সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম শুনানি, স্থগিতাদেশ দিল না আদালত
ভারতে বহুলালোচিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা ‘সিএএ’-র বিরুদ্ধে দায়ের করা ২০০ টিরও বেশি আবেদনের উপর আজ সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বর্তমানে ‘সিএএ’তে কোনো স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেছে। ওই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ৯ এপ্রিল।
আজ (মঙ্গলবার) প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বিচারপতি জেবি পরদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র’র সমন্বিত বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালত তিন সপ্তাহের মধ্যে ‘সিএএ’ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জবাব চেয়েছে। শুনানির সময়, প্রধান বিচারপতি কেন্দ্রীয় সরকারকে জানতে চেয়েছিলেন ‘সিএএ’ বিজ্ঞপ্তির উপর নিষেধাজ্ঞার দাবিতে আবেদনের জবাব দিতে তাদের কতটা সময় প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে উপস্থিত হওয়া সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা ৪ সপ্তাহের সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু আদালত জবাব দাখিল করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে তিন সপ্তাহ সময় দিয়েছে। পরবর্তী শুনানি হবে ৯ এপ্রিল।
শুনানির সময় আইনজীবী নিজাম পাশা বলেন, সিএএ-র কারণে মুসলমানদের নাগরিকত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। সলিসিটর জেনারেল বলেন, এটি এনআরসি নয়। এর আগেও মানুষকে বিভ্রান্ত করে উসকানি দেওয়া হয়েছিল। এটা করা অন্যায়। এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, উভয় পক্ষকে ৫ পৃষ্ঠার লিখিত সংক্ষিপ্ত নোট জমা দিতে হবে। ৮ এপ্রিলের মধ্যে সরকারকে জবাব দিতে হবে।
আবেদনকারীদের একজনের পক্ষে বিশিষ্ট আইনজীবী কপিল সিব্বল কেন্দ্রীয় সরকারকে সময় দেওয়ার বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘সিএএ’ চার বছর ধরে চলছে। মানুষ একবার নাগরিকত্ব পেলে তা ফেরত নেওয়া কঠিন হবে। তিনি বলেন, এর পর এসব আবেদন অকার্যকর হয়ে যাবে। কপিল সিব্বল বলেন, আমরা সময়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি না, চার বছর পর আর কিসের জরুরী? সেই সঙ্গে কপিল সিব্বল আদালতের কাছে বিজ্ঞপ্তির ওপর স্থগিতাদেশের দাবি জানান।
আবেদনকারীর পক্ষে ইন্দিরা জয়সিংহ নামে আরেকজন বিশিষ্ট আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হয়ে ‘সিএএ’ স্থগিত করার দাবি করেন। তিনি বলেন, বিষয়টি বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানো উচিত। একই সময়ে, প্রধান বিচারপতি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারকে উত্তর দেওয়ার জন্য কিছু সময় দেওয়া যেতে পারে, কারণ তারা আরও কিছু সময় চাওয়ার অধিকারী।
জানা গেছে, বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ‘সিএএ’-র বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে এ পর্যন্ত মোট ২৩৭টি আবেদন জমা পড়েছে। সর্বশেষ মামলাটি দায়ের করেছে কেরালা সরকার। তারা সম্প্রতি ‘সিএএ’র সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্য আদালতে যায়। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সরকার আগেই ঘোষণা করেছিল, তারা রাজ্যে সিএএ কার্যকর করতে দেবে না। ‘সিএএ’র নিয়মগুলোকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে কেরালা সরকার বলছে, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া বৈষম্যমূলক, অন্যায্য এবং সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের পরিপন্থী।সম্প্রতি ‘সিএএ’বাস্তবায়নে স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) দলের প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। এ ছাড়া কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ, তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র, সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই, কেরালার ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে ওই ইস্যুতে আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে।
২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর সংসদে ‘সিএএ’ পাশ করিয়েছিল কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে সিএএ কার্যকর করা নিয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। গত ১১ মার্চ কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে সারা দেশে সিএএ বিধি কার্যকর করার কথা জানানো হয়। এরপরেই ওই ইস্যুতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ওই আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে নিপীড়নের জন্য এ দেশে আসা শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ওই দেশগুলো থেকে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি সিএএ-তে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এই আইনে ‘মুসলিম’দের কথা বলা হয়নি। অর্থাৎ ওই ছয় সম্প্রদায় ছাড়া অন্য কোনও সম্প্রদায়ের শরণার্থীকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। এই ‘বৈষম্য’ কেন,তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/জিএআর/১৯