আমেরিকার যুদ্ধজাহাজগুলোকে কেন গুরুত্ব দেয় না ইরান?
পার্সটুডে-ইরানের পানি সীমার কাছে মার্কিন দুটি টাস্ক ফোর্সের মোতায়েনের ঘটনাকে গুরুত্বই দিচ্ছে না তেহরান। ইরান মনে করে এটা আমেরিকার সামরিক শক্তির চেয়ে সামরিক প্রদর্শনীর প্রচেষ্টামাত্র। কেননা এটা আমেরিকার একটি সেকেলে কৌশল।
আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল ঘোষণা করেছে যে ইরানের মাথায় যে কী আছে ওয়াশিংটন তা অনুমান করতে পারছে না। সে কারণেই আমেরিকা প্রতিরোধের অক্ষকে মোকাবেলা করার জন্য আরও বেশি সামরিক বাহিনী পাঠিয়েছে। এই পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর ঘটনা ইতিহাসে বিরল।
পার্সটুডে আরও জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক পানিসীমায় আমেরিকার একটি ভ্রাম্যমাণ সামরিক ঘাঁটি হিসাবে ইউএস নেভাল টাস্ক ফোর্সও এর মধ্যে রয়েছে। পরিমাণ ও মানের দিক থেকে ইউএস নেভাল টাস্ক ফোর্স শীর্ষ ২০টি দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তবে বিমান শক্তির দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে।
টাস্কফোর্সের কাঠামোর মধ্যে রয়েছে একটি বিমানবাহী রণতরী, একটি ক্রুজার, ৪ থেকে ৬টি ডেস্ট্রয়ার, একটি সাবমেরিন, একটি সাপোর্ট শিপ, ৭৫টির মতো সামরিক বিমান এবং ৭হাজার ৫০০ নাবিক ও বন্দুকধারী। সাধারণত, আমেরিকায় বিমানবাহী জাহাজের নামকরণ করা হয় সেদেশের প্রেসিডেন্টদের নামে।
বিশ্বে আমেরিকান নৌ বহর মোতায়েনের সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী বিমানবাহী রণতরী থিওডোর রুজভেল্ট (USS Theodore Roosevelt) কোড (CVN-71) এবং ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন (USS Abraham Lincoln) কোড (CVN-72) ওমান সাগরে মোতায়েন করা হয়েছে।
ক্রুজার ইউএসএস ড্যানিয়েল ইনোয়ে (USS Daniel Inouye) এবং ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস হ্যালসি (USS Halsey) এবং ইউএসএস জন ম্যাককেইন (USS John McCain) রুজভেল্টের সাথে রয়েছে। লিংকনের সাথে রয়েছে ক্রুজার ইউএসএস ফ্রাঙ্ক পিটারসেন (USS Frank Petersen), ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস স্প্রুয়ান্স (USS Spruance) এবং ইউএসএসও'কেইন (USSO’Kane)।
অবশ্যই, ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর ২২ জুনে ঘোষণা করেছে যে তারা আইজেনহাওয়ার জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ইতিহাসে একটি অনন্য ঘটনা। আমেরিকাও তৎক্ষণাৎ আইজেনহাওয়ারকে লোহিত সাগর থেকে সরিয়ে নিয়েছে এবং বলেছে যে আইজেনহাওয়ারের কোনো ক্ষতি হয় নি!
আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় ইরানের পানিসীমার কাছে দুটি টাস্কফোর্স মোতায়েনের উদ্দেশ্য ছিল সামরিক বাহিনীর চেয়ে সামরিক প্রদর্শনী করা। এটা আমেরিকার একটা পুরোণো কৌশল।
মার্কিন সামরিক কমান্ডাররা ইরানি অস্ত্রের পরিসর সম্পর্কে অবগত আছে। তারা ভালো করেই জানে দূরপাল্লার 'আবু মাহদি' ক্রুজ মিসাইলটি ১ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম। এছাড়াও, 'পারস্য উপসাগর' এবং 'হরমোজ-২' ক্ষেপণাস্ত্র ইরানের দুটি জাহাজ-বিরোধী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এগুলোর অপারেশনাল রেঞ্জ পুরো পারস্য উপসাগর এবং ওমান সাগরকে জুড়ে রয়েছে।
সুতরাং রুজভেল্ট এবং লিংকন-এই দুটি টাস্ক ফোর্স যদি ইরানের সাথে সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত হতে চাইতো, তাহলে এগুলো ইরানের পানিসীমা থেকে কমপক্ষে ১ হাজার কিলোমিটার দূরে মোতায়েন করতো।
প্রকৃতপক্ষে বর্তমান সামরিক পরিস্থিতিতে, ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল অস্ত্রগুলো ইয়েমেনি ড্রোনের মতো সস্তা অস্ত্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সুতরাং ইরান এবং চীনের মতো ক্ষেপণাস্ত্র শক্তিগুলোর সাথে মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধের দৃশ্যে দেখা যাবে লক্ষ্য যত বড়ই হোক, ক্ষেপণাস্ত্রগুলোতে আঘাত হানা ততই সহজ হবে।
সামগ্রিকভাবে ইসরাইলের ওপর ইরানের সম্ভাব্য পাল্টা হামলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিতে পারে। কারণ উত্তেজনার মাত্রা বেড়ে গেলে এবং পারস্য উপসাগরে ইরানি কোনো স্থাপনায় সরাসরি আক্রমণ করা হলে কিংবা ইরান ভূখণ্ডের গভীরে কোনো লক্ষ্যবস্তুতে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী থেকে হামলা চালানো হলে সেগুলো ইরানের পক্ষ থেকে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মুখোমুখি হবে।#
পার্সটুডে/এনএম/৩১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।