মহড়ায় স্বেচ্ছাসেবী গণ-বাহিনী ও সীমান্ত-রক্ষা বাহিনীকেও যুক্ত করা হবে!
উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলে ইরানের সামরিক মহড়া সম্ভাব্য হুমকির প্রতি কঠোরতম বার্তা!
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি'র স্থল-বাহিনী দেশটির পূর্ব আযারবাইজান ও আর্দেবিল প্রদেশের আরাস অঞ্চলের (খোলা প্রান্তরে) গুরুত্বপূর্ণ সামরিক মহড়া শুরু করেছে। ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত দিক থেকে এ মহড়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
এই মহড়ায় ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী হেলিকপ্টার, আত্মঘাতী ড্রোন ও ছত্রী বাহিনী ব্যবহার করছে। আরাস নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, সংযোগ সড়কগুলো দখল ও নিয়ন্ত্রণ এবং উঁচু বা পাহাড়ি অঞ্চলগুলো দখল করাসহ আক্রমণাত্মক ধংসযজ্ঞ ইত্যাদি এই মহড়ার অন্যতম কর্মসূচী বলে সংশ্লিষ্ট সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ইরানের সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা জোরদার এবং সম্ভাব্য যে কোনো হুমকির কঠোর জবাব দেয়া এই সামরিক মহড়ার অন্যতম লক্ষ্য।
ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর মূল ৫টি বিভাগের অন্যতম হচ্ছে স্থল-বাহিনী। এ বাহিনীর সক্রিয় সদস্য সংখ্যা এক লাখেরও বেশি।
আরাস নদী-সংলগ্ন অঞ্চল ইরানের এ সামরিক মহড়ায় গণ-বাহিনী বা স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী (বাসিজ) ও সীমান্ত প্রতিরক্ষা বাহিনীকেও যুক্ত করা হবে।
ইরান এমন সময় এ সামরিক মহড়া চালাচ্ছে যখন তার সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলের ক্ষতি করতে ও এ অঞ্চলে আঘাত হানতে পশ্চিমা শক্তিগুলোর সহায়তা নিয়ে কোনো কোনো মহল সক্রিয় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ইরান এ অঞ্চলের দেশগুলোর সীমান্ত পরিবর্তনের চেষ্টার বিরুদ্ধেও হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে।
উল্লেখ্য নগেরনো কারাবাঘ অঞ্চল নিয়ে আযারবাইজান ও আর্মেনিয়ার যুদ্ধের পর ২০২০ সালের নয় নভেম্বরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যস্থতায় একটি শান্তি-চুক্তি স্বাক্ষর করে এ দুই দেশের সরকার। কিন্তু আযারবাইজান সরকার দক্ষিণ আর্মেনিয়া থেকে স্বায়ত্তশাসিত নখচিভান বা নখজাওয়ান প্রজাতন্ত্রের সীমান্ত পর্যন্ত করিডোর দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছে। বিজাতীয় শক্তিগুলো এ ব্যাপারে আযারবাইজানকে উস্কানি দিচ্ছে। এর আগে তুরস্ক সরকারও এমন দাবির কথা তুলেছিল।
আযারবাইজানকে এ ধরনের করিডোর দেয়া হলে ইরান-আর্মেনিয়া সীমান্তের যে ট্রানজিট সড়ক জর্জিয়া, রাশিয়া ও কৃষ্ণ সাগরকে আর্মেনিয়ার মাধ্যমে ইরানের সঙ্গে যুক্ত করেছে তা গুরুত্ব হারাবে, ফলে ইরান একটি অত্যন্ত লাভজনক ও কৌশলগত ট্রানজিট থেকে বঞ্চিত হবে। এ ছাড়াও এ করিডোর প্রতিষ্ঠা করা হলে আর্মেনিয়া ভেঙ্গে যাওয়ার ও এমনকি বিলুপ্ত হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দেবে। তাই ইরান এ অঞ্চলের দেশগুলোর ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্র পরিবর্তনের বিরোধিতা করে আসছে।
সম্প্রতি মস্কোতে ইহুদি এজেন্সি তার কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হওয়ায় ইহুদিবাদী ইসরাইল তার সহযোগী এই সংস্থার সদর-দপ্তর আযারবাইজানের রাজধানী বাকুতে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছে। এই সংস্থা আযারবাইজানে রুশ ইহুদিদেরকে এনে এ অঞ্চলে তাদেরকে সক্রিয় করতে চায়। ফলে ইসরাইল ইরানের সীমান্ত অঞ্চলে ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালানোর সুযোগ পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আসলে এ অঞ্চলে ইসরাইলকে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ দেয়া মানে হচ্ছে খাল কেটে কুমির নিয়ে আসা।
এ অবস্থায় এই অঞ্চলের কাছে ইরানের সামরিক মহড়া ইসলামী এই দেশটির সামরিক শক্তিমত্তার একাংশ তুলে ধরার পাশাপাশি হঠকারী ও সম্প্রসারণকামী শক্তিগুলোর জন্য কঠোরতম বার্তাও তুলে ধরছে। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/১৭