অসমের ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে ৯৮ শতাংশ মুসলিম বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন
(last modified Thu, 18 Jan 2024 11:07:58 GMT )
জানুয়ারি ১৮, ২০২৪ ১৭:০৭ Asia/Dhaka
  • রাহুল গান্ধি এবং মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল।
    রাহুল গান্ধি এবং মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল।

অসমের ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে ৯৮ শতাংশ মুসলিম বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন এআইইউডিএফ প্রধান মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল এমপি।

মাওলানা আজমল সম্প্রতি ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী এমপিকে লেখা চিঠিতে ওই মন্তব্য করেছেন। এবং এজন্য তিনি কংগ্রেসের নীতিকে দায়ী করে রাহুল গান্ধীকে ডিটেনশন ক্যাম্পগুলো পরিদর্শনের জন্য অনুরোধ করেছেন। আজই ‘ভারত জোড়ো পদযাত্রা’ কর্মসূচিতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অসমে পৌঁছেছেন।

এআইইউডিএফ প্রধান মাওলানা আজমল কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করার জন্য অভিযুক্ত করার পাশাপাশি কংগ্রেসের একাংশের বিরুদ্ধে উগ্রহিন্দুত্ববাদী আরএসএস, বিশ্বহিন্দু পরিষদ ও বিজেপির হয়ে কাজ করার অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগ- অসমের তৃণমূলস্তর থেকে শীর্ষস্তর পর্যন্ত কংগ্রেসের সবাই বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার সঙ্গে রয়েছে।  

এ প্রসঙ্গে আজ (বৃহস্পতিবার) অসমের হাইলাকান্দি জেলার বিশিষ্ট সমাজকর্মী আব্দুল মান্নান লস্কর রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘আজমল সাহেব সত্যি বলেছেন যে, কংগ্রেস বিজেপির বা হিমন্তের পকেটে আছে। তবে কংগ্রেসের কিছু কিছু নেতা সততার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। এবং বিজেপি বা হিমন্ত সাহেবের এজেন্ডাগুলোর সঙ্গে তারা কিন্তু নেই। এবং বর্তমানে রাম মন্দির নিয়ে যে হৈচৈ হচ্ছে তার পিছনে রূপরেখা কিন্তু কংগ্রেসই বানিয়েছিল। ’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন রাজ্যে দাঙ্গা হয়েছিল কংগ্রেসের আমলে। অর্থাৎ, কংগ্রেসকে বিজেপির এজেন্ডাগুলোকে অনেক সময়ে আমরা বাস্তবায়ন করতে দেখেছি। কিন্তু এখানে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, কংগ্রেসের নেতৃত্বরা বিজেপির বা হিমন্ত সাহেবের পকেটের লোক হয়ে কাজ করছেন। এতে সন্দেহ থাকার কিছু নয়, এটা বাস্তব। অবাস্তব কিছু বলেননি বদরউদ্দিন আজমল সাহেব।

অসমের হাইলাকান্দি জেলার বিশিষ্ট সমাজকর্মী আব্দুল মান্নান লস্কর

তবে, আজমল সাহেবের লজ্জা করা উচিত, কংগ্রেস যদি বিজেপির বি-টিম হয়, আজমল সাহেবরা কিন্তু বিজেপির বি-প্লাস প্লাস টিম! বিশেষ করে সোনাইয়ের বিধায়ক করিমউদ্দিন। উনি কিন্তু বিজেপি বা হিমন্তের সবচেয়ে কাছের লোক! এজন্য আজমল সাহেবদের লজ্জা করা উচিত ছিল যে অন্যের দোষগুলো দেখার আগে নিজেদের দোষগুলো  দেখা। বিজেপির এজেন্ডাগুলোকে বাস্তবায়ন করার জন্য তারাও কাজ করে যাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন অসমের হাইলাকান্দি জেলার বিশিষ্ট সমাজকর্মী আব্দুল মান্নান লস্কর।  

অন্যদিকে, এআইইউডিএফ প্রধান মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনি অসমে নেলি গণহত্যা, বঙ্গাইগাঁওয়ের বাঁশবাড়ি হত্যা, দরং-উদালগুড়ি সংঘর্ষ, চাউলখোয়া গণহত্যা, ভাষা আন্দোলন, বিটিডি সংঘর্ষে নিহত লক্ষাধিক মুসলমানের কবরে যান। প্রত্যেক শহীদের পরিবারে যান এবং ক্ষমা চান। ওই সময়ের দুঃখ-বেদনা কখনও ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলা যাবে না। 

মাওলানা আজমল বলেছেন, প্রফুল্লকুমার মহন্ত সরকার দশ বছরে নব্বই হাজার ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলিমের নামের আগে ডি-ভোটার (সন্দেহজনক ভোটার) তকমা দেওয়া হয়েছে। (কংগ্রেসের) তরুণ গগৈ সরকার আরও পাঁচ লাখ মুসলিমকে ডি-ভোটার সাজিয়েছে। তা সত্ত্বেও মুসলিমরা তরুণ গগৈকে দু’বার জয়ী করেছে। এর বিনিময়ে তরুণ গগৈ সরকার মুসলিমদের জন্য ডিটেনশন ক্যাম্প বানিয়েছে। আমাদের মা-বোনের জন্য এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় ডিটেনশন ক্যাম্প বানিয়েছে গগৈ সরকার।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে লেখা চিঠিতে মাওলানা আজমল  ডিটেনশন ক্যাম্প পরিদর্শনের অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, ভারতে মুসলিম ১৮ শতাংশ, অসমে ৩৪ শতাংশ। অথচ অসমের ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে ৯৮ শতাংশ মুসলিম বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। এনআরসি (জাতীয় নাগরিক পঞ্জি) সমস্যারও সমাধান করেননি তরুণ গগৈ। বন্যা ও ভাঙন সমস্যার জন্য অনেক লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন একজনকেও ডিসপ্লেসড সার্টিফিকেট দেয়নি। এরফলে বাস্তুচ্যুত লোকেরা বর্তমানে ‘বাংলাদেশি’ তকমা নিয়ে বাস করছেন বলেও মন্তব্য করেছেন এআইইউডিএফ প্রধান মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল এমপি। # 

পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/১৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।