নভেম্বর ১৯, ২০২৩ ১৭:৪৫ Asia/Dhaka

বিজেপিশাসিত অসমে ‘ইডিএফ’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল কাদির কাশেমি বিজেপির বিরুদ্ধে মুসলিমদের সম্পর্কে অযৌক্তিক, ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে ভোট মেরুকরণের চেষ্টার অভিযোগ করেছেন।

একইসঙ্গে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্যকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন এবং মুসলিমদের সম্পর্কে রাজ্যের মন্ত্রী জয়ন্তমল্ল বরুয়ার মন্তব্যের তদন্ত দাবি করেছেন। আজ (রোববার) ‘ইডিএফ’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল কাদির কাশেমি রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে কোনো ইস্যু নেই। তাদের বিগত ৯/১০ বছরে তারা দেশের কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি। যেসব প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছিল তা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য তাদের একমাত্র অস্ত্র হয়েছে ‘বিভাজন’। হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক, ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে ভোট মেরুকরণের চেষ্টা করছে। মুখ্যমন্ত্রীর মতো একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক।’    

‘এআইইউডিএফ’ প্রধান মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল এমপি’র বিরুদ্ধে অসমিয়া চেলেং চাদর ছুঁড়ে ফেলার অভিযোগ প্রসঙ্গে মাওলানা আব্দুল কাদির কাশেমি বলেন, ‘আমিও সেখানে ছিলাম।  আমরাও দেখেছি, সেটা ছুঁড়ে ফেলা হয়নি। নীচে একজন মুরুব্বি মানুষ বসে ছিলেন এবং তিনি সেটি চেয়েছিলেন। উপর থেকে  জিনিসটা ওনাকে দিয়েছিলেন, এবং তিনি সেটা হাতে নিয়ে খুব খুশি হয়েছেন। সেটা মিডিয়াও দেখেছে, আমরাও দেখেছি। কিছু পক্ষপাতদুষ্ট মিডিয়া এগুলো এভাবে সাজিয়ে প্রচার করছে এজন্য যে হিন্দুদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে মেরুকরণ করে তাদের ভোট অর্জন করা। বিজেপি দেখতে পাচ্ছে যে, আগামী নির্বাচনে মুসলিমদের ভোট তো পাবেই না, হিন্দুদের অধিকাংশের ভোটও তারা পাচ্ছে না। এজন্য তারা ষড়যন্ত্র করছে।’ 

অন্যদিকে, অসমের মন্ত্রী জয়ন্তমল্ল বরুয়া কথিত বাংলাদেশি মূলের মুসলমানদের বিষয়ে যে বিরূপ মন্তব্য করেছেন সে সম্পর্কে ‘ইডিএফ’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মাওলানা  আব্দুল কাদির কাশেমি বলেন, ‘জয়ন্তমল্ল বরুয়া সাহেবকে একথা বলার আগে সামান্য একটু বিবেক-বিবেচনা থাকা দরকার যে ‘এনআরসি’ (জাতীয় নাগরিক পঞ্জি) তো উনাদের  সরকারের আমলেই তৈরি হয়েছে। এবং সংখ্যালঘু মানুষরা লিগ্যাসি চুরি করেছে এবং আগ্রাসী মনোভাব নিয়েছে এবং বাংলাদেশিরা ভোটার হয়েছে, তখন কী তারা কুম্ভকর্ণের নিদ্রায় ছিলেন? তখন কী তাদেরকে বাধা দিতে পারেননি? যদি উনার কথা সত্যি হয় হয় তাহলে আমার মতে উনি যে ব্যর্থ হয়েছেন, সেই ব্যর্থতার দায়ে নৈতিক দায়িত্ব স্বীকার করে প্রথমে উনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়া উচিত। তার পরে উনার বক্তব্যের বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। এটা সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যা কথা। একবার নয়, কতবার করে মানুষ ‘এনআরসি’তে  শুনানিতে অংশগ্রহণ করে বার বার ফরম পূরণ করা থেকে লিগ্যাসি তথ্য জমা করা পর্যন্ত কতবার মানুষকে হেনস্থা করা হয়েছে। বার বার শুনানির মধ্য দিয়ে তাদের নাম অবশেষে ‘এনআরসি’তে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তার পরেও যদি মন্ত্রী জয়ন্তমল্ল বরুয়া এমন কথা বলেন  তাহলে এটা কেবল আজমল বা মুসলিম জাতির আপমান নয়, আমার মতে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রতিও সাঙ্ঘাতিক অবমাননা। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানেই সম্পূর্ণ ‘এনআরসি’ তৈরি হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানেই ‘এনআরসি’র সমস্ত কাজ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন ‘ইডিএফ’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল কাদির কাশেমি।               

প্রসঙ্গত, অসমে ‘এআইইউডিএফ’ প্রধান মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল এমপি’র বিরুদ্ধে সম্প্রতি এক সভায় কাঁধ থেকে ‘চেলেং চাদর সরিয়ে জনতার উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা তীব্র সমালোচনা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘বদরউদ্দিন আজমলকে চেলেং চাদর, অসমিয়া গামোছা ইত্যাদি একেবারেই দেওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, অসমিয়া মানুষদের বোঝা উচিত যে আজমলের মতো ব্যক্তিরা একটি জাতির সম্মানের বিষয়ে বোঝার ক্ষমতাই রাখেন না। ফলে তাদের (সমমানসূচক) চেলেং চাদর, গামোছা, ঝাঁপি এসব একেবারেই দেওয়া উচিত নয়।’

অন্যদিকে, অসমের মন্ত্রী জয়ন্তমল্ল বরুয়া অভিযোগ করেছেন, ‘লিগ্যাসি ডাটা চুরি করে বা অসম চুক্তির দোহাই দিয়ে বাংলাদেশি মূলের মুসলিমরা ভোটাধিকার পাওয়ার পাশাপাশি ভারতীয় নাগরিকও হয়েছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে যাদের অসমকে গিলে ফেলার আগ্রাসী মনোভাব রয়েছে, তারাই হলেন আজমল।’ রাজ্যবাসী কখনোই আগ্রাসনকারীদের শাসন ক্ষমতায় বসাবেন না বলেও মন্তব্য করেছেন মন্ত্রী জয়ন্তমল্ল বরুয়া। এসব মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা ও কটাক্ষ করেছেন ‘ইডিএফ’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল কাদির কাশেমি।#       

পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/১৯    

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ