বাংলার বকেয়া পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে দিল্লিতে আন্দোলন তৃণমূলের, কেন্দ্রীয় সরকারকে অভিষেকের চ্যালেঞ্জ
পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল বিভিন্ন প্রকল্পে রাজ্যের বকেয়া পাওনা অর্থ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আদায়ের লক্ষ্যে দিল্লিতে আন্দোলনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়য়ের উদ্যোগে আগামী ২/৩ অক্টোবর দু’দিন ধরে এজন্য ধর্না-অবস্থানসহ নানা কর্মসূচি চলবে। একশো দিনের কাজ প্রকল্প, আবাস প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পে প্রাপকদের টাকা যাতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে দেয় সেই লক্ষ্যেই এই আন্দোলন বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে যারা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের অনেকেই দিল্লির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন।
কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ‘ইডি’ আগামী ৩ অক্টোবর তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে। ওই ইস্যুতে তৃণমূলের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে।
আজ (শুক্রবার) রাজ্যের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী ডা. শশী পাঁজা কেন্দ্রীয় সরকারকে টার্গেট করে বলেছেন, তারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই লড়াইটাকে দমিয়ে দেওয়ার জন্য, এই প্রতিবাদকে স্তব্ধ করার জন্য কত নীচে নামতে পারে এবং কতটা ভীত সন্ত্রস্ত হয়েছে বলে তারা বুঝতে পারছেন না যে কোথায় আরম্ভ করবেন এবং কোথায় থামবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আমরা সংসদ সদস্য, বিধায়ক, জেলা পরিষদের সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সকলেই দিল্লিতে পৌঁছব। কিন্তু এই মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে দিল্লিতে না যেতে পারেন সেজন্য তাকে ‘ইডি’ থেকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। তিনিও সমাজ মাধ্যমে ইতোমধ্যে বলে দিয়েছেন তিনি দিল্লি যাবেন আটকাতে পারলে আটকাও।’
অন্যদিকে, আজ (শুক্রবার) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তৃণমূল নেতা অভিষেক বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের বঞ্চিতদের লড়াই চলবেই। পৃথিবীর কোনো শক্তিই জনগণের মৌলিক অধিকারের লড়াইয়ের করার জন্য আমাকে আটকাতে পারবে না। আমি ধর্না কর্মসূচিতে যোগ দিতে ২ ও ৩ অক্টোবর দিল্লিতে থাকব।’একইসঙ্গে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে তাকে আটকে দেখানোর চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন।
এর আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,‘ঠিক যখন বাংলার পাওনা চেয়ে আমাদের দিল্লিতে যাওয়ার কথা, সেই সময়েই তলব করা হল আমাকে। সুতরাং, বোঝা যাচ্ছে কারা আসলে ভীত এবং সন্ত্রস্ত। কারা ভয়ে কাঁপছে!’
তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বিজেপি ভীতু সেই কারণেই তৃণমূল কংগ্রেস বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকলেই তার আগে তাকে আটকাতে মরিয়া বিজেপি সমন পাঠাচ্ছে ভায়া এজেন্সিকে দিয়ে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলা হয়েছে, ‘বিজেপি আর কত নীচে নামবে? প্রথমে তোমরা বাংলার মানুষের প্রাপ্য অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের নিপীড়ন করবে। আর এখন যখন বাংলার মানুষ তাদের অধিকারের দাবিতে আওয়াজ তুলছে, তখন তাদেরও চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তৃণমূলের কটাক্ষ- ‘বিজেপি তাদের খাঁচায় ভরা টিয়া ইডিকে কাজে লাগিয়ে আবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে তলব করেছে আগামী ৩ অক্টোবর, যে দিন দিল্লিতে দলের ঘেরাও কর্মসূচি হওয়ার কথা।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র স্রেফ ভস্মে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছে তৃণমূল।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ‘ইডি’র দফতরে একটানা জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এমপি।
দিকে আজ রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে, একশো দিনের কাজেও দুর্নীতি হয়েছে, সেজন্য এসব দুর্নীতিকে চাপা দেওয়ার জন্য মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে (দিল্লিতে) ওই আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। ইডির ডাকে অভিষেক গেলেন কী গেলেন না তা নিয়ে মানুষের খুব একটা উৎসাহ নেই বলেও মন্তব্য করেছেন বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমআরএইচ/২৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।