৬ বছর পরও আদালতে আটকে আছে চাঞ্চল্যকর আখলাক হত্যা মামলা
https://parstoday.ir/bn/news/india-i97982-৬_বছর_পরও_আদালতে_আটকে_আছে_চাঞ্চল্যকর_আখলাক_হত্যা_মামলা
ভারতে ছয় বছর আগে উত্তর প্রদেশের দাদরিতে মুহাম্মাদ আখলাক নামে এক ব্যক্তিকে হিন্দুত্ববাদী উন্মত্ত জনতা পিটিয়ে হত্যা করেছিল। ওই ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছিল। এর প্রতিবাদে মানুষজন বিক্ষোভ শামিল হয়েছিলেন, স্লোগান দিয়েছিলেন।
(last modified 2025-10-12T12:48:31+00:00 )
সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১ ১৪:১৯ Asia/Dhaka
  • আখলাকের স্বজনদের আহাজারি (ফাইল ফটো)
    আখলাকের স্বজনদের আহাজারি (ফাইল ফটো)

ভারতে ছয় বছর আগে উত্তর প্রদেশের দাদরিতে মুহাম্মাদ আখলাক নামে এক ব্যক্তিকে হিন্দুত্ববাদী উন্মত্ত জনতা পিটিয়ে হত্যা করেছিল। ওই ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছিল। এর প্রতিবাদে মানুষজন বিক্ষোভ শামিল হয়েছিলেন, স্লোগান দিয়েছিলেন।

ওই মামলায় ১০০ বারেরও বেশি শুনানি হয়েছে কিন্তু ঘটনার ৬ বছর পরেও মামলাটি সেশন আদালতে আটকে আছে। সমস্ত অভিযুক্তরা জামিনে আছে। শুধু তাই নয়, এমনকি এই মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণও শেষ হয়নি। এই পরিস্থিতি শুধু আখলাক মব লিঞ্চিংয়ের ঘটনা নয়, দেশে এ ধরণের অনেক মামলা আছে যা দীর্ঘদিন পরেও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত।     

ঘটনা-১ : মুহাম্মাদ আখলাক, দাদরি, উত্তর প্রদেশ

২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর, রাত সাড়ে ১০টার দিকে দাদরির বিসাহড়া গ্রামে মুহাম্মাদ আখলাক নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে লাঠি, ডাণ্ডা নিয়ে কিছু কিছু উন্মত্ত জনতা প্রবেশ করে। তারা বাড়িতে গরুর গোশত আছে সন্দেহে ৫০ বছর বয়সী মুহাম্মাদ আখলাককে পিটিয়ে হত্যা করে এবং আখলাকের ছেলে দানীশকে ব্যাপকভাবে মারধর করে। দানীশের দাদী ও আখলাকের মাকেও ওই উন্মত্ত জনতা শ্লীলতাহানি করেছিল বলে অভিযোগ।

মামলার বর্তমান অবস্থা    

দায়রা আদালতে তদবির করা মুহাম্মাদ আখলাকের পক্ষের আইনজীবী ইউসুফ সাইফি বলছেন, ঘটনার ৬ বছর পরেও মামলার রায় আসতে আরো কত সময় লাগবে, কিছুই বলা যাচ্ছে না। ১৬ অভিযুক্ত’র সবাই জামিনে আছে। বর্তমানে ওই মামলায় সাক্ষ্যপ্রমাণের শুনানি চলছে এবং জবানবন্দি রেকর্ড করা হচ্ছে। উত্তর প্রদেশ সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মানছে না। এখনও দায়রা আদালতের সিদ্ধান্ত আসতে এক থেকে দেড় বছর বা তারও বেশি সময়ও লাগতে পারে।    

বেঁচে থাকতে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা কম 

মোহাম্মদ আখলাকের ছোট ভাই জান মুহাম্মদ সাইফি বলেন, যখন এই ঘটনাটি ঘটেছিল তখন গোটা পরিবার বিসাহড়া গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিল এবং এখন তারা দাদরি শহরে থাকে। ঘটনার ৬ বছর পরেও এই মামলার রায় কবে হবে তা স্পষ্ট নয়। মুহাম্মাদ সাইফি আরও বলেন- 'অভিযুক্ত পক্ষের লোকেরা আপোষের জন্য চাপ দিচ্ছে। আমরা আশা করি আমরা ন্যায়বিচার পাব। আখলাকের মা এবং স্ত্রী জীবিত অবস্থায় মনে হয় না যে, এই মামলার রায় দেখতে পারবেন।  

জুনায়েদ খান

ঘটনা-২ : জুনায়েদ খান, ফরিদাবাদ, হরিয়ানা

২০১৭ সালের ২২ জুন ফরিদাবাদের বাসিন্দা জুনায়েদ খান দিল্লি-মথুরা লোকাল ট্রেনে সফরের সময়ে ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এ সময়ে জুনায়েদের ভাই ও চাচাতো ভাইও গুরুতর আহত হয়েছিলেন। কথিত আসনে বসাকে কেন্দ্র করে একটি বিবাদ শুরু হওয়ার পরে জুনায়েদ মারমুখী জনতার দ্বারা আক্রান্ত হন। জুনায়েদ ভাইদের সঙ্গে কেনাকাটা শেষে দিল্লি থেকে ফিরছিলেন

জুনায়েদ গণপিটুনির ঘটনায় আইনজীবী নিবরাস আহমেদ মামলাটি দেখাশোনা করছেন। তিনি বলেন- 'আমাদের মামলা দায়রা আদালতে চলছিল এবং এতে সাক্ষীদের হাজির হওয়ার কথা ছিল। তদন্ত সংস্থা জামিন আবেদনের শুনানির ঠিক আগে অভিযুক্তদের উপর থেকে ৩০২ এবং ৩০৭ ধারার মত গুরুতর ধারা সরিয়ে দিয়েছিল। এরপরে, অভিযুক্তরা সহজেই জামিন পেয়ে যায়। পুনরায় শুনানি হলে আমরা আমাদের সাফাই দিয়েছিলাম। এ পর্যন্ত ২ জনের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারার অধীনে চার্জ ফ্রেম করা হয়েছে। কিন্তু বাকি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়নি। জুনায়েদ হত্যা মামলায় ৭ জন অভিযুক্ত বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। প্রধান অভিযুক্ত নরেশ, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট থেকে শর্তসহ জামিন পেয়েছেন।

আইনজীবী নিবরাস বলেন- 'যখনই আমাদের ‘এসএলপি’র সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হবে, এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তদেরকে আদালত বা তদন্তকারী সংস্থার সামনে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এবং এরপরে আমরা দাবি করব যে এ ক্ষেত্রে এই মামলা দ্রুত বিচারের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসা হোক। কিন্তু এ সবের জন্য কত সময় লাগবে তা বলা যাচ্ছে না।’     

জুনায়েদের পরিবার হরিয়ানার ফরিদাবাদের খান্ডাওয়ালি গ্রামে থাকে। সাংবাদিকরা সম্প্রতি তার বাসায় পৌঁছে তার মা সায়রা এবং ভাইদের সাথে দেখা করেন। জুনায়েদ মামলার কথা শুরু হতেই জুনায়েদের মায়ের চোখের জল ঝরতে শুরু করে। তিনি জুনায়েদের পুরানো ছবি দেখাতে শুরু করেন এবং বলেন, 'আজ ৪ বছর ৩ মাস হয়ে গেছে,  কিন্তু এখনও পর্যন্ত হত্যাকারীদের কোন শাস্তি দেওয়া হয়নি, 'তারা সবাই অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটা কোন ধরনের ন্যায়বিচার? আমরা প্রতিদিন জুনায়েদের স্মৃতিতে মারা যাচ্ছি।’ 

রাকবর খান

ঘটনা-৩ : রাকবর খান, আলওয়ার, রাজস্থান

২০১৮ সালের ২০ জুলাই রাতে, হরিয়ানার কোলগাঁওয়ের বাসিন্দা রাকবর খানকে রাজস্থানের আলওয়ার জেলার লালাবান্দি গ্রামে কথিত গোরক্ষকরা মারধর করে। ৩১ বছর বয়সী রাকবর খান তাঁর বন্ধু আসলাম খানের সঙ্গে রাজস্থানের লাদপুরা গ্রাম থেকে গরু কিনে পায়ে হেঁটে ফিরছিলেন। এসময়ে হামলাকারী জনতা তাকে রামগড় থানার অন্তর্গত লালাবান্দি গ্রামে বাধা দেয়। জনতার গণপিটুনিতে মারা যান রাকবার খান। এ সময় আসলাম হামলাকারী জনতার হাত থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

রাকবর হত্যা মামলার অবস্থা কী?  

ওই ঘটনার ৩ বছর ২ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও ওই মামলার শুনানি চলছে আলওয়ারের অতিরিক্ত জেলা জজ ১ নং-সারিতা স্বামীর আদালতে। সিনিয়র স্পেশাল প্রসিকিউশন অফিসার এনএ নাকভি, এই মামলায়  ক্ষতিগ্রস্তের মামলা লড়ছেন। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথোপকথনে তিনি বলেন- 'বর্তমানে আলওয়ার সেশন কোর্টে সাক্ষ্য-প্রমাণের শুনানি চলছে। অভিযুক্ত নওল কিশোরের বিরুদ্ধে একটি সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। দ্রুত রায়ের আশা কম।’

উল্লেখিত তিনটি মামলায় বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও, রায় কবে আসবে তা বলা যাচ্ছে না। সামাজিক সম্প্রীতি বিঘ্নকারী এসব ক্ষেত্রে দ্রুত শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকাও অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/২৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।