বিজয় ও মর্যাদার জুমা নামাজ; মুসলিম বিশ্বের অন্যতম স্মরণীয় প্রধান জুমার ৮ বিশেষ দিক
(last modified Mon, 14 Oct 2024 14:13:36 GMT )
অক্টোবর ১৪, ২০২৪ ২০:১৩ Asia/Dhaka
  • তেহরানে বিজয়ের জুমা নামাজ
    তেহরানে বিজয়ের জুমা নামাজ

পার্সটুডে-তেহরান নগর পরিষদের সদস্য সাইয়্যেদ মোহাম্মাদ আগা মিরি এই পরিষদের এক বৈঠকে বলেছেন, 'গত ৪ অক্টোবরের জুমা নামাজ ঐতিহাসিক (হুদায়বিয়ার) রেদওয়ানের শপথ তথা বাইয়াতে রেদওয়ান-এর স্মারক। মুমিনদের চেতনা জোরদার ও সামরিক প্রস্তুতির নবায়ন ছিল ওই শপথের লক্ষ্য'। 

গত ৪ অক্টোবর ২০২৪ তেহরানে জুমা নামাজ সম্পন্ন হয়েছিল আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির নেতৃত্বে লেবাননের হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাতের ঘটনা ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের সাম্প্রতিক নানা অপরাধযজ্ঞের জবাবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর। অনেক মুসলিম ও এমনকি অনেক অমুসলিম চিন্তাবিদ এবং ব্যক্তিত্বদের দৃষ্টিতে মুসলিম বিশ্বের জন্য ওই দিনটি ছিল এক মহান ঐতিহাসিক দিবস। দিবসটি বিজয়ের জুমা নামাজ হিসেবে পরিচিতি ও খ্যাতি অর্জন করেছে। 

প্রায় দশ লাখ ইরানি বিপ্লবী ও ধার্মিক জনগণ তেহরানের মুসাল্লাহ-ই ইমাম খোমেনী নামে খ্যাত ঈদগাহ ও জুমা নামাজের স্থানে সেদিন সমবেত হন ইমাম খামেনেয়ীর নেতৃত্বে জুমার নামাজ আদায় ও তার খুতবা শোনার জন্য। পূর্ব-ঘোষিত এ সমাবেশ তথা জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় খোলা ময়দানে বিশেষ কোনো নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা ছাড়াই। বিস্ময়ের ব্যাপার হল  খোলা ওই স্থানটিতে হিজবুল্লাহর কিংবদন্তীতুল্য নেতা শহীদ হাসান নাসরুল্লাহর স্মরণে শোক সমাবেশও হয় সকাল ১১টার দিকে একই স্থানে ইমাম খামেনেয়ি ও বিপুল সংখ্যক ধার্মিক জনগণের উপস্থিতিতে। ইমাম খামেনেয়ি ওই শোক-অনুষ্ঠান উপলক্ষে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করেন। জুমা নামাজের পরও তিনি অনেক সময় সেখানে থেকে বিভিন্ন কর্মকর্তা ও নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেছেন। ইমাম খামেনেয়ীর চারজন সন্তানও জুমার নামাজে উপস্থিত হয়েছিলেন। বিভিন্ন শহর থেকে বিপুল সংখ্যক ইরানি এই ধর্মীয় সমাবেশে উপস্থিতি হয়েছিলেন।   

অথচ এর তিন দিন আগে 'সত্য প্রতিশ্রুতি-২' শীর্ষক ইসরাইলের ওপর ইসলামী ইরানের শাস্তিমূলক সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অত্যন্ত সফল অভিযানের প্রেক্ষাপটে ইসরাইল ও তার সহযোগী বিশ্বের প্রচারযন্ত্রগুলো থেকে ইরানের ওপর বিশেষ করে তেহরানের মুসাল্লাহ-ই ইমাম খোমেনী নামে খ্যাত ঈদগাহ ও জুমা নামাজের স্থানে ইমাম খামেনীর ওপর ও ইরানিদের সব সমাবেশের ওপর ইসরাইলের সম্ভাব্য হামলার হুমকি-ধমকি ও হৈ-চৈ প্রচার করা হচ্ছিল এবং বলা হচ্ছিল যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নতুন কোনো গোপন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন সম্ভাব্য হামলা থেকে আত্মরক্ষার জন্য।  

এখানে এই ঐতিহাসিক জুমা নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের কোনো কোনা মন্তব্য তুলে ধরছি:

বিজয়ের জুমা নামাজ মুসলিম উম্মাহর আত্ম-সম্মান বাড়িয়ে দিয়েছে

ইরানের পবিত্র কোম শহরের ধর্মতত্ত্ব কেন্দ্রের উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষক মোহাম্মাদ হাদি রাহমানি বিজয়ের জুমা নামাজ সম্পর্কে বলেছেন, বিজয়ের জুমা নামাজের বিশাল ঘটনা মুসলিম উম্মাহর আত্ম-সম্মান বাড়িয়ে দিয়েছে এবং তা শত্রুর ওপর গুরুত্বপূর্ণ আঘাত হেনেছে।

বিজয়ের জুমা নামাজ শত্রুদের ষড়যন্ত্রগুলো বানচাল করেছে 

ইরানের তায়বাদ অঞ্চলের সুন্নি মুসলিম সম্প্রদায়ের জুমা নামাজের ইমাম গোলাম নবী তাওয়াক্কুলি বিজয়ের জুমা নামাজ প্রসঙ্গে বলেছেন, এই বিজয়ের জুমা নামাজে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার খুতবাগুলো এবং এই নিরাপদ মিলন-মেলায় উদ্দীপনায় ভরপুর জনগণের অংশগ্রহণ শত্রুর শয়তানি চক্রান্তগুলো বানচাল করে দিয়েছে।

বিজয়ের জুমা নামাজ বাইয়াতে রেদওয়ান-এর স্মারক 

তেহরান নগর পরিষদের সদস্য সাইয়্যেদ মোহাম্মাদ আগা মিরি এই পরিষদের এক বৈঠকে বলেছেন, 'গত ৪ অক্টোবরের জুমা নামাজ ঐতিহাসিক (হুদায়বিয়ার) রেদওয়ানের শপথ তথা বাইয়াতে রেদওয়ান-এর স্মারক। মুমিনদের চেতনা জোরদার ও সামরিক প্রস্তুতির নবায়ন ছিল ওই শপথের লক্ষ্য'। (উল্লেখ্য ষষ্ঠ হিজরিতে হুদায়বিয়াতে উপস্থিত ১৪০০ জন সাহাবি এই শপথ নিয়েছিলেন যে তারা মৃত্যুর মুখোমুখি হলেও মহানবীকে সহায়তা দিয়ে যাবেন)

মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য বাড়িয়েছে

ইরানের কাশান শহরের জুমা নামাজের অস্থায়ী ইমামও বিজয়ের জুমা নামাজে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উপস্থিতিকে ইহুদিবাদ-বিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনের জন্য অত্যন্ত আশা ও উৎসাহজ্ঞাপক হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এই নামাজ বিশ্বের মজলুম ও বঞ্চিত মানুষদের উৎসাহ যুগিয়েছে এবং মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য বাড়িয়েছে। 

জাতির জন্য সম্মান 

ইরানের বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক নেতা ও পবিত্র কুরআনের মুফাসসির আয়াতুল্লাহ আবদুল্লাহ জাওয়াদি অমলি শুক্রবারের জুমার খুতবায় বলেছেন, এটা কি সম্মানের উৎস নয় যখন একটি জাতি শত্রুদের হুমকির মুখেও জুমার ময়দানে উপস্থিত হয় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে?

সর্বোচ্চ ইসলামী কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি (ওয়ালিয়ে ফকিহ) বা অভিভাবকের প্রতি জনগণের বিশ্বাসের প্রদর্শন

ইরানের বিশিষ্ট আলিম ও তেহরানের জুমা নামাজের অস্থায়ী ইমাম হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন কাযেম সিদ্দিকিও বিজয়ের জুমা নামাজে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার খুতবাকে প্রভাব বা কার্যকারিতা, সামগ্রিকতা এবং ইসলামী ও জিহাদি দিক থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, সর্বোচ্চ ইসলামী কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি বা বর্তমান অভিভাবকের প্রতি বিশ্বাস একটি রাজনৈতিক বিশ্বাস নয় বরং তা ধর্মীয়, সহজাত ও আত্মিক বিশ্বাস। 

বিজয়ের জুমা নামাজ শত্রুদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে 

ইরানের কেরমানশাহ প্রদেশে নিযুক্ত সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধি হুজ্জাতুল ইসলাম হাবিবুল্লাহ গাফুরি বিজয়ের জুমা নামাজে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ও জনগণের ঐতিহাসিক উপস্থিতির কথা তুলে ধরে বলেছেন, এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা শত্রুদের জন্য আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এবং ইসলামী বিপ্লবের বন্ধুদের জন্য সৃষ্টি করেছে আশা।

আরেকটি সত্য প্রতিশ্রুতি

ইরানের পবিত্র প্রতিরক্ষা সাহিত্য ও ইতিহাস বিষয়ক সংস্থার প্রধান আব্বাস বায়রামি বিজয়ের জুমা নামাজে এক মিলিয়ন ইরানি জনগণের উপস্থিতিকে আরেকটি সত্য প্রতিশ্রতি হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, শত্রুরা সব শক্তি নিয়ে প্রতিরোধ ফ্রন্ট ও ইসলামী বিপ্লবের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছে, কিন্তু এই অনুষ্ঠানে জনগণের উদ্দীপনাময় অংশগ্রহণ তাদের ওই ষড়যন্ত্রকে বানচাল করেছে।   #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

ট্যাগ