ইরান থেকে বিশ্বের অন্য প্রান্তে ইমাম খোমেনীর প্রতিরোধ চিন্তার বিস্ময়কর উত্থান
(last modified Thu, 06 Jun 2024 14:38:23 GMT )
জুন ০৬, ২০২৪ ২০:৩৮ Asia/Dhaka
  • ইরান থেকে বিশ্বের অন্য প্রান্তে ইমাম খোমেনীর প্রতিরোধ চিন্তার বিস্ময়কর উত্থান
    ইরান থেকে বিশ্বের অন্য প্রান্তে ইমাম খোমেনীর প্রতিরোধ চিন্তার বিস্ময়কর উত্থান

ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক বলেছেন যে, ইমাম খোমেনী (র.) তার সময়ে যে প্রতিরোধ চিন্তার বীজ বপন করেছিলেন তা আজ একটি শক্তিশালী ও অপ্রতিরোধ্য সংগঠনে পরিণত হয়েছে।

অধ্যাপক হোজ্জাত আল-ইসলাম "মোহাম্মদ জাভেদ ফকিহ" বলেছেন, ইমাম খোমেনী (র.) এর চিন্তাধারায় প্রতিরোধের যে বিষয়টি স্থান পেয়েছিল তা ইরানে ইসলামি বিপ্লব হওয়ার অনেক আগে থেকেই ছিল।  যৌবনকাল থেকেই অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বিষয়টি ইমামের চিন্তায় আসে এবং এখন এই চিন্তা বিশ্বের মুক্তিকামী জাতিগুলোর প্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক মেহর নিউজ এজেন্সির সাথে কথোপকথনে আরো যেসব বক্তব্য তুলে ধরেছেন তার কিছু অংশ এখানে উল্লেখ করা হলো:

ইমাম খোমেনীর রাজনৈতিক চিন্তাধারায় প্রতিরোধের ধারণা গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি নীতির উপর ভিত্তি করে। 'এক আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুকে ভয় না করা' ছিল এই চিন্তার প্রথম নীতি।

ইমামের প্রতিরোধ চিন্তাধারার দ্বিতীয় নীতিটি হচ্ছে, 'কুরআন এবং ইসলামের অনুশাসনের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য'। কুরআন যতটা না কাফেরের বিরুদ্ধে তার চেয়ে বেশি বলদর্পী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া এমন এক গুরুদায়িত্ব যা কুরআন প্রতিটি মুসলমানের ওপর বিশেষ করে ধর্মীয় নেতাদের কাঁধে অর্পণ করেছে।

ইমাম খোমেনীর রাজনৈতিক চিন্তাধারায় প্রতিরোধের তৃতীয় নীতি হলো 'আকল বা বুদ্ধিবৃত্তি'। কেননা, নিপীড়িত বিশ্বের বুদ্ধিজীবীরা কখনো শাসক শ্রেণীর অনুগত হয় না এবং সবসময় জুলুমবাজদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খোঁজার চেষ্টা করেন। তারা জুলুমবাজ কিংবা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দুর্বল দিকগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন এবং তাদের ওপর আঘাত হানেন।

'ইতিহাস থেকে নেয়া শিক্ষা বা অভিজ্ঞতা' হচ্ছে ইমাম খোমেনীর রাজনৈতিক চিন্তাধারায় প্রতিরোধের চতুর্থ নীতি। ইতিহাসে যেসব বিজয় অর্জিত হয়েছে তা প্রতিরোধের কারণেই হয়েছে।

এ ব্যাপারে ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা হিল উজমা খামেনেয়ী যেমনটি বলেছেন,"আমরা যেখানেই প্রতিরোধ করেছি, সেখানেই অগ্রসর হয়েছি, সফলতা পেয়েছি এবং যেখানেই আমরা আত্মসমর্পণ করেছি সেখানেই আমরা আঘাত পেয়েছি।"

ইমাম খোমেনীর রাজনৈতিক চিন্তায় প্রতিরোধের পঞ্চম নীতি হচ্ছে 'মানবপ্রকৃতির উপর ভিত্তি করে'। একটি সুস্থ মানবপ্রকৃতি, মানুষের বিবেককে জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করাকে উৎসাহিত করে এবং নিপীড়িতদের প্রতি সমর্থন দেয়াকে প্রশংসা করে। এ কারণে দেখা যাচ্ছে, যুক্তিভিত্তিক প্রতিরোধের যে আন্দোলন ইরান থেকে শুরু হয়েছিল তা আজ ইরানের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে মুক্তিকামী জাতিগুলোর হৃদয়কে আলোড়িত করেছে। এটাই মানব প্রকৃতির সত্যিকারের ভাষা। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ গাজার জনগণের প্রতি সারা বিশ্বের ছাত্রদের ব্যাপক সমর্থন। বলা যায় অমুসলিম জাতির মধ্যেও বিরাট জাগরণ তৈরি হয়েছে।

ইমাম খোমেনীর রাজনৈতিক চিন্তাধারায় প্রতিরোধের আরেকটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে,  তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে রচিত "সিক্রেটস অফ এ থাউজেন্ড ইয়ারস" বা হাজার বছরের রহস্য বইটির জবাবে "কাশফ আল-আসরার" বইটি লিখেছিলেন।

এই বইটি লিখে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী সারা বিশ্বের মুসলমানদেরকে প্রতিরোধের রাস্তায় অবতীর্ণ হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বিপ্লবের আগের দিনগুলোতে ইমাম খোমেনী তাঁর বক্তৃতায় সবসময় বিশ্বের আলেম সমাজ ও মুসলিম জনগণকে অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের পদলেহি পুতুল সরকারকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার জন্য উৎসাহিত করতেন।

ইরানে ইসলামী বিপ্লবী আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে এবং বিপ্লবের পর সাদ্দামের চাপিয়ে দেয়া আট বছরের প্রতিরোধ যুদ্ধ চলাকালে ইমাম খোমেনী প্রতি বছর পবিত্র হজের সময় দেয়া বার্তায় স্পষ্ট ও খোলাখুলিভাবে সারা বিশ্বের মুসলমানদের প্রতি প্রতিরোধের এই আহ্বান জানাতেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের জনগণ এবং ধর্মীয় নেতাদের ব্যাপারে ব্যাপক আশাবাদী ছিলেন। একই সাথে তিনি এ অঞ্চলের পুতুল সরকারগুলোকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবং আমাদের ইসলাম ধর্ম ও সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিতেন। ইমাম খোমেনী ইরানের শাহ সরকারকেও আমেরিকা ও ইসরাইলের কবল থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু শাহ ব্রিটেন ও আমেরিকার উপরই নির্ভরশীল ছিল।

ইমাম খোমেনী আয়াতুল্লাহ শাহ আবাদীর ছাত্র ছিলেন এবং তাঁর কাছে ‌এরফান বা আধ্যাত্মবাদ ও দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনি জাতীয় সংসদে গিয়ে শহীদ মোদারেসের লড়াইয়ের চেতনা ও সাহসিকতার প্রশংসা করতেন। কাশফ আল-আসরার গ্রন্থে তিনি ইরানসহ সারা বিশ্বের মুসলমানদেরকে বিদেশী শক্তি ও তাদের মিত্রদের জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিলেন। এমনকি ফার্সি ১৩৪২ সালের অভ্যুত্থানের ঘটনাও কেবল শাহের  বিরুদ্ধেই ছিল না একইসাথে  তা আমেরিকা ও ইসরাইলের বিরুদ্ধেও ছিল। ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে অনেকেই গোপনীয়তা বজায় রেখে ভারসাম্য বজায় রাখতে দ্বিমুখী বক্তব্য দিতেন কিন্তু ইমাম খোমেনী প্রকাশ্যে শাহের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে দৃঢ় ও স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছিলেন।

 ফার্সি ১৩৪২ সালে মহররমে ইমাম খোমেনীর ভাষণ

প্রকৃতপক্ষে, বিপ্লব বিজয়ের আগ থেকেই ইমাম খোমেনীর প্রতিরোধের ধারণা তার যৌবনকাল থেকেই তৈরি হয়েছিল এবং এখন প্রতিরোধের এই ধারণা সারা বিশ্বের মুক্তিকামী জাতিগুলোর জাগরণের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর তীব্র বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্র এবং তাদের পদলেহী স্থানীয় পুতুল সরকারের বাধা সত্ত্বেও  প্রতিরোধের জোয়ার এ অঞ্চলসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে।

ইমাম খোমেনী ছিলেন একজন শহীদের সন্তান এবং তার পিতাও ছিলেন খোমেইন এলাকার আলেম। জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি শহীদ হয়েছিলেন। ইমাম খোমেনী বলেছেন, তিনি যখন শিশু ছিলেন,'তখন তিনি তার পিতার সাথে স্থানীয় অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন'। তাই বলা যায় ইমামের প্রতিরোধের ধারণাটি একটি জেনেটিক এবং পারিবারিক ঐতিহ্য।

 হিজবুল্লাহ মহাসচিব নাসরুল্লাহর সাথে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কমান্ডার শহীদ জেনারেল সোলাইমানি এবং আল-মুহান্দেস এর বৈঠক

ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ফিলিস্তিনের সমর্থনে আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোর ছাত্রদের আন্দোলনকে প্রতিরোধের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই প্রতিরোধের ভবিষ্যৎ অতি উজ্জ্বল। কারণ এই চিন্তাধারার সাথে ঐশী রীতির সম্পর্ক আছে যেখানে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিশ্ব যদি এই সত্য উপলব্ধি করতে পারে ‌এবং  ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতাও যেমনটি বলেছেন,আপোষ ও অপমানের চেয়ে প্রতিরোধের মূল্য অনেক বেশি।

আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর সাথে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ার  সাক্ষাৎ

সমস্ত জাগ্রত বিবেক নিষ্ঠুরতা ও অপরাধকে ঘৃণা করে। তাই প্রতিরোধের ধারণায় যারা নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তারা প্রশংসিত হয়।

ইসরাইলি প্রচারমাধ্যমের আধিপত্য বিস্তারকারী খোদ পশ্চিমা দেশগুলোতেই প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠেছে এবং পাশ্চাত্যের জুলুমের বিরুদ্ধে বিবেককে জাগ্রত করেছে। ফলে পাশ্চাত্যের দেশগুলো আজ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিরোধমূলক চিন্তাধারা বা মতাদর্শের মধ্যে প্রতিশ্রুত ত্রাণকর্তার তথা হযরত মাহদির আবির্ভাব শীর্ষক একটি দিগন্ত বা চূড়া রয়েছে সামনেই যে প্রতিশ্রুতির কথা এসেছে পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোতে

হোয়াইট হাউসের সামনে ইরানি ও ফিলিস্তিনি পতাকা 

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/6

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ