ইরানেরও পাল্টা ব্যবস্থা: ২ জার্মান কূটনীতিককে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে বহিষ্কার
(last modified Thu, 02 Mar 2023 14:46:49 GMT )
মার্চ ০২, ২০২৩ ২০:৪৬ Asia/Dhaka

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানয়ানি জানিয়েছেন, দুই জার্মান কূটনীতিককে অবাঞ্ছিত হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদেরকে ইরান থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইরানের ‘অভ্যন্তরীণ ও বিচারবিভাগীয় কাজে’ বার্লিনের হস্তক্ষেপের অভিযোগে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল (বুধবার) এ নির্দেশ দিয়েছে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম ইউরোপের মহাপরিচালকের মাধ্যমে জার্মান রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান যেকোনো বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সর্বদা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সবার সঙ্গে পারস্পরিক সম্মানজনক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে তবে কোনো পক্ষ যদি ইরানের নীতি এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বকে উপেক্ষা করতে চায় তবে তেহরানও পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয় না।  

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রিংলিডারকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ইরানের একটি আদালত। ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর একটি হামলায় অন্তত ১৬ জন ইরানি নাগরিক নিহত হয়েছিল। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির রিংলিডারের বিচারের প্রতিবাদে জার্মানি দুজন ইরানি কূটনীতিককে বহিষ্কার করে এবং তার এক সপ্তাহ পর ইরান থেকে দুই জার্মান কূটনীতিককে বহিষ্কারের আদেশ দেয়া হলো।

সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রিং লিডার জামশিদ শারমেহেদ পশ্চিমাদের সমর্থিত এবং আর্থিক সাহায্যপুষ্ট হয়ে এই গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীদেরকে ইরানজুড়ে বিস্ফোরক দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। তার এসব কর্মকাণ্ড ইরানে নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও তা জোরদার করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় অংশীদারদের চাহিদার সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।

গত দুই দশক আগে শারমহেদ পাহলভি শাসনের স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কিংডম অফ ইরান অ্যাসোসিয়েশন শিরোনামে ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করে এবং ইরানের পবিত্র স্থানের অবমাননার পাশাপাশি সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনা করে আসছে। ২০০৮ সালে সালে শিরাজের সাইয়েদুশ শোহাদাহ হোসেইনিয়েহ-তে তান্দুর সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বোমা হামলায় ১৪ জন ইরানী নাগরিক শহীদ হওয়ার পাশাপাশি ৩০০ জন আহত হয়েছিল। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা  ইরানে আরো বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করেছিল। যেমন শিরাজে বাঁধ উড়িয়ে দেওয়া এবং তেহরানের বইমেলায় সায়ানাইড বোমার বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা চালানো। তবে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর গোয়েন্দা ইউনিটের তড়িৎ তৎপরতার কারণে সন্ত্রাসীদের এসব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি ইরানের অন্যতম পারমাণবিক বিজ্ঞানী "মাসুদ আলিমোহাম্মাদি"কে  হত্যায়ও ভূমিকা রেখেছিল। 

ইরানের বিরুদ্ধে আট বছর ধরে চাপিয়ে দেয়া যু্দ্ধে জার্মান সরকারের মাধ্যমে ইরাকের সাদ্দাম বাহিনীকে রাসায়নিক অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টিও এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। ইরাককে যখন সব ধরনের অস্ত্রসস্ত্র দিয়েও ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেতানো সম্ভব হচ্ছিল না তখন পশ্চিম জার্মানি বাগদাদকে নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে। জার্মানির কাছ থেকে রাসায়নিক উপাদান ও প্রযুক্তির চালান পেয়ে ইরাকের সাদ্দাম সরকার ইরানের বিরুদ্ধে ছয় হাজার টন রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করে। ইরাক সরকার ইরানের সারদাশত শহরে রাসায়নিক অস্ত্র নিক্ষেপ করে অন্তত এক হাজার ১০০ মানুষকে হত্যা করে। #

পার্সটুডে/বাবুল আখতার/২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ