অসম বিধানসভায় মাদ্রাসা বন্ধের বিল পেশ, বিরোধীদের প্রতিবাদ
(last modified Tue, 29 Dec 2020 12:26:04 GMT )
ডিসেম্বর ২৯, ২০২০ ১৮:২৬ Asia/Dhaka
  • অসম বিধানসভায় মাদ্রাসা বন্ধের বিল পেশ, বিরোধীদের প্রতিবাদ

ভারতের বিজেপিশাসিত অসমে সরকার পোষিত মাদ্রাসা বন্ধের জন্য বিধানসভায় বিল পেশ হওয়ায় বিরোধী বিধায়করা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মাদ্রাসাগুলোকে সাধারণ স্কুলে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেই উদ্দেশ্যে গতকাল (সোমবার) ১৯৫৫ সালের অসম মাদ্রাসা শিক্ষা (প্রাদেশিকরণ) আইন এবং ২০১৮ সালের মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের চাকরি প্রাদেশিকরণ ও পুনর্গঠন আইন বাতিলের জন্য বিধানসভায় বিল আনা হয়েছে।

সোমবার রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা দ্য অসম রিপিলিং বিল ২০২০ বিধানসভায় উত্থাপন করলে এআইইউডিএফ ও কংগ্রেস বিধায়করা তার বিরোধিতা করেন। তীব্র হট্টগোলের মধ্যে বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি গ্রাহ্য না হওয়ায় এক পর্যায়ে বিরোধীরা বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করেন।        

ওই বিষয়ে আজ (মঙ্গলবার) নাদওয়াতুত তামীর সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র এবং অসমের সাবেক বিধায়ক মাওলানা আতাউর রহমান মাজারভুঁইয়া  রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘অসমের বর্তমান বিজেপি  সরকার, বিশেষকরে বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে, সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে এটা করা হয়েছে।

নির্বাচনে হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণের মধ্যদিয়ে বিজেপি’র ভোট বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ওই বিল এনেছে। এভাবে হিন্দু ভোটারদের তাঁরা বোঝাতে চায় যে বিজেপি সরকার অসমে মুসলিমদের কোনও সুযোগ সুবিধা দেবে না। এ ধরণের মনোবৃত্তিতে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে ভোটের মেরুকরণ করতে চাচ্ছে। এবং হিমন্তবিশ্ব শর্মা তাঁর অনেক দিন ধরে অন্তরে লালায়িত আশা যে উনি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হবেন, ওই উদ্দেশ্যে তিনি বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের চেয়েও আরও কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাব দেখাচ্ছেন যাতে হিন্দু ভোটাররা তাঁকে পরবর্তীতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়।

মাওলানা আতাউর রহমান মাজারভুঁইয়া

কিন্তু আমরা ওই ঘটনার প্রতিবাদ করতে থাকব। বিরোধিতা করতে থাকব। কারণ সংখ্যালঘুদের প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা শিক্ষা সংবিধান সম্মত। ওই সংবিধান বিরোধী পদক্ষেপের বিরোধিতায় আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেও প্রতিবাদ চালিয়ে যাব। এবং আমরা আইন বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি আমরা ইতোমধ্যে গঠন করেছি। আমরা আইন বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে তীব্রভাবে আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। আমাদের বিশ্বাস, ওই লড়াইয়ে আমরা জয়ী হবো। হিমন্তবিশ্ব শর্মার উদ্দেশ্য সফল হবে না।’

অসমের শিক্ষা মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা তাঁর সাফাইতে বলেছেন, ‘যদি সরকারি টাকায় মাদ্রাসায় কোরআন পড়ানো চলতে থাকে তাহলে তো হিন্দু কিংবা খ্রিস্টান বিধায়করা এই প্রশ্নও তুলতে পারেন যে, কেন গীতা পড়ানো হবে না? তাঁর বক্তব্য, বিলে কোথাও বলা হয়নি যে আরবি ভাষা পড়ানো হবে না। মাদ্রাসায় শুধু আরবিপড়ানো হলে রিপিলিং বিল আনার প্রয়োজন হতো না। আরবি শিক্ষা বন্ধ হচ্ছে না। সরকারি টাকায় কোরআন পড়ানো বন্ধ হচ্ছে।’

কংগ্রেসের বিধায়ক কমলাক্ষ দেপুরকায়স্থ বলেন, ‘এই বিলে সাধারণ মানুষের কী লাভ? আসলে বিভেদ তৈরি করে ভোটের মুখে মেরুকরণের হাওয়া বইয়ে দিতেই ওই বিল আনা হয়েছে।’ কংগ্রেস বিধায়ক নুরুল হুদা বলেন, ‘মাদ্রাসা বন্ধ হলে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের সঙ্গে অন্যায় করা হবে।’ কংগ্রেস বিধায়ক শেরমান আলী আহমেদ বলেন, ‘মুসলিম ছাড়াও অন্যান্য জাতির জনগোষ্ঠীর মানুষ আরবি শিক্ষা নেন। শুধু ১ কোটি ১০ লাখ মানুষই নয়, এতে ৩.৪০ কোটি মানুষের ক্ষতি হতে পারে।’

অন্যদিকে, অসম মাদ্রাসা শিক্ষক সংস্থার প্রেস সচিব ফারুক আহমেদ বলেন, ‘সরকারি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা বিলোপ করার জন্য বিধানসভায় যে বিল পেশ করা হয়েছে তা মেনে নেওয়া যায় না। স্বাধীনতার আগে থেকেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মাদ্রাসা শিক্ষা চলছে। অসমে সরকার স্বীকৃত বোর্ড মাদ্রাসা শিক্ষা পরিচালনা করে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ওই শিক্ষা ব্যবস্থা আইন করে বন্ধ করা যায় না।’ মাদ্রাসা শিক্ষক সংস্থা কোনোভাবেই ওই বিষয়টি মেনে নেবে না বলেও মাদ্রাসা শিক্ষক সংস্থার প্রেস সচিব ফারুক আহমেদ মন্তব্য করেন।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/ বাবুল আখতার/২৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

ট্যাগ