ইরানে সহিংসতার নেপথ্যে:
ইরানে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে ব্যর্থতা: লন্ডন ভিত্তিক দুটি মিডিয়ার পরস্পর বিরোধী অবস্থান
ইরানের সাম্প্রতিক গোলযোগে বিদেশী মিডিয়াগুলো কার্যত যুদ্ধ কক্ষে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়ে তারা যেন প্রাণ হারিয়েছে।
সেপ্টেম্বরের শেষদিক থেকে ইরানের বিভিন্ন এলাকায় নৈরাজ্য দেখা দেয়। শুরু থেকেই ওই নৈরাজ্য ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে নতুন-পুরাতন কিছু মিডিয়ার ভূমিকা ছিল সুস্পষ্ট। বিশেষ করে বিবিসি ফার্সি এবং ইরান ইন্টারন্যাশনাল লন্ডন-ভিত্তিক দুটি ফার্সি ভাষার মিডিয়া ইরানে সংঘটিত বিক্ষোভকে দাঙ্গায় পরিণত করতে এবং নৈরাজ্যের আগুনে ঘি ঢালতে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালায়। প্রকৃতপক্ষে, বিবিসি ফার্সি এবং ইরান ইন্টারন্যাশনাল এমন দুটি মিডিয়া যেগুলো নৈরাজ্যর নেপথ্যে কাজ করেছে।
ইরানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে এই মিডিয়াগুলি যেসব কৌশল অবলম্বন করে তার মধ্যে একটি ছিল মিথ্যাচার। নতুন নতুন মিথ্যাচার তৈরি করে সেগুলোকে বারবার প্রচার করেছে তারা। এসব করে তারা চেয়েছে ইরানি জনতার বিক্ষোভকে ঘৃণায় পরিণত করে নৈরাজ্যকে বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে দিতে। নৈরাজ্য ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে তারা এমনকি হত্যাকাণ্ডকেও বেছে নিয়েছিল। এই মিডিয়াগুলো ৪৬ দিনে ইরান পরিস্থিতি সম্পর্কে অন্তত ৩৮ হাজার মিথ্যা তথ্য প্রচার করেছে।
ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-কক্ষে পরিণত হওয়া এই মিডিয়াগুলোর ভাবমূর্তি এখন বিবিসি'র রিপোর্টারের অডিও ফাইল ফাঁস হবার কলঙ্কিত হতে শুরু করেছে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া অডিও ফাইলে বিবিসি'র রিপোর্টার রানা রাহিমপুর স্পষ্টভাবেই ইরানের অভ্যন্তরীণ নৈরাজ্যে তাদের বিচ্ছিন্নতাকামী ভূমিকার কথা বলেছেন।
রানা রাহিমপুর স্পষ্টভাবে বলেছেন: ইরান ইন্টারন্যাশনাল সরাসরি বলেছিল শুধুমাত্র ইরানের বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলোর নেতাদের সাক্ষাৎকারই নিতে হবে এবং তাদের কথাই প্রচার করা হবে। বিবিসি সাংবাদিকের এই অডিও ফাইল ফাঁস হয়ে পড়ায় ইরান ইন্টারন্যাশনালে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ইরান ইন্টারন্যাশনাল টিভি চ্যানেলটি সরাসরি সৌদি আরবের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে। রানা রাহিমপুরের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে চ্যানেলটি এখন বিবিসির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে বিবিসি ব্রিটিশ জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত হয়। একইসঙ্গে ইরান ইন্টারন্যাশনাল রাহিমপুরকে বিবিসি-তে ইরানের অনুপ্রবেশকারী সাংবাদিক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা আরও অভিযোগ করেছে রাহিমপুর নিরপেক্ষতা ও বাক-স্বাধীনতার নামে বিবিসি'র মাধ্যমে ইরানের পক্ষেই কাজ করছে।
ইরানের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বিভাগ নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়ার পরপরই শত্রুদের পরিকল্পনা বুঝে ফেলে। তারা দৃশ্যপট বিশ্লেষণ করে ইরানকে বিভক্ত করার শত্রুদের টার্গেট সম্পর্কে সতর্ক করে। এই সময়ের মধ্যে ইরান ইন্টারন্যাশনাল ২৫টি বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের নেতাদের অন্তত ১২৫টি সাক্ষাৎকার প্রচার করে। সেই ইরান ইন্টারন্যাশনাল এখন বিবিসি'র বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রমাণ করেছে: বিদেশিদের বাক-স্বাধীনতার দাবি একটি বুলি মাত্র। বাস্তবে তারা বাক-স্বাধীনতার পক্ষে নয়। তাদের বাক-স্বাধীনতার দাবি মিডিয়া সাম্রাজ্যবাদের কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়।#
পার্সটুডে/এনএম/১২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।