ক্ষমতাসীন দলের নীতি কি ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ছড়িয়ে দিচ্ছে?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i154694-ক্ষমতাসীন_দলের_নীতি_কি_ভারতে_মুসলমানদের_বিরুদ্ধে_সহিংসতা_ছড়িয়ে_দিচ্ছে
পার্সটুডে- সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
(last modified 2025-12-04T11:27:02+00:00 )
ডিসেম্বর ০৩, ২০২৫ ১৯:০৯ Asia/Dhaka
  • • ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও সহিংসতা বিস্তারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
    • ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও সহিংসতা বিস্তারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

পার্সটুডে- সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

পার্সটুডে জানিয়েছে, ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধি, বিশেষ করে গত কয়েক বছরে সরাসরি শাসক দলের উগ্র নীতি ও উস্কানিমূলক কথাবার্তা যা হিন্দু জাতীয়তাবাদকে উস্কে দিচ্ছে তা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও ঘৃণা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বিশেষ করে ২০২৪ এবং ২০২৫ সালে, ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হচ্ছে এবং সংগঠিত সহিংসতার ওয়েভ শুরু হয়েছে। অসংখ্য প্রতিবেদন ইঙ্গিত দেয় যে এই সহিংসতার শিকড় কেবল সামাজিক স্তরেই নয়, রাজনৈতিক স্তরেও রয়েছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদের আদর্শের উপর নির্ভর করে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এমন নীতি অনুসরণ করেছে যার ফলে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ করে মুসলমানদেরকে কার্যত প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এই নীতিগুলোর মধ্যে রয়েছে নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তন, ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর বিধিনিষেধ এবং উগ্র হিন্দু গোষ্ঠীগুলির আচরণের প্রতি নীরব সমর্থন।

২০২৪ সালে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্যের মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্ডিয়া হেট ল্যাবের মতে, ২০২৩ সালে ৬৬৮টি ঘৃণামূলক বক্তব্যের ঘটনা ঘটেছিল, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ১,১৬৫টিতে দাঁড়িয়েছে, অর্থাৎ ৭৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রায় ৯৮% মুসলমানদের লক্ষ্য করে দেয়া হয়েছে। এই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি কেবল ভারতের বৈষম্যপূর্ণ সামাজিক পরিবেশের প্রতিফলনই নয়, বরং এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সরাসরি ভূমিকার ইঙ্গিতও দেয়।

সহিংসতা কেবল মৌখিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিল না। ২০২৪ সালে, শারীরিক আক্রমণ, মসজিদ ও ধর্মীয় স্থান ধ্বংস, হত্যা এবং পদ্ধতিগত বৈষম্যের বিষয়ে অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল, যা থেকে বোঝা যায় যে ইসলামোফোবিয়া নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে, ক্ষতিগ্রস্তদের সমর্থন করার পরিবর্তে, নিরাপত্তা বাহিনী এবং পুলিশ হয় উদাসীন ছিল অথবা এমনকি আক্রমণকারীদের সাথে যোগসাজশের অভিযোগে অভিযুক্ত ছিল।

২০২৫ সালে, যখন নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার তৃতীয় মেয়াদ শুরু করেন, তখন মুসলিমদের জন্য পরিস্থিতি সংকটজনক ছিল। লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের আপেক্ষিক পরাজয় ঘটলে বিরোধী দল এবং মুসলিম প্রতিনিধিরা জোরালোভাবে কথা বলার সুযোগ পেলেও  সংখ্যালঘু বিরোধী নীতি অব্যাহত রয়েছে। বিবাহ আইনে পরিবর্তন, নাগরিকত্বের অধিকারের উপর বিধিনিষেধ এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে সামাজিক চাপ ব্যাপক বৃদ্ধির ফলে বিক্ষোভ হয়েছে। এই বিক্ষোভগুলো থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে বৈষম্যমূলক নীতির মুখে সংখ্যালঘুরা আর চুপ থাকতে রাজি নয়।

বিশ্লেষকরা মনে করেন যে ভারতের শাসক দলের নীতি হচ্ছে, হিন্দু পরিচয়কে শক্তিশালী করা এবং ধীরে ধীরে সংখ্যালঘুদের নির্মূল করা। এই নীতিগুলি শুধু যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সরাসরি সহিংসতা বৃদ্ধি করছে তাই নয় একইসাথে সামাজিক পরিবেশকেও তীব্রভাবে মেরুকরণ করেছে। এই ধরনের পরিবেশে, মুসলমানদের "অন্য" হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে বৈধতা দেওয়ার ভিত্তি তৈরি করে।

সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এই প্রবণতার বিপজ্জনক পরিণতি রয়েছে। প্রথমত, ভারতে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভারতে একটি উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার মুসলিমরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত বলে মনে করছে। এই বঞ্চনার অনুভূতি দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক অস্থিতিশীলতা এবং আরও সহিংস প্রতিক্রিয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে। তৃতীয়ত, এতে করে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসাবে ভারতের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে কলঙ্কিত হয়েছে।

পরিশেষে, এটা বলা যায় যে ২০২৪ এবং ২০২৫ সালে ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধি শাসক দলের নীতি এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদের উস্কানিমূলক বক্তৃতার ফল। এই প্রবণতা কেবল সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলে না, একই সাথে এই দেশে গণতন্ত্র এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিকেও বিপন্ন করে। #

পার্সটুডে/এমআরএইচ/৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।