২৭ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত
ইরানে পালিত হবে কথিত মার্কিন মানবাধিকার পর্যালোচনা এবং স্বরূপ উন্মোচন সপ্তাহ
ইরানে আগামী ২৭ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত সময়কে কথিত মার্কিন মানবাধিকার পর্যালোচনা এবং স্বরূপ উন্মোচন সপ্তাহ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। এ সময়ে ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে আধিপত্যকামী মার্কিন প্রশাসনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অপরাধযজ্ঞের স্মরণ করা হবে।
ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক কমিশনের প্রধান ওয়াহিদ জালালজাদেহ গতকাল সোমবার এ সংস্থার তৃতীয় বৈঠকে কথিত মার্কিন মানবাধিকার পর্যালোচনা এবং স্বরূপ উন্মোচন এবং শোহাদায়ে হাফতম তীর স্মরণসভা সপ্তাহ প্রচারাভিযানে বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে লাখ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয় তুলে ধরার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আমেরিকার কথিত সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জালালজাদেহ বলেন, বিশ্বে প্রায় ৮ কোটি ৫০ লাখ লোক আমেরিকার কথিত আইনের মাধ্যমে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যেখানে আফগানিস্তানে কেবল লাখ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দাবিদার আমেরিকা ইরানের সরকার বিরোধী মোনাফেকিন গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এমন কি একে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য তাদেরকে সবুজ সংকেত দিয়েছে।
মার্কিন মানবাধিকার বিষয়ে ইরানের এই ঊর্ধ্বতন সংসদীয় কর্মকর্তার মন্তব্য অকাট্য তথ্যের আলোকে করা হয়েছে।মানবাধিকার, ব্যক্তি ও সামাজিক অধিকার এবং স্বাধীনতার সুরক্ষা এবং নাগরিক অধিকারের বিষয়ে মার্কিন সরকারের স্লোগান সত্ত্বেও মার্কিন সরকার সংখ্যালঘু আদিবাদী জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংস, অমানবিক এবং বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছে। এছাড়া সংখ্যালঘু, কৃষ্ণাঙ্গ এবং অভিবাসন প্রত্যাশীদের সাথে অমানবিক আচরণ যার মধ্যে শিশুদেরকে তাদের পিতামাতার কাছ থেকে আলাদা করা, কালো বর্ণের মানুষের বিরুদ্ধে মার্কিন পুলিশের অব্যাহত সহিংসতা ও তাদেরকে অকারণে বন্দী করা এবং মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি আক্রমণসহ আরো অনেক কিছু উল্লেখ করা যায় যার মাধ্যমে আমেরিকার কথিত মানবাধিকার রক্ষার মিথ্যা দাবিকে প্রতিফলিত করে।
এছাড়া, মহমারি করোনাভাইরাস চিকিৎসায় মার্কিন সমাজে নানা শ্রেণীর মানুষ বিশেষ করে জাতিগত নৃগোষ্ঠী চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছে। ইরানের সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতি বিষয়ক কমিশনের প্রধান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করে আরো বলেন: আমেরিকার জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র পাঁচ শতাংশ, কিন্তু বিশ্বের ২৫ শতাংশ বন্দী এই দেশের কারাগারে রয়েছে। আমেরিকায় ল্যাটিনো নারী, কৃষ্ণাঙ্গ ইত্যাদি জনগোষ্ঠী বিরুদ্ধে সহিংসতা ও নিপীড়নের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। তারপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে মানবাধিকারের রক্ষক এবং প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উপস্থাপন করে আসছে।
অন্যদিকে, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, ইরাক এবং সিরিয়ার মতো অনেক দেশে অন্যায় সামরিক অভিযান এবং হামলা ও সেখানে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করাসহ গুয়ানতানামো বে-এর মতো কুখ্যাত কারাগার প্রতিষ্ঠা করে সেখানে বন্দিদের ওপর অমানবিক এবং পাশবিক নির্যাতন চালানো মতো অনেক অন্ধকার রেকর্ড রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে পাশ্চাত্যের নেতা এবং বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষার একজন পুলিশ অফিসার হিসাবে হিসাবে প্রতি বছর অন্যান্য দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর একটি বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিদ্বন্দ্বী এবং শত্রু দেশগুলির ওপর হামলা চালানোর অজুহাত হিসেবে এসব প্রতিবেদনকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে আসছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে বেশ সুপরিচিত পেয়েছে। রাশিয়ার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ আন্দ্রানিক মাইগ্রানিয়ান বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। কিন্তু নিজ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কাউকে মন্তব্য করার অনুমতি দেয় না?
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের মতো অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে রিপোর্ট করেছে যার মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময় ইরানি জনগণকে চিকিৎসা সুবিধা এবং সরঞ্জাম প্রবেশে বাধা দেওয়া।#
পার্সটুড/ বাবুল আখতার/১৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।