতে থাকব কারণ মা কালী আমাকে মেরুদণ্ড দিয়েছেন।’
ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আব্দুল্লাহ এমপি বলেছেন, কত সহজে এই বিদ্বেষে ভরা এমপি এমন আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করছেন। মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা কখনোই এই মূলধারা ছিল না। বিজেপির মুসলিম নেতারা কীভাবে এমন বিদ্বেষীদের সঙ্গে থাকতে পারেন?
আম আদমি পার্টির নেতা আমানতুল্লাহ খান বলেছেন, ‘রমেশ বিধুরিকে অবিলম্বে বরখাস্ত করে জেলে পাঠানো উচিত।’
কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন সংসদ ভবন নারী শক্তি দিয়ে শুরু হওয়ার কথা বললেও আসলে শুরু হয়েছে রমেশ বিধুরি দিয়ে। এটা রমেশ বিধুরির নয়, ভারতীয় জনতা পার্টির চিন্তাভাবনা। আমাদের দাবি- রমেশ বিধুরির সদস্যপদ বাতিল করা হোক।
মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি বলেছেন, আমি নিশ্চিত বিধুরির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তাকে বিজেপির দিল্লি রাজ্য সভাপতি করা হতে পারে বলে সম্ভাবনা রয়েছে। হিটলারের জার্মানিতে যেভাবে ইহুদিদের সঙ্গে আচরণ করা হয়েছিল, আজ ভারতের মুসলমানদের সঙ্গে সেরকমই আচরণ করা হচ্ছে।
বিএসপি প্রধান মায়াবতী বলেছেন, স্পিকার সংসদে দানিশ আলীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য রেকর্ড থেকে সরিয়ে দিয়েছেন এবং তাকে সতর্কও করেছেন। সিনিয়র মন্ত্রী সংসদে ক্ষমা চেয়েছেন, কিন্তু দল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি, যা দুঃখজনক।
অন্যদিকে, বিএসপি নেতা দানিশ আলি বলেছেন, আমি আশা করি আমার প্রতি ন্যায়বিচার হবে এবং স্পিকার পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। যদি তা না হয়, আমি এই ভবন ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবব।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/জিএআর/২২