ইমাম খোমেনী এবং আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ঐশী শিক্ষার সমন্বয়
প্রাচীন পশ্চিমা রাজনৈতিক দার্শনিকরা বিশ্বাস করতেন যে কার শাসন করা উচিত তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারা শাসকদের জন্য কিছু গুণাবলী তালিকাভুক্ত করেছিল এবং বিশ্বাস করতেন যে শাসকের মধ্যে এই গুণগুলোর অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও মানুষ একটি মানবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাল্পনিক স্থানে পৌঁছে যাবে। অবশ্যই, এই তত্ত্বটি বাস্তবে কখনও বাস্তবায়িত হয়নি এবং পশ্চিমে এমন সরকার কখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
পশ্চিমের নতুন রাজনৈতিক দার্শনিকরা যারা আধুনিকতাবাদের কাঠামো প্রণয়ন করেছেন তারাও বিশ্বাস করেন যে কিভাবে শাসন করা যায় তা গুরুত্বপূর্ণ। এই পদ্ধতি নির্ধারণে তারা ক্ষমতা ও সম্পদ উৎপাদন এবং তা বিতরণের উপায় বের করার জন্য তাত্ত্বিকভাবে কাঠামোবদ্ধ করেছে। এই রাজনৈতিক কাঠামোর সমাপ্তি আজ পশ্চিমে দেখা যায় এবং পশ্চিমা রাজনৈতিক দার্শনিকরা এর পতনের শেষ পর্যায়গুলো বর্ণনা করেন।
একজন রাজনৈতিক তাত্ত্বিক হিসাবে হযরত ইমাম খোমেনি ইসলামী চিন্তাধারা এবং আহলে বাইতের প্রজ্ঞাময় শিক্ষা ও নীতির উপর নির্ভর করে 'কার শাসন করা উচিত?' এবং 'কিভাবে শাসন করা উচিত?' উভয়ের সমন্বয়কে আদর্শ পথ হিসাবে প্রবর্তন করেছিলেন। দুটোই ঐশি সরকারের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় চিন্তাভাবনার আসল ভিত্তি।
পশ্চিমের পুরাতন এবং নতুন রাজনৈতিক দার্শনিকরা তাদের তত্ত্ব অনুসারে সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি করেননি এবং মতের জগতে কেবল চিন্তাবিদ ছিলেন। কিন্তু একথা নির্ভয়ে বলা যায় যে, ইমাম খোমেনীই মুসলিম বিশ্বে এবং মূলত রাজনৈতিক দর্শনের জগতে প্রথম রাজনৈতিক দার্শনিক যিনি মনের বাইরের জগতে এসে তার তাত্ত্বিক জ্ঞানকে কার্যকর করার পাশাপাশি এটার প্রতিষ্ঠাতা পদে অধিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন।
ইমামের রাজনৈতিক তত্ত্বে আইনশাস্ত্র এবং ঐশি আদেশ
ইমাম (রহ.)-এর রাজনৈতিক তত্ত্বায়নে 'আইনশাস্ত্র' এবং ঐশি আদেশের একটি স্থান রয়েছে যেমনটি তিনি বলেছিলেন- "আইনশাস্ত্র হল দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত মানব প্রশাসনের বাস্তব এবং সম্পূর্ণ তত্ত্ব।"
ইমাম খোমেনী তার অনেক বার্তা এবং বক্তৃতায় আইনশাস্ত্র এবং ঐশী আইন পরিত্যাগ করার এবং পশ্চিমা দার্শনিক উৎসের শাসনের মডেলগুলো অনুসরণ করার ঝুঁকির উপর জোর দিয়েছেন।
ইমাম খোমেনির উত্তরসূরি ইমাম খামেনিও বিশেষজ্ঞ পরিষদের ষষ্ঠ রাউন্ডের উদ্বোধনী বার্তায় বলেছেন, 'ইসলামি ব্যবস্থায় শাসন ব্যবস্থা মানবিক এবং এর লক্ষ্যগুলো ঐশি পথে পরিচালিত করে।' অবশ্যই এই "মানবতা" মানে পাশ্চাত্যের চিন্তা যন্ত্রে উৎপাদিত ধর্মনিরপেক্ষতা নয়।
উদাহরণস্বরূপ পশ্চিমের একজন রাজনৈতিক দার্শনিক ১৯ শতকে মার্কসবাদ নামে একটি দর্শন উপস্থাপন করেছিলেন যা তিনি বৈজ্ঞানিক বলে দাবি করেছিলেন। এই চিন্তাধারার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ফ্যাসিবাদ ও উদারবাদের দাবিদাররা নিজেদেরকে "বৈজ্ঞানিক" বলে দাবি করে।
বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং জ্ঞানের দাবিদারদের দ্বারা মানবজাতির উপর অনেক বিপর্যয়ের পরে পাশ্চাত্যের মহান রাজনৈতিক দার্শনিকরা ঘোষণা করেছিলেন যে পূর্বোক্ত তিনটি চিন্তার স্তর মানবজাতিকে অজ্ঞতার অতল গহ্বরে টেনে নিয়ে বিভ্রান্ত করেছে; সুতরাং, আমরা তাদের অর্জনকে মানবিক শাসন হিসাবে বিবেচনা করতে পারি না।
ইরানে ধর্মীয় জনপ্রিয় শাসন যা ইমাম খোমেনী ইসলামি প্রজাতন্ত্রের গণভোট এবং সংবিধানের গণভোটের মাধ্যমে তার প্রথম ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন এবং জনগণের ভোটের মাধ্যমে দেশের পরিচালকদের নির্বাচনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত করেছিলেন এটি মানুষের মধ্যে একটি নতুন ঘটনা যেটি নবী এবং আল্লাহর প্রিয় বন্ধুদের পথের ধারাবাহিকতায় একটি বিজ্ঞ উদ্ভাবনী চিন্তাধারা হিসেবে সারা পৃথিবীতে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ইমাম খোমেনী সাহসিকতার সাথে এই ঐশি মডেলটি উত্থাপন করেছিলেন এবং সাহসী ইরানি জনগণ এটিকে স্বাগত জানায় এবং সমর্থন করেছিল।#
পার্সটুডে/বাবুল আখতার/৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।