ইরানের প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ৯টি পরিকল্পনা পেশ
(last modified Tue, 20 Aug 2024 14:55:17 GMT )
আগস্ট ২০, ২০২৪ ২০:৫৫ Asia/Dhaka
  • ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আমির নাসিরজাদেহ।
    ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আমির নাসিরজাদেহ।

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আমির নাসিরজাদেহ ইরানের নিরাপত্তা ও প্রভাব আরো বাড়ানোর জন্য সংসদে একটি দৃঢ় পরিকল্পনা পেশ করেছেন। সেখানে তিনি ইরানের প্রতিরোধ সক্ষমতা আরো বাড়োনো এবং নতুন প্রযুক্তির উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছেন।

ইরানের প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষামন্ত্রী আমির নাসিরজাদেহ হুমকির বিরুদ্ধে ইরানের নিরাপত্তা ও কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন। বিশেষ করে আরো কার্যকরি প্রতিরোধ সক্ষমতা জোরদার করা,অভ্যন্তরীণ সক্ষমতার ব্যবহার এবং জ্ঞান-ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন নতুন শিল্পে বিশেষ বিনিয়োগের উপর জোর দিয়েছেন। এছাড়া, তিনি প্রতিরক্ষা কূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন বিশেষ করে সাংহাই এবং ব্রিকসের সঙ্গে আরো সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর আমির নাসিরজাদেহ গুরুত্ব দিয়েছেন। পার্সটুডের ম্যাগাজিনের এই নিবন্ধে আমরা  তার ৯টি প্রস্তাবিত পরিকল্পনা তুলে ধরছি।

১. সক্রিয় প্রতিরোধকে শক্তিশালী করা এবং বাহ্যিক হুমকি মোকাবেলা করা

ইরানের প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে সক্রিয় প্রতিরক্ষা রক্ষণাবেক্ষণ ও শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে এটি দেশের প্রতিরোধ শক্তি বাড়াবে যাতে করে বাইরের শত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করবে। এই ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী কর্মপন্থা উল্লেখ করে নাসিরজাদেহ বলেছেন, 'চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসাবে সক্রিয় প্রতিরোধের সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছানোর জন্য আমরা এসব পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। তিনি বলেন. যদি আমাদের সক্রিয় প্রতিরোধ সক্ষমতা না থাকতো তাহলে শত্রুরা এতোদিনে আমাদের দেশের ওপর হামলা চালাত।

২. অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার ব্যবহার এবং জ্ঞান-ভিত্তিক সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতার হাত বাড়ানো

মন্ত্রীর প্রস্তাবিত পরিকল্পনার প্রধান কর্মপন্থার মধ্যে একটি হল দেশীয় সক্ষমতার উপর নির্ভর করা বিশেষ করে জ্ঞান-ভিত্তিক কোম্পানিগুলো সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে তিনি দেশের প্রতিরোধ শক্তিকে এগিয়ে নিতে চান। তিনি দেশের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ভিত্তি শক্তিশালী করতে এই ক্ষমতাগুলো ব্যবহারের গুরুত্বের উপর জোর দেন। নাসিরজাদেহ বলেছেন,  'আমরা জাতীয় ক্ষমতা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিশেষ করে এখন আমরা ১৩০০টি জ্ঞান-ভিত্তিক সংস্থা এবং ৭০০০ বেসরকারি সংস্থার সাথে যোগাযোগ করছি।"

৩. আঞ্চলিকভাবে ও বিশ্বে সক্রিয় প্রতিরক্ষা কূটনীতি অনুসরণ করা

নাসিরজাদেহ ইরানের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে এবং এ অঞ্চলে ইরানের প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে প্রতিরক্ষা কূটনীতির গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বলেছেন: "আঞ্চলিক দেশগুলোর মাঝে সক্রিয় কূটনীতির প্রয়োগ কর্তৃত্ব বজায় রেখে এবং বিদ্যমান সক্ষমতা ব্যবহার করা আগামী চার বছরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্যতম পরিকল্পনা।"

৪.প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং পণ্যগুলোর সুরক্ষা নীতি মজবুত করা

নাসিরজাদেহ শিল্প নাশকতার বিরুদ্ধে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং পণ্য সুরক্ষার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন যে এই সমস্যাটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে একটি হবে যাতে কোনও নাশকতা এবং সমালোচনামূলক ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ রোধ করা যায়।

৫. প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ

প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ক্রমাগত নজরদারি এবং শত্রুকে অবাক করে দিতে পারে এমন প্রযুক্তি অর্জনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ইরানের প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখাই হবে এই নীতির প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেছেন, 'বিশ্বে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ক্রমাগত নজরদারি এবং শত্রুকে অবাক করে দেবে এমন পণ্য প্রযুক্তি অর্জন করা আমাদের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে একটি হবে।

৬. প্রতিরোধ ফ্রন্টের স্থিতিশীল এবং কার্যকর সমর্থন

নাসিরজাদেহ জোর দেন যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক ফোরামে প্রতিরোধ ফ্রন্ট এবং দাম্ভিকতা বিরোধী ফ্রন্টকে প্রকাশ্যে এবং গোপনে সমর্থন করবে। তিনি বলেন, 'প্রতিরোধ ফ্রন্ট এবং ঔদ্ধত্য বিরোধী ফ্রন্টকে প্রকাশ্য এবং গোপন উপায়ে টেকসই এবং কার্যকর সমর্থন বিশেষ করে আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক ফোরামে আমাদের প্রধান পরিকল্পনাগুলির মধ্যে একটি হবে।

৭. নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করা এবং দেশের সামরিক স্বাধীনতা বজায় রাখা

প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছেন যে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নিপীড়নমূলক নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করা তার অগ্রাধিকারের একটি। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে এই নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরানের আত্মরক্ষার ক্ষমতা হ্রাস করবে না এবং তার পরিকল্পনাগুলো এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় দেশীয় সম্পদের উপর নির্ভর করার ভিত্তি তৈরি করা হবে।

৮. গবেষণা এবং নতুন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির উন্নয়ন

নাসিরজাদেহ দেশের সামরিক সক্ষমতা উন্নত করতে নতুন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে এই পদ্ধতি কেবল দেশের নিরাপত্তা বজায় রাখবে না বরং নতুন হুমকির বিরুদ্ধে ইরানকে আরও প্রস্তুত করে তুলবে। এই বিষয় তিনি বলেন, 'আমরা সমস্ত প্রকৃত এবং সম্ভাব্য একাডেমিক এবং বৈজ্ঞানিক ক্ষমতা ব্যবহার করব এবং আমরা সৎ প্রতিশ্রুতির মতো অপারেশনাল অভিজ্ঞতাগুলো ব্যবহার করব।"

৯.আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং নতুন বৈশ্বিক সক্ষমতা ব্যবহার করা

নাসিরজাদেহের পরিকল্পনার আরেকটি দিক হলো প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে  আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ করা এবং সাংহাই এবং ব্রিকসের মতো সক্ষমতার সদ্ব্যবহার করা। তিনি বিশ্বাস করেন যে এই সহযোগিতা ইরানের প্রতিরক্ষা সম্পদ এবং  প্রতিরক্ষা সক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে। তিনি বলেন,  'প্রতি মাসে, আমাদের সাংহাই এবং ব্রিকস সদস্য দেশগুলোতে সফর হচ্ছে। এই সংস্থাগুলোতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা সক্রিয় সমর্থন নিয়ে সম্পদের টেকসই সরবরাহের সন্ধান করছি এবং বৈচিত্র্যময় গবেষণা এবং আয় উৎপাদনের জন্য সক্ষমতা তৈরি করছি।'

পার্সটুডে/এমবিএ/২০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ