রাম মন্দিরের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বহুলালোচিত রাম মন্দিরের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উন্মাদনার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা কর্মসূচি বা উদ্বোধন হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত দিয়েই এর সূচনা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন বিজেপি ওই ইসুতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বিজেপি নেতারা এরইমধ্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন। অন্যদিকে, বিরোধীরা বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মকে রাজনীতির মধ্যে যুক্ত করে দেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে রাম মন্দির উদ্বোধন করে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
ওই ইস্যুতে হিন্দু ধর্মের শঙ্করাচার্যরা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। এবং তারা রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা উৎসবে শামিল হবেন না বলে জানিয়েছেন। তাদের মতে, অসম্পূর্ণ মন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা শাস্ত্রসম্মত নয়। পুরীর গোবর্ধন মঠের শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী বলেছেন, ‘আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী মূর্তি স্পর্শ করে তার প্রতিষ্ঠা করবেন। তিনি গর্ভগৃহে যাবেন, আর আমরা শঙ্করাচার্যরা বাইরে তালি বাজাতে উপস্থিত থাকব, এটা কী শাস্ত্রীয় মর্যাদা?’
উত্তরাখণ্ডের জ্যোর্তিপীঠের শঙ্করাচার্য স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী বলেছেন, ‘মন্দির এখনও অসম্পূর্ণ। তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা ঠিক নয়। মূর্তিশিল্প অনুযায়ী মন্দির হল ভগবানের শরীর, মন্দিরের চূড়া হল দেবতার চোখ, কলস হল দেবতার মস্তক। এই পরিস্থিতিতে মস্তক ও চোখ ছাড়া মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হলে শাস্ত্রের দিক থেকে তা ঠিক নয়। এজন্য আমি সেখানে যেতে পারব না। কারণ, আমি গেলে মানুষ প্রশ্ন করবেন আমার সামনে কীভাবে এই শাস্ত্রবিরোধী ঘটনা ঘটে গেল।
গুজরাটের দ্বারকার সারদা পীঠের শঙ্করাচার্য স্বামী সদানন্দ সরস্বতী অবশ্য বলেছেন, ওইদিন প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে তিনি সেখানে যাচ্ছেন না। শৃঙ্গেরী সারদা পীঠের শঙ্করাচার্য স্বামী ভারতী তীর্থ এখনও স্পষ্ট করেননি তিনি যাবেন কী না।
গোটা দেশে চারজন শঙ্করাচার্য রয়েছেন। তারা হলেন, পুরীর গোবর্ধন মঠের শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতী, উত্তরাখণ্ডের যোশীমঠ বা জ্যোর্তিপীঠের শঙ্করাচার্য স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী, কর্ণাটকের শৃঙ্গেরী সারদা পীঠের শঙ্করাচার্য স্বামী শ্রী ভারতী তীর্থ এবং দ্বারকার সারদা পীঠের শঙ্করাচার্য স্বামী সদানন্দ সরস্বতী। হিন্দু ধর্মে এই শঙ্করাচার্যদের গুরুত্ব অপরিসীম। হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ও শাস্ত্রের সংরক্ষণে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেদের জ্ঞান এবং তার ব্যখ্যায় শেষ কথা শঙ্করাচার্যরাই। এই প্রেক্ষাপটে বহুলালোচিত রাম মন্দিরের উদ্বোধনের দিন অযোধ্যায় শঙ্করাচার্যদের উপস্থিত না থাকার ঘোষণায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গেছে দেশজুড়ে।
এদিকে, বিজেপিকে টার্গেট করে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী ধর্মকে রাজনীতির খেলায় ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘শঙ্করাচার্যরা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। ধর্মকে ধর্মস্থানে না রেখে তাকে রাজনীতির খেলায় ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজনীতির সওদায় ব্যবহার করা হচ্ছে। কাউকে অবতার বানাবার জন্য রামকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা ধর্মের কাজ নয়, এটা ধর্মের কাজ হতে পারে না। ধর্ম হল মানুষের বিশ্বাস, তাকে রাজনীতির সওদায় ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে ধর্মকে কলুষিত করা হয়।’
তৃণমূলের মুখপাত্র শান্তনু সেন এমপি বলেছেন, যখন আমরা হিন্দু ধর্মের ধারক বাহক শঙ্করাচার্যদের বলতে শুনি, এই আচরণটা উন্মাদের মতো। যখন তারা পরিষ্কার করে বলেন, মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা শুধুমাত্র সেবায়েতদের আছে। সেখানে নরেন্দ্র মোদী কেবলমাত্র রাজনৈতিক চাটুকারিতা এবং রাজনৈতিক গিমিকের জন্যে একটা অর্ধসমাপ্ত মন্দিরে এভাবে তিনি প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন, আর শঙ্করাচার্যরা বাইরে হাততালি দেবেন, সেজন্য শঙ্করাচার্যরা এটা বয়কট করেন তখন এটা প্রমাণ হয় যে শুধুমাত্র পাবলিসিটি মাস্টারের আরেকটা রাজনৈতিক চমক।’
অন্যদিকে, বিজেপি মুখপাত্র শমিক ভট্টাচার্যের দাবি-পৃথিবীর দীর্ঘকাল ধরে চলা আন্দোলন। ৬৭ টা যুদ্ধ, সাড়ে তিন লাখ মানুষের মৃত্যু। তার মধ্যে দিয়ে হেঁটে আজকে রাম মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। এটা রামের ইচ্ছায় হচ্ছে। এটাই রামলীলা বলেও মন্তব্য করেছেন বিজেপির সিনিয়র নেতা শমিক ভট্টাচার্য। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/১৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।