ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা: বিশেষ ওষুধের সংকটের কারণে বহু রোগীর মৃত্যু!
(last modified Tue, 13 Sep 2022 13:34:44 GMT )
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ ১৯:৩৪ Asia/Dhaka
  • ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা: বিশেষ ওষুধের সংকটের কারণে বহু রোগীর মৃত্যু!

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক আলেনা দোহান আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। ইরানের ওপর পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞা বিভিন্ন ওষুধ সরবরাহ বিশেষ করে বিরল রোগে আক্রান্ত বিশেষ রোগীদের জন্য ওষুধ সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বলে তিনি তার প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে নতুন বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে আলেনা দোহান ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের মানবাধিকার সদর দফতরের আমন্ত্রণে ইরানে পৌঁছান এবং এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করেন। এই প্রতিবেদনের বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে এবং স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে এসব নিষেধজ্ঞার কি মাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে সে বিষয়ে গুরুত্বসহকারে আলোকপাত করেছেন।   

মূলত বিগত বছরগুলোতে ইরানী রোগীদের বিশেষ করে বিশেষ রোগে আক্রান্ত রোগীরা অনেক গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে এবং তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ প্রাণ হারিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানে ওষুধের তীব্র ঘাটতি দেখা দেয়। যদিও ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ওষুধের ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি করেছে কিছু ওষুধ উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল আমদানির প্রয়োজন হয় এবং এসব নিষেধাজ্ঞা সেসব পণ্য আমদানি করা থেকে প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তাই জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে "নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০১১ সাল থেকে ইরানে চিকিৎসা পরিষেবা সরবরাহ মারাত্মক সংকটে পড়েছে। 

এছাড়াও, নিষেধাজ্ঞার ফলস্বরূপ রোগীদের উপর প্রচুর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল কারণ ইরানের তেল রপ্তানির তীব্র হ্রাস স্বাস্থ্য খাতের বাজেটকে প্রভাবিত করেছিল এবং এটি রোগীদের বিশেষ করে বিরল রোগীদের জন্য ওষুধ সরবরাহের ব্যয় বাড়িয়েছিল। আলেনা দোহানের প্রতিবেদনে এটিও উল্লেখ করা হয়েছে যে নিষেধাজ্ঞাগুলো কিছু নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার, থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া, মাহিয়াক রোগ, এমএস, ইবি রোগ, অটিজম এবং নির্দিষ্ট ধরণের ডায়াবেটিস সহ বিরল রোগের উপর  বড় ধরনের  প্রভাব ফেলেছে।"

মিসেস দোহানের রিপোর্টে আরেকটি বিষয় হল যে কিছু ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি নিষেধাজ্ঞাগুলোকে কঠোরভাবে মেনে চলার কারণে এটি ইরানী রোগীদের উপর মারাত্মক পরিণতি বয়ে এনেছে। বিশেষ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে: "যদিও নিষেধাজ্ঞার ধারাগুলোতে বলা হয়েছে যে মানবিক কারণে ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম নিষেধজ্ঞার আওতাভুক্ত নয় তবে ইরানের আর্থিক, বাণিজ্যিক, শিপিং এবং বীমা কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক লেনদেনের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাবের কারণে ইরানে এসব প্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে এবং এখানে বিদেশী বিনিয়োগ ও ব্যবসা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। 

প্রাণঘাতী করোনা রোগের প্রাদুর্ভাবের পরও স্বাস্থ্যসেবা খাতে এবং ইরানের রোগীদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেমে থাকেনি, এমনকি করোনা ভাইরাসের বিস্তারের সাথে সাথে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত মাস্ক ও ওষুধ সরবরাহেও মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। পরিশেষে এটা বলা যেতে পারে যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ইরানের বিশেষ রোগীদেরকে ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক লক্ষ্য ও আকাঙ্ক্ষার কাছে "জিম্মি" করে তুলেছিল। যেখানে মানবাধিকার সনদের সার্বজনীন ঘোষণার ২৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের এবং তার পরিবারের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিশেষ করে খাদ্য এবং পোশাক নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত জীবনযাত্রার মান পাওয়ার অধিকার রয়েছে সেখানে ইরানি নাগরিকদের তা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।# 

পার্সটুডে/এমবিএ/১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।